সুদ মানুষের কর্মশক্তিকে অকার্যকর বানিয়ে দেয়। কেননা সুদ থেকে যখন চাহিদা মেটাতে পারে সুদী কারবারী তখন বেকারত্বের উপর সন্তুষ্ট থাকে।
লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:১৫:৩২ বিকাল
"রিবা" বা সুদের শাব্দিক অর্থঃ
রিবার আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধি করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
"অত:পর যখনই আমি তাতে পানি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত বা স্ফীত (বৃদ্ধিপ্রাপ্ত) হয়।"
আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন- "একদল অপর দলের চেয়ে বড় হবে।" অর্থাৎ অধিক সংখ্যক। যেমন বলা হবে অমুকে অমুকের চেয়ে বেশী লাভ করেছে।
রিবার আসল অর্থ বৃদ্ধিঃ তা মুলে নয়তো বা মুলের বিনিময়ের মাঝে। যেমন এক দিরহামের বিনিময়ে দুই দিরহাম। আবার প্রত্যেক হারাম ও নিষিদ্ধ ব্যবসাকে ও রিবা বলা হয়।
সুদ সম্পর্কে কোরআনের বানীঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ "হে ঈমানদারগন! তোমরা ক্রমবর্ধমান হারে (দিগুণ চতুর্গুণ বা চক্রবৃদ্ধি হারে) সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো তবেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে) (সুরা আলে-ইমরান-আয়াত ১৩০)
আল্লাহ তায়ালা সুদকে বিলুপ্ত করে দেন এবং সদকাকে (দান খয়রাতকে) বাড়িয়ে দেন (সুরা বাকারা-আয়াত ২৭৬)
সুদ সম্পর্কে মহানবী হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বানীঃ
হযরত নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ
মিরাজের রাতে আমাকে যখন আসমানে নিয়ে যাওয়া হলো তখন সপ্তম আসমানে আমার মাথার উপর মেঘের গর্জন এবং বজ্রধ্বনি শুনতে পেলাম। আর এমন কিছু সংখ্যক লোক দেখতে পেলাম যাদের পেট বড় আকারের ঘরের মতো সামনের দিকে ঝুলে পড়েছে। এতে রয়েছে সাপ ও বিচ্ছূ এবং এগুলো পেটের বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে। আমি বললাম "হে জিবরাঈল! এরা কারা? তখন তিনি বললেন এরা সুদখোর।" (আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)
হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
চার ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করতে না দেয়া এবং জান্নাতে নিয়ামতরাজি থেকে বঞ্চিত করা আল্লাহর হক। এরা হলো- মদ্যপায়ী, সুদখোর, অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎকারী এবং পিতামাতার অবাধ্য সন্তান তবে তওবা করলে এরা মাফ পেতে পারে।
হযরত নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ
সুদের সত্তরটি স্তর রয়েছে। সহজ স্তরটি হলো আপন মাকে বিয়ে করার মত। সুদকে লালন করা মানে মুসলমান ভাই- এর ইযযত আবরুতে হস্ত প্রসারিত করে। এটাই হচ্ছে সুদের সর্বোচ্চ স্তর।
হযরত আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গ্রহিতা ও সুদদাতা উভয়ই জাহান্নামী। আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।
আবু আবদুর রহমান ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি তোমার নিকট থেকে রিণ নেয় এবং সে তোমার কাছে কোন হাদীয়া (উপঢৌকন) পাঠায় তাহলে তুমি তা গ্রহন করবে না। কেননা এটা সুদ। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেছেন, যদি তুমি কারো নিকট পাওনাদার হও এবং এ অবস্থায় তুমি যদি তার বাড়িতে খাও তাহলে তা সুদ হবে। এর সমর্থনেই নবী করীম (সাঃ)-এর নিম্মোক্ত বানী রয়েছে-রিনের জন্য যে লাভ হয় তাই সুদ।”
হযরত নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি জেনে শুনে সুদের একটি দিরহাম (রৌপ মুদ্রা) ভোগ করবে, এর পাপ ছত্রিশবার ব্যভিচার করার চেয়েও মারাত্মক (বিবেচিত হবে)।
