۞۞ বিয়েতে কন্যারা আগে যেমন হাউমাউ করে কাঁদত এখন মেকআপ নষ্ট হবে বলে কেউ কাঁদেনা ۞۞
লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ১৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৪০:০৮ বিকাল
আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগে বিয়ের কনের বিদায় পর্বটা খুব করুন ছিল। সবাই বিয়ে কনেকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করত। আর এখন মেকআপ নষ্ট হবে বলে বিয়ের কনেরা কান্নাকাটি করে না। বাকীরাও মেকআপ নষ্ট হবে চোখের পানি ফেলে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন বিয়ের কনের কান্নাও হারিয়ে গেছে।
২০০৮ সালে তিন বন্ধু মিলে কনে দেখতে গিয়েছিলাম। কনের বাড়ীতে আমরা তিনবন্ধু পাশাপাশি বসেছিলাম। কনে জানে না তার হবু বর কে হবে। বিয়ের পরে দিন বন্ধুর বউয়ের মুখ থেকে শুনতে হয়েছিল, "জামাল ভাই, আমি এজহার ভাইকে বর মনে করেছিলাম।" এজহার ভাই আমাদের চাইতে একটু বেশী হ্যান্ডসাম ছিল বলে ভাবীর নজর তার দিকে গিয়ে পড়ে। অবিবাহিত বন্ধুরা বিয়ের কনে দেখতে গেলে হ্যান্ডসাম বন্ধুকে দুরে রাখবেন। যদি আপনার স্থলে আপনার বন্ধুকে পছন্দ করে তাহলে কিন্তু পস্তাতে হবে।
ছোট বেলায় আমাদের বাড়ীতে কোন মেয়ের বিয়ের অনুষ্টান হলে বরযাত্রীর দুষ্ট ছেলেদেরকে পাহারায় রাখতাম। শত চেষ্টা করেও তারা নতুন বউকে দেখার সুযোগ পেত না। কিন্তু এখন বিয়ের কনে সেজেগুজে ষ্টেজে বসে থাকে বলে যে কেউ ছবি তুলতে পারে, ভিডিও করতে পারে। এখন আর কেউ বাঁধা দেয় না।
আমার এক আত্বীয়ের মেয়ের জন্য প্রবাসী এক পাত্রের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে। পাত্রের খোজ-খবর নেয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। খোজ নিয়ে জানতে পেরেছিলাম পাত্রও ব্লগিং করে। ওনার পরিবারের সাথে আত্বীয়তা না হলেও প্রিয় এই ব্লগার অন্য পরিবার থেকে বিয়ে করে। ওনার বিয়েতে আমিও অংশ গ্রহন করেছিলাম। বর্তমানে কর্মব্যস্ততার কারনে এই প্রিয় ব্লগার ব্লগ জগত থেকে দুরে আছেন।
এক চাচাত ভাইয়ের বউ আর শালী জমজ বোন। দুজনের চেহেরা দেখতে এক রকম। বিয়ের পরের দিন ভাবীর বোন বেড়াতে এলে কে ভাবী আর কে ভাবীর বোন চেনার কোন উপায় ছিলনা বলে ভাবীর বোনকে ভাবী ডাকতে গিয়ে লজ্বা পেয়েছিলাম। আমার মুখ থেকে ভাবী ডাক শুনে ওনি ও লজ্বা পেয়েছিলেন।
ছোট বেলায় খুব রাগী ছিলাম। মামাত বোনের বিয়েতে নানার সাথে রাগ করে রাত ১১ টার পরে অমাবশ্যার রাতের অন্ধকারে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে তিন কিঃমিঃ পথ পায়ে হেটে বাড়ী ফিরেছিলাম। সেই ঘটনা মনে পড়লে এখনো ভয় পাই।
দুসম্পর্কের এক নানীর মৃত্যুতে নানা বৃদ্ধ বয়সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। ওনার ছেলে-মেয়েরা কেউ এই বিয়েতে রাজী ছিল না বলে নানার সাথে একদিন শশুরবাড়ীতে গিয়েছিলাম। নানীর মাটির ঘরের শীতল পাটিতে বসে ভাত খেয়েছিলাম। বিকেলে নানীকে নিয়ে নানার বাড়ী ফিরেছিলাম। কয়েক বছর সংসার করার পর নানার মৃত্যুর পরে নানী বাপের বাড়ীতে চলে গিয়েছিল। সেই নানী এখন জীবিত আছে কি না নাকি মারা গেছে জানি না।
পাষন্ড স্বামীর নির্যাতন সহ্য করেও বউরা সংসার করে কেউবা নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। গরীব ঘরে জন্ম নেয়া নাজমাকে সবাই চাঁদা তুলে বিয়ে দেয়। বিয়ের কিছু দিন পর নাজমা অন্তসত্তা হয়। সেই কষ্টের দিনগুলোতে তার স্বামী তাকে যৌতুকের জন্য মারধর করত। গরীব পিতার কাছ থেকে কিছু আনতে পারবে না বললে একদিন তার স্বামী তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে পালিয়ে যায়। বাপের বাড়ী থেকে লাল শাড়ী পরে নাজমা গিয়েছিল শশুরবাড়ীতে, ফিরেছিল সাদা কাফনে।
