۞۞ বউয়ের মুখ দেখে হঠাৎ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বাবুল ভাই বলেছিল, "এইটা আমার বউ না। ওরা অন্য মেয়ে দিয়েছে।" ۞۞
লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৩৭:০১ সন্ধ্যা
প্রবাসী থাকি বলে বিয়ে-শাদীর অনুষ্টানে আমরা প্রবাসীরা খুব একটা অংশ গ্রহন করতে পারি না। গতবছর ফেব্রুয়ারীতে ছুটিতে দেশে গিয়ে প্রায় আড়াই মাস ছিলাম। ছুটির দিনগুলোতে সৌভাগ্যক্রমে আমাদের বাড়ীর একটি বিয়ের অনুষ্টানে অংশ গ্রহন করার সুযোগ পাই। কনের বাবার সাথে আমার খুব ঘনিষ্ট থাকার কারনে বিয়েতে যেতেই হয়েছিল। ছোট বেলায় কনের বাবার বিয়েতে অংশ গ্রহন করেছিলাম। সেই সময়ের একটি মজার ঘটনা এখনো মনে পড়ে। কনের বাবা বাবুল ভাই বিয়ে বাড়ী থেকে এসে বউয়ের মুখ দেখে হঠাৎ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলেছিল,"এইটা আমার বউ না। ওরা অন্য মেয়ে দিয়েছে।" তার মুখ থেকে এই কথা শুনে আমি বুঝিয়ে বলেছিলাম,"উনিই আপনার বউ।" আপনি আরেকবার দেখুন।" যাক এবার আসি ওনার মেয়ের বিয়ের কাহিনী নিয়ে....
কনের বাবার নাম বাবুল মিয়া পেশায় মুরগী ব্যবসায়ী। গ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজারে মুরগী বিক্রী করে সংসার চালায়। সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ে। দেখতে সুন্দর বলে পাশের গ্রামের রহিম মিয়া তার পুত্রের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে বাবুল মিয়ার টেনশন বেড়ে যায়। কারণ তার যে জমানো টাকা পয়সা নেই।
একদিন রাতে বাবুল মিয়া ও রহিম মিয়া দু'পক্ষ মিলে বিয়ের দর কষাকষি শুরু হয়। ছেলের পক্ষের মুল কয়েকটি দাবী হচ্ছেঃ
১. বিয়েতে ২০০ জন বরযাত্রীকে খাওয়াতে হবে।
২. বিয়ের দিন ৫০ জনের খাবার রহিম মিয়ার বাড়ীতে পাঠাতে হবে।
৩. কনেকে ১ ভরি স্বর্ণ দিতে হবে।
৪. ছেলের জন্য আলমারী, খাট, সোফাসেট, লেপ-তোষক ইত্যাদি দিতে হবে।
উপরোক্ত দাবীগুলো শুনে কন্যা পক্ষও ছেলের পক্ষ থেকে কিছু দাবি পেশ করা হয়। কন্যা পক্ষের দাবী হচ্ছেঃ
১. মোহরানা হতে হবে ৪ লাখ টাকা।
২. কনেকে ২ ভরি স্বর্ণ দিতে হবে।
৩. কনেকে সাজানের জন্য বিয়ের শাড়ী,প্রসাধনীসহ আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিয়ের সামগ্রী দিতে হবে।
৪. বিয়ের পরে কন্যা পক্ষের ৫০ জন অতিথিকে খাওয়াতে হবে।
দরকষাকষি করে উভয়পক্ষ একে অপরের প্রস্তাবিত দাবীগুলো মেনে নিয়ে বিয়ের একটি দিণক্ষণ ঠিক করে।
কিছুদিন পরেই বাবুল মিয়ার বড় মেয়ের বিয়ে হবে। এখন বাবুল মিয়ার টেনশন বেড়ে গেছে। ছেলে পক্ষের দাবীগুলো পুরণ করতে প্রায় ২ লাখ টাকারও বেশী খরচ হবে। সামান্য মুরগী ব্যবসায়ী বাবুল মিয়ার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয় বলে পয়সাওয়ালা আত্বীয় স্বজন, পাড়ার বিত্তশালী, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়ীতে গিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে মাঠে নামতে বাধ্য হয়। সব টাকা জোগাড় না হওয়ায় বড় অংকের সুদের বিনিময়ে বাবুল মিয়াকে কিছু টাকা মহাজনের কাছ থেকেও সংগ্রহ করতে হয়।