বুখারী শরীফে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর এক স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে। তাতে এ কথাও রয়েছে যে, মহানবী (সাঃ) সুদখোরদেরকে রক্তের নদীতে এমনভাবে দেখলেন যে, ওরা নদীর মাঝে রয়েছে, আর এক লোক নদীর তীরে দাড়িয়ে। তার সামনে রয়েছে পাথর। যখনই সে নদীর ভিতর থেকে উঠে আসতে চায়, তখন পাড়ের লোকটি তার মুখের উপর এমন সজোরে পাথর ছুড়ে মারে, যাতে সে যেখানে ছিল সেখানেই পৌছে যায়। (মেশকাত স্বপ্ন অধ্যায়)
নবীগনের স্বপ্ন সত্য। এ স্বপ্নে সে আযাব দেখানো হয়েছে যা বরযখে (মৃত্যু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সময়ের নাম) সুদখোরদের উপর হয়ে থাকে। সুদের সম্পদে কোন বরকত নেই।
হযরত নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ যখন এলাকায় সুদ ও ব্যভিচার প্রকাশ পাবে তখন বুঝতে হবে তারা নিজেদের উপর আল্লাহর শাস্তি হালাল করে নিয়েছে।
সুদের ক্ষতি-অপকারিতা-কুপ্রভাবঃ
সুদ মানুষের কর্মশক্তিকে অকার্যকর বানিয়ে দেয়। কেননা সুদ থেকে যখন চাহিদা মেটাতে পারে সুদী কারবারী তখন বেকারত্বের উপর সন্তুষ্ট থাকে।
মানুষের কাছে অলস টাকা বৃদ্ধি পায়।
সুদ বর্বর যুগের লোকদের স্বভাব। যে সুদী কারবারী করে সে বর্বরদের গুণে গুণান্বিত হয়।
সুদ আল্লাহর দুশমন অভিশপ্ত ইহুদীদের স্বভাব-আমল।
(বিভিন্ন ইসলামী বুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)
বিষয়: বিবিধ
১২৮৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওনার বক্তব্যের মেইন থিম ও সাথে অন্যান্য স্কলারদের কিছু লিখা পড়ে আমি রিবাকে যে ভাবে বুঝেছি - তা অনেক টা এমনঃ
'সময়' এর উপর পূর্ন নিয়ন্ত্রন ও এক্তিয়ার আল্লাহর। ঠিক যেমন বাতাস, রোদ ইত্যাদির উপর ও পূর্ন নিয়ন্ত্রন আল্লাহর। বান্দাকে আল্লাহ এসব জিনিস বা সম্পদ রহমত স্বরূপ দিয়েছেন এবং বান্দা এসব ব্যবহার করবে এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে।
বান্দা এসব সম্পদ এ কোন রকম গুনগত পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন কিংবা বিয়োজন ছাড়া - অন্য কোন বান্দা হতে এ সব সম্পদের বিনিময়ে কোন মূল্য বা সার্ভিস চার্জ নিতে পারেনা, নিলে তা হবে রিবা বা সুদ।
একজন ব্যাংকার কোন একটা সময়ে একজন গ্রাহক কে ১০০ টাকা দিচ্ছেন। নির্দিষ্ট সময়ান্তরে সে ১০০ টাকার জন্য অতিরিক্ত কোন টাকা চার্জ করলে তা হবে সুদ বা রিবা, কিন্তু তিনি যদি 'সময় বা আল্লাহ প্রদত্ত কোন সম্পদ তথা রোদ ইত্যাদি' ছাড়া অন্য কোন ফ্যাক্টর এর জন্য চার্জ নেন তবে তা সুদ হবেনা।
একই ভাবে একজন মজুতদার কোন একটা আইটেম কিনে - মানুষের আকাল বা খারাপ সময়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত রাখলে - এবং সময়ের এই ডিফারেন্স এর কারনে অতিরিক্ত দাম টা ও রিবা বা সুদ হবে।
অন্যদিকে পন্য কিনে বিক্রি কালীন সময়ে সময়ের ব্যবধানের জন্য অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া হয়না বরং যা নেওয়া হয় তা হল অন্যান্য খরচ প্লাস মানুষের শ্রম এর দাম। আর সময় যত যাবে অন্যান্য খরচ এর সাথে সাথে শ্রম দাম বাড়বে, কিন্তু পন্য মূল্য কমবে বা কমতে থাকবে - কারন পন্য এক্সপায়ারীর তারিখের দিকে যাবে কিংবা নষ্ট হয়ে যাবে। তবে কোন বিক্রেতা যদি বিক্রয়মূল্যে সময় বিবেচনা করে কোন অতিরিক্ত চার্জ যুক্ত করে তবে তাও সুদ কিংবা রিবা হয়ে যাবে।
এই বিবেচনায় ইসলামীব্যাংকের বর্তমান কাঠামোকে কোন কোন স্কলার ব্যাক এন্ডে রিবা বলেন।
ধন্যবাদ এ নিয়ে লিখার জন্য এবং রিবার বিধ্বংশী রূপ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার জন্য।
রিবা বা সুদ মানুষের মধ্যে ভোগ করার প্রবনতাই বৃদ্ধি করে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন