۞۞ মৃত্যুর ওপারে ۞۞

লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ৩০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৫৩:৪৭ রাত



১. মৃত্যুর ওপারে--

আজরাঈল (আঃ) কাউকে না বলে, না ইশারা দিয়ে চলে আসে। তখন হয়তো সে বাস যাত্রী। হয়তো সে কোনো নভেল নাটক পড়ায় মগ্ন। হয়তো শরাবের বোতল নিয়ে বসে আছে সে। কিংবা কোন হাউজির আড্ডায়। বা কাউকে খুনের পরিকল্পনা করছে। অপরের জমি দখলের কুট ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। সিনেমা হলের আঁধারে। তাসের আড্ডায়। গাঁজার আসরে। নেশাপানিতে লিপ্ত। বাজে মেয়ের সাথে। রাজ সিংহাসনে বসে। বিদেশী কুটনীতিকদের সাথে আলোচনায়। এমনি সময় এসে পড়ে। সে।

আজরাঈল।

জীবন ঘড়ির সুতো, লাটাই তো অন্যের হাতে।

জানা নেই কখন টেনে বসে।

লোকমান হেকিম (রঃ) তাঁর ছেলেকে বলেছেন “মৃত্যু এমন ঘটনা যার ভুমিকা সম্পর্কে জানা নেই। কখন এসে পড়বে জানে না কেউ।

২. মৃত্যুর ওপারে--

সুরমা অট্টালিকায় বাস করে এক মানুষ। চারপাশে তার আনন্দ আর ফুর্তির সামগ্রী। তাতে সে লিপ্ত। এমন সময় খবর পায় পুলিশ খুজছে তাকে। গ্রেফতার করবে তাকে । সব আনন্দ মাটি হবে তার। রাত কাটবে অঘুমে।

মৃত্যু তো তেমনি।

আচমকা আসবে।

কেড়ে নিবে জীবনের সব আনন্দ। খুশী।

পুলিশের বেত থেকেও কঠিন সেই মুন্ডুর। যা ফিরিশতা নিয়ে আছে। পাপিষ্টকে শাস্তি দেবার জন্য।

৩. মৃত্যুর ওপারে--

হাসপাতালে যান দেখবেন মৃত্যু যন্ত্রনায় ধুঁকছে রোগী। শুনুন তার আর্তনাদ। মরণ যন্ত্রনায় কাতর সে। কী যে তার কষ্ট সে তার কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ডাক্তার এসে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উচাটন করে ফেলেছে তাকে। বড় আশা করে ঢুকেছিল সে এখানে। প্রথম ভাবতো ডাক্তারই বুঝি তাকে সারিয়ে তুলবে। কি সে হারিয়ে ফেলে বিশ্বাস। সে দেখে তার পাশের বেডে রুগি ধুঁকতে ধুঁকতে মারা গেল। একই ডাক্তারের চিকিৎসায়। সে রয়েছে বেঁচে। হয়ে উঠছে সুস্থ। প্রতিদিন প্রতিটি হাসপাতাল আর শত শত ক্লিনিক থেকে একদিকে বের হচ্ছে লাশ। আরেকদিকে বেরিয়ে আসছে সুস্থ মানুষ।

নিশ্চয় মানুষ মরণশীল।

যে জন্মেছে সে মরবে।

মরণের স্বাদ তাকে পেতেই হবে। যদিও সে দুর্গম দুর্গে থাকে । মৃত্যুর দোলনায় দুলছে মানুষ আর জ্বিন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-“হে জ্বিন ও মানুষ! যদি আমার আদেশ মানতে তোমার ভাল না লাগে। তবে বের হয়ে যাও। আকাশ আর জমিনের সীমানার বাইরে। কিন্তু কখনই তোমরা পারবেনা বেরিয়ে যেতে আমার রাজত্ব থেকে।

৪. মৃত্যুর ওপারে--

মৃত্যু

মানুষ মরেছে। মরছে। মরবে।

প্রাণী মাত্রই মরবে।

প্রাণের স্বাভাবিক ধর্মই হলো টিকে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করা। সব প্রাণীই মৃত্যুর মুখোমুখি হলে সব শক্তি এক করে রুখে দাড়ায়। আত্মরক্ষার সংগ্রামই হলো সবচেয়ে বড় লড়াই।

মৃত্যুই হলো জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগ।

মৃত্যুকে সেজন্য সবার এতো ভয়। সব হারাবার ভয়। হারিয়ে যাবার ভয়।

৫. মৃত্যুর ওপারে--

মৃত্যুর ব্যাপারে মুমিনের কোন ভয় নাই। আসল কথা হচ্ছে পূন্যবান হতে হবে। আল্লাহ তায়ালার সাথে গভীর সম্পর্ক থাকতে হবে।

৬. মৃত্যুর ওপারে--

মৃত্যু আসবে।

অমোঘ নিয়তির কাছে হার মানতেই হবে।

কেউ ঠেকাতে পারবে না তার অপরাজেয় শক্তিকে । ঠিক মুহুর্তটিকে পৃথিবীর দুর্ঘম দুর্গে এসে নিয়ে যাবে প্রাণ।

পালাবে কোথায়? মৃত্যুর হাত থেকে?

মৃত্যু এক ভয়ানক পরিণতি। তার হামলা অপ্রতিরোধ্য।

কিন্ত মানুষ তার থেকে একেবারে উদাসীন। নানা কাজ কর্মের ফাঁকে প্রায় ভুলেই যায় সে মৃত্যুকে। কখনো মনে পড়লেও তা আবছামতো। এতো অন্যমনস্ক ভাবে যে মনে রেখাপাত করে না। শুধু মুখের কথা থেকে যায়।

সেজন্য মনকে সব সময় দুনিয়াবী চিন্তা থেকে মুক্ত করে মৃত্যুর কথা ভাবতে হবে। যেন সে সামনে। একেবারেই সামনে।

৭. মৃত্যুর ওপারে--

চিন্তা করেন কিভাবে আপনার আত্বীয়রা চলে গেছে একে একে। কি করে তাদেরকে ওঠানো হয়েছিল লাশের খাটে। কী করে চাপা দেয়া হয়েছিল মাটির নীচে। কতই না সুন্দর ছিল তাদের চেহেরা। কতো বেশী সামাজিক মর্যাদা ছিল । মন্ত্রী ছিল, সচিব ছিল, ছিল বিরাট ব্যবসায়ী। ছিল সুবিশাল অট্টালিকা, দিগন্ত জোড়া খামার বাড়ির মালিক।

সুদর্শন সেই সব পুরুষ, সুন্দরী সেই সব নারীর সুন্দর চেহেরা পচে চলে গেছে কোথায়? তাদের শরীর টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে কাদায় মিশে গেছে।

তারা চলে গেছে। পড়ে আছে তাদের ছেলে মেয়েরা। তারা এতিম।

তারা চলে গেছে। পড়ে আছে তাদের স্ত্রীরা। তারা বিধবা।

এতিম সন্তান বিধবা স্ত্রী আর অনাথ আত্বীয়রা কাঁদে কিন্ত তাকে আর পায় না। তাদের ঘর-বাড়ী, জিনিষ-পত্র, পোষাক-আশাক সব পড়ে আছে। নেই তারা।

এমন অবস্থা আমারও হবে।

তারা এই দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় এখানে ওখানে আড্ডা দিত। হো হো হা হা শব্দে কথায় কথায় হেসে উঠতো । দুনিয়ার স্বাদে আর মজায় বিভোর থাকতো।

ভুলে একবার স্বরণ করেনি মৃত্যুকে।

হায়!

আজ দেখো তাদের পরিণতি ।

নিঃশব্দে মিশে গেছে মাটিতে।

৮. মৃত্যুর ওপারে--

একজন জ্ঞানী লোক কোন জানাজায় শরীক হলেন। তিনি দেখলেন লোকজন মৃত মানুষটার জন্য আফশোস করছে। তিনি বললেন, “নিজের জন্য দুঃখ করো । তাতে উপকার হবে। মৃত লোকটি চলে গেছেন। তিনি তিনটা বিপদ থেকে এখন মুক্ত। আজরাঈল (আঃ) কে তিনি আর দেখবেন না । তার আর মৃত্যু কষ্ট হবে না। অশুভ পরিণতির ভয় আর রইল না। নিজের জন্য আফশোস করো। কারণ তোমার সামনে এই তিনটা মহা বিপদ।

৯. মৃত্যুর ওপারে--

যারা নেক জীবন কাটায় আর পরকালের উপর অবিচল বিশ্বাস রাখে এই দুনিয়াতে তাদের মন বসে না । মৃত্যুকে তারা ভয় পায় না । তারা জানে যে মৃত্যুর পরেই রয়েছে অনাবিল শান্তি ।

১০. মৃত্যুর ওপারে--

সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক একবার আবু হাশিম (রঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “ আচ্ছা আমরা মরণকে ভয় পায় কেন?”

তিনি জবাব দিলেন, “আসলে আমরা পরকালকে ভূলে দুনিয়া নিয়ে পড়ে থাকি। দুনিয়ার উন্নতি করতে থাকি। পরকালকে নষ্ট করে। আমাদের দুনিয়া উন্নত হয়। সুন্দর হয়। পরকাল বরবাদ হয়। বিরাণ হয়। তো কে উন্নত আর সুন্দরকে ছেড়ে অনাবাদ আর বিরাণ জায়গায় যেতে চায়?”

সৎ কাজ করে। সৎ কাজের দিকে মানুষকে ডেকে। দুনিয়াতে দ্বীনি পরিবেশ গড়ে তুলে। আখিরাতকে আবাদ করে। পরকালের শান্তির ব্যবস্থা করে মরতে ভয় কি?

সুত্রঃ "মৃত্যুর ওপারে-- " বই থেকে-----------

বিষয়: বিবিধ

১২২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File