আজ বাবুল মিয়ার বড় মেয়ের বিয়ে দিন। সব আয়োজন শেষ। যোহরের নামাযের আগেই রহিম মিয়ার বাড়ীতে ফার্নিচার ও খাবার পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যোহরের পরে বরের বাবা রহিম মিয়া তার দলবল নিয়ে বিয়ে বাড়ীতে উপস্থিত হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষ করে আকদ পড়ানোর পর বাবুল মিয়া কাঁদতে কাঁদতে তার বড় মেয়েকে রহিম মিয়ার পুত্রের হাতে তুলে দেয়। বাবুল মিয়ার কান্নায় আমাকেও কাঁদায়। একজন কন্যাদায়গ্রস্থ বাবুল মিয়াকে আজ বড় অসহায় মনে হলো।
আজই বিয়ের শেষ পর্ব নয়। আগামী একবছর পর্যন্ত বাবুল মিয়াকে কনের শশুরবাড়ীতে আরো অনেক কিছুই দিতে হবে। এই যেমন-----
কিছুদিন পরে-------
বাবুল মিয়াকে বড় মেয়ের শশুরবাড়ীতে আম-কাঠাল-তরমুজ-খেজুরের রসসহ পিঠা পাঠাতে হবে।
রমজান মাসে বাবুল মিয়াকে বড় মেয়ের শশুরবাড়ীতে ইফতারী দিতে হবে। ঈদের আগে মেয়ের জামাই, শশুর-শাশুড়ী, নদন-দেবর ও মেয়ের জন্য কাপড় দিতে হবে। জামাইয়ের পক্ষ থেকে বাবুল মিয়ার কপালে কিছু জুটবে না।
কোরবানীর ঈদের আগে বাবুল মিয়াকে বড় মেয়ের শশুরবাড়ীতে একটি গরু অথবা ছাগল পাঠাতে হবে। ঈদের দিন মসলা-রান্না করা মাংস, পরোটা-পিঠা ও পাঠাতে হবে।
বছর শেষে বাবুল মিয়ার বড় মেয়ের কোলজুড়ে একটি সন্তান আসবে। এই খুশীতে বাবুল মিয়াকে রহিম মিয়ার পরিবারের জন্য রান্নাকরা ভাত-তরকারী পাঠাতে হবে। নতুন অতিথির জন্য কাপড় ও প্রসাধনী পাঠাতে হবে।
এই হচ্ছে কন্যা দায়গ্রস্থ বাবুল মিয়াদের কন্যা জন্মদানের শাস্তি। যারা বড় লোক তাদের শাস্তির পরিমান আরো বড়। এই শাস্তি থেকে গরীব-ধনী কেউ রেহায় পায় না। টাকা থাক বা না থাক সব কিছু শতভাগ দিতে হবে। দিতে না পারলে যে আত্বীয়ের বাড়ীতে মুখ দেখাতে পারবে না।
যুগের পর যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। কন্যাকে সুখে রাখতে গিয়ে বাবুল মিয়ারা আজ দিশেহারা। অন্যদিকে রহিম মিয়ারা আনন্দে সব কিছু গ্রহন করে চলেছে। মহা আনন্দে ভোগ করে চলেছে।
বিয়েতে ও বিয়ের পরের দিনগুলোতে দেয়া-নেয়ার এই ট্রেডিশন থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। তরুন সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। বিয়ে করতে গিয়ে উভয়পক্ষ যাতে সর্বশান্ত না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তাই হে অবিবাহিত যুবক ভাইয়েরা! পাত্রী পছন্দ হওয়া মাত্রই বলে দিন আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। শূধুমাত্র ১০০ জন অতিথি নিয়ে আপনার মেয়েকে ঘরে তুলব। কোন আসবাবপত্র ও দেয়ার দরকার নেই। এই রকম প্রস্তাব পেলে কন্যার পিতারা "আলহামদুলিল্লাহ" বলে অবশ্যই বলতে বাধ্য হবে "আপনারা খূশী হয়ে একটা মানসম্মত দেন-মোহর ধার্য করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেন।"
বিষয়: বিয়ের গল্প
৬৩৬৫ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিয়ে উপলক্ষে খাওয়াতে চাইলে অলিমায় খাওয়াবে নিজের বাড়ীতে।
আল্লাহ্ আমাদের পথ চলা সহজ করে দিন। আমীন
১. বিয়েতে ২০০ জন বরযাত্রীকে খাওয়াতে হবে।
২. বিয়ের দিন ৫০ জনের খাবার রহিম মিয়ার বাড়ীতে পাঠাতে হবে।
৩. কনেকে ১ ভরি স্বর্ণ দিতে হবে।
৪. ছেলের জন্য আলমারী, খাট, সোফাসেট, লেপ-তোষক ইত্যাদি দিতে হবে
ভালো লাগলো পিলাচ
যে বিয়ে করে সে তো তার নিজের প্রয়োজনেই বিয়ে করে। তাহলে যাকে বিয়ে করা হয় তার বা তার পিতার কাছ থেকে এতকিছু আদায় করতে হবে কেন? বিয়ে কি শুধু কন্যারই দরকার? বরের বিয়ের দরকার নাই? যদি দরকার না থাকে তবে বিয়ে করতে কে বলে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন