۞ ভালবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি ۞

লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ০৩ জুলাই, ২০১৩, ০৯:০০:১৬ রাত



কিশোর বেলায় হুমায়ন আহমেদ, ইমাদুল হক মিলন, কাশেম বিন আবু বকর, সহ দেশী-বিদেশী আরো অনেক লেখকের উপন্যাস পড়েছি। দেশে থাকাকালীন ঈদের সময় বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের ঈদ সংখ্যা গুলো সংগ্রহ করে বুক সেলফে সাজিয়ে রাখতাম। আমার সেই প্রিয় ম্যাগাজিন-উপন্যাস-বইগুলো এখনো আছে, আজীবন থাকবে। প্রবাস থেকে দেশে গিয়ে প্রিয় বইগুলোতে হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই সেই কিশোর বেলায় কথা মনে পড়ে যায়। কত আনন্দময় ছিল সেই সময়ের দিনগুলো। কিশোর বেলায় পড়া একটি উপন্যাসের নাম এখনো মনে আছে । মাসুমা মিমের লিখা “ভালবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি।" প্রেমের উপন্যাস। উপন্যাসের কাহিনীগুলো এখন আর মনে নেই। শুধু বইটির নামটি মনে আছে।



۞ কন্যা আমি তোমার জন্য কাঁদছি ۞

বিগত কয়েকদিন ধরে আমার কন্যার সাথে বহুবার কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ফোন করেই ওর কথা জিজ্ঞেস করি। হ্যালো বলার পর যে কথাটি বলে থাকি“ জারিফা কোথায়?" ও প্রান্ত থেকে শুধু শুনতে পাই “জারিফা খেলছে-টিভি দেখছে-ঘুমাচ্ছে। আমার মায়ের সাথে কথা বলার সময় মা ওকে ডাকতে থাকে। মোবাইল নিয়ে ওর পেছনে ছুটতে থাকে। কিন্তু তার কোন উত্তর নাই। কথা বলার টাইম নাই। প্রবাসী বাবা যে কথা বলতে চায় সেই দিকে তার কোন খেয়াল নাই। তার সাথে কথা বলতে না পেরে আমার মনটা মুহুর্তেই কেঁদে উঠে। ইচ্ছে করে কাজকর্ম ফেলে দেশেই চলে যাই। দুর প্রবাস থেকে এত সহজে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলবে না---তারপরও ইচ্ছে করে----------------------আমার কলিজার টুকরাকে---

--স্নেহ-আদর-ভালবাসা দিয়ে----

জারিফাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতে চাই।

জারিফাকে নিয়ে খেলা করতে চাই।

জারিফাকে নিয়ে বাইরে হাটতে চাই।

জারিফার সাথে গল্প করতে চাই।

জারিফাকে নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরতে চাই।

আচ্ছা, প্রবাস থেকে শুধু কি আমিই সন্তানের জন্য কাঁদি? না কি অন্যরাও কাঁদে? এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পাওয়া কঠিন। কারন লজ্জায় কেউ শিকার করতে চাইবে না। প্রবাসে কেউবা মোবাইলের স্ক্রিনে প্রিয় সন্তানের ছবি রেখে দিয়েছে। কেউবা সন্তানের কথা মনে পড়লেই ছবির এ্যলবাম দেখে নিজেকে সান্তনা দিয়ে থাকে। কেউবা নীরবে অশ্রু ঝরাতে থাকে। আর আমি? মনকে শান্তনা দিই এই ভেবে সাড়ে তিন বছরের এই শিশুটি আবার কি কথা বলবে?

۞ এক প্রবাসী বাবার কথা ۞

প্রায় এক দশক ধরে পঞ্চাশোর্ধ বয়সী কালাম সাহেব দুবাইতে কