۞۞ ইহকালীন জীবনের উত্তম কাজ-যা মৃত্যুর পরও উপকারে আসে ۞۞

লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ২২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:৩১:৫৩ সন্ধ্যা



۞۞ ইহকালীন জীবনের উত্তম কাজ-যা মৃত্যুর পরও উপকারে আসে ۞۞

হযরত আবূ হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মহানবী (স) ইরশাদ করেছেন-যখন মানুষ মারা যায়, তখন মানুষের আমলের (সাওয়াবের) ধারা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরনের আমলের সাওয়াব সদা-সর্বদা অব্যাহত থাকে। ১.সাদকায়ে জারিয়াহ

২. এমন ইলম, (বিদ্যা) যার দ্বারা মানুষের উপকার সাধিত হয় এবং

৩. সুসন্তান, যে তার পিতা-মাতার জন্য দু’আ করে।

(তিরমিযী, হাদীস নং-১২৯৭, নাসায়ী, হাদীস নং- ৩৫৯১)

প্রসঙ্গ : মানুষের তিনটি আমল মৃত্যুর পরেও সাওয়াব হাসিলের হাসিলের উৎস হিসেবে চালু থাকে; সে কথাই এখানে বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ: মানুষের এ পার্থিব জীবনই হচ্ছে প্রকৃত কর্মের ক্ষেত্র। মৃত্যু এ জীবনের চিরদিনের তরে যাবনিকা টেনে দেয়। এরপর আর সে কোন কাজই করতে পারে না। কিন্ত তিনটি কাজ এমন রয়েছে, যা জীবদ্দশায় করলে মৃত্যুর পরও তা থেকে অফুরন্ত সুফল লাভ করা যায়। এমনভাবে যেমন জীবদ্দশায় সে কাজের ফল পেয়ে থাকত।



۞۞ প্রথমত: (সাদাকাতুন জারিয়াতুন) ۞۞

সাদাকাতুন জারিয়াতুন-এর অর্থ প্রবাহমান বা জারি বা চালু সাদকা। সাদকা দু’প্রকার হতে পারে :

১। সাধারণ দান। যে দানের ফল দান করার মুহুর্তেই শেষ হয়ে যায়। যেমন- নিরন্নকে অন্ন দান, দরিদ্রকে অর্থ দান।

২। জারিয়াহ ব প্রবাহমান দান। যে দানের ফল দীর্ঘস্খায়ী হয়, তাকে সাদকায়ে জারিয়াহ বলা হয়। যেমন- রাস্তাঘাট, পুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ইত্যাদি জনকল্যাণকর কাজ। অর্থাৎ এসব কাজ, যাকে বলা যায় সাদাকাতুন জারিয়াহ, অর্থাৎ সাধারণ পর্যায়ে সাদকা ও দান-খয়রাতের এমন কাজ, যা হতে জনগণ দীর্ঘদিন পর্যন্ত উপকৃত হতে পারে। মহানবী (স) বলেছেন : “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ বানবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।” ( বুখারী মুসলিম )

এমন সাদকামূলক কাজ করে গেলে মানুষ তা থেকে আবহমানকাল পর্যন্ত কবরে বসে তার সওয়াব ও পুরস্কার পেতে থাকবে। তা বন্ধ হবে না, যতদিন পর্যন্ত তা থাকবে।



۞۞ দ্বিতীয়ত: (ইলমুন ইউনতাফাউবিহী) ۞۞

অর্থাৎ এমন ইলম, যা দ্বারা লোকরা উপকৃত হয়। কোন দ্বীনি পুস্তক প্রণয়ন করা, যা পাঠ করে মানুষ উপকৃত হয়, হিদায়াত লাভ করে, বা জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে অজ্ঞতা দূর করতে পারে। অর্থাৎ সঠিক কল্যাণময় জ্ঞান, ইসলামী ইলম, যা অন্য লোকদের দিলে কিংবা সাধারণ লোক পর্যন্ত পৌঁছে দেবার এমন সুষ্ঠ ব্যবস্খা করলেই তা অনন্তকাল পর্যন্ত ছড়াতে থাকে, সে সঙ্গে এর সওয়াবও সে ব্যক্তি লাভ করতে পারে যিনি শুরুতে তা ছড়িয়ে দেবার এমন সুষ্ঠ ব্যবস্খা করে দিয়েছেন।



۞۞ তৃতীয়ত : (ওয়ালাদুন সালিহুন) ۞۞

পুণ্যবান সন্তান বা সুসন্তান বলতে সে সন্তানকে বুঝানো হয়েছে, যে সন্তান হয়েছে, যে সন্তান পিতা-মাতার অধিকার সচেতন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাঁদের খেদমতে নিবেদিত। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে তাঁদের কল্যাণকামিতায় আল্লাহর দরবারে দু’আ প্রার্থী। এরূপ সন্তানকে হাদীসে “ওয়ালাদুন সালিহুন” বা সুসন্তান বলা হয়েছে। অর্থাৎ, সচ্চরিত্রবান সন্তান রেখে যাওয়া, সন্তানদের আদব ও চরিত্র শিখিয়ে দিয়ে সৎ বানিয়ে যাওয়া । যার ফলে পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সে আদর্শ চরিত্রবান সন্তান পিতা-মাতার জন্য, পিতা-মাতার শান্তি, মুক্তি ও মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করতে থাকবে।

সুসন্তান হলে পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাঁদের মাগফিরাতের জন্য এভাবে দু’আ করে থাকে- “হে প্রভু! তুমি আমার পিতা-মাতার প্রতি সেরূপ সদায় হও, যেমন তাঁরা আমকে শৈশবে সদয় আদর যত্ন করেলালন-পালন করেছেন।” (সূরা বানী ইসরাঈল-২৪ )

“সুসন্তান তার জন্য দু’আ করবে”-এ কথাটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ দু’টো শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি। এর দ্বারা পিতা-মাতার কর্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। সন্তানকে ইলমে দ্বীন ও ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে যেতে হবে। সন্তানদের চরিত্র গঠনমূলক আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় সন্তানের পথভ্রষ্টতা ও গোরারাহীর জন্যে পিতা-মাতাকে পরকালে জবাবদিহী হতে হবে। সন্তানের জন্যে এ হাদীসের শিক্ষা হলো, যে পিতা-মাতা অক্লান্ত যত্ন সহকারে তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাদের প্রতি কেবল পৃথিবীতে থাকাকালীন অবস্খায়ই দায়িত্ব পলান করলে চলবে না। তাদের সেবা-যত্ন করলেই দায়িত্ব পালন শেষ হয় না। তাঁদের মৃত্যুর পরও তাঁদের কল্যাণের জন্যে দয়াময় আল্লাহর দরবারে সব সময় মাগফিরাত কামনা করতে হবে। অন্য হাদীসে আছে, পিতা-মাতার জন্যে দু’আ খায়ের না করলে সন্তানের কোন মুনাজাত ও প্রার্থনাই আল্লাহর দরবারে মঞ্জুর হয় না।

۞۞ মূল শিক্ষা ۞۞

পৃথিবীতে মানুষ মরণশীল। এ ক্ষণস্খায়ী পৃথিবীতে থেকেই তাকে আখিরাতের মুক্তির জন্যে কাজ করে যেতে হবে। আর সে কাজ যাতে মৃত্যুর পরেও তার কল্যাণে আসে, এমন কাজ করাই মু’মিন বান্দার কর্তব্য। এ কাজের মধ্যে তিনটি কাজ হচ্ছে :

১। প্রবহমান কল্যাণময় কাজ করে যাওয়া।

২। চলমান উপকারী বিদ্যা রেখে যাওয়া এবং

৩। সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলা।

সুত্রঃ

ইন্টারনেট থেকে

বিষয়: বিবিধ

১৪০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File