কলেজে পা রাখতেই আমার বন্ধু মতিন তার এক স্কুল পড়ুয়া আত্বীয়ের প্রেমে পড়ে। সেই সময় মোবাইল ছিল না বলে চিঠিই ছিল একমাত্র ভরসা। মেয়েটির হঠাৎ করে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হলে বিয়ের আগের দিন বন্ধুর বাড়ীতে এসে হাজির হয়। বন্ধু আমার সাহায্য চাইলেন। আমি তাকে ভুলে যেতে বললাম। আমি তাকে প্রশ্রয় দিলে আজকে তার জীবনটা অন্যরকম হতে পারত। পড়ালেখা গোল্লায় যেত। রবি এখন ওকালতি করে। দুই সন্তানের বাবা। সেই মেয়েটিও এখন আরেকজনকে বিয়ে করে সুন্দরভাবে সংসার করছে।
কিশোর বয়সে প্রেম ভালবাসায় জড়িয়ে পড়া নিছক পাগলামী ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বয়সের কিছু কিছু ছেলে-মেয়ে প্রেম-ভালবাসায় জড়িয়ে পড়ে ঘর-বাঁধার স্বপ্ন দেখে। যা কোন দিন সম্ভব নয়। চাল নেই চুলো নেই শুধুমাত্র বাপের হোটেলে খেয়ে নিজে প্রতিষ্টিত না হয়ে কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধার সপ্ন পুরণ হয় না। জয় ও লতা কিশোর বয়সে ঘর-বাঁধা স্বপ্ন দেখেছিল। লতা একদিন জয়ের ঠিকানায় লাল শাড়ী পরে বধু সেজে ছবি পাঠায়। সেই ছবি পেয়ে জয়ও কিছুটা আবেগ প্রবল হয়ে পড়ে। লতা তার প্রেমিক জয়কে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে। প্রতিষ্টিত না হয়ে বিয়ে করতে পারবে না বলে সিন্ধান্ত নিলে জয়ের সাথে লতার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। তারপর লতার বিয়ে হয় অন্য জায়গায়। জয়ও প্রতিষ্টিত হয়ে লতার বিয়ের ৭ বছর পরে বিয়ে করে। সেই লাল শাড়ী পরা ছবির কথা জয় আজো মনে রেখেছে।
আফরাজের দুই খালাম্মা মাস্টাসে পড়ছে। চেহেরা ও কথাবার্তা এক রকম বলে তাদেরকে নাম ধরে ডাকি না। তারাই বলে, "ভাইয়া, আমি অমুক। তাদের বিয়ের পরেও মজার মজার কাহিনী ঘটবে। আজ আর নয়। ২০০৩ সাল থেকে প্রবাসী বলে স্টকে আর কোন মজার স্মৃতি জমাতে পারি নাই।
বিষয়: বিয়ের গল্প
৪৭৫২ বার পঠিত, ৭২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সকলে মিলিয়া খাও
তয়
ছবিসহ ১২ পদের মধ্যে
ছবিটাই সেরা।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
এখন তো বিয়ে মানে বরের ও তার পরিবারের কান্না। কারন।
#ব্যক্তি স্বাধিনতা শেষ।
#মা-বাপের জন্য কিছু আনলেই বিরক্তি।
#মার্কেট এ যাওয়া।
#শশুর বাড়ির কেউ অসুস্থ থাকলে হাসপাতাল ডিউটি আর নিজের বাড়ির কেউ হলে আমি ব্যাস্ত।
#বেতনের অর্ধেক গায়েব!
# মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্ট এ যাওয়া(ব্যাচেলর রা বেশি রেস্টুরেন্ট এ খায় কিন্তু তা বড়জোর পাড়া বা অফিসের কিন্তু বউ নিয়ে খেতে গেলে কমপক্ষে মাথাপিছু ১০০০ খরচ!)।
# আরো অনেক, বাকিরা বলুন।
ভুলেও বিয়ে করবেননা!!!
এত গুলা প্রেম করার পর মাত্র এক পিস বর।!!!আর পার্কে বসে আর ডেটিং আর হবেনা তাই
কোথায় পাইছেন ছবিটা ?
ভালো লাগ্লো খুব...
লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি --
মনে পড়ে আমার চাচাকে বিয়ে করাবে বলে আমার দাদাভাি পিটিয়েছিল আর বর্তমানে ছেলে মেয়েরা একা একাই সেই কাজটা করে ফেলে। সেই বিয়ের আনন্দ এখন আর নাইরে ভাই
অনেক ধন্যবাদ লেখককে সুন্দর লেখনির জন্য
বিয়ে শাদি খোদার হাতে
খোদার কলম নড়েনা
খোদায় যদি কলম মারে
সেই কলম আর ফিরেনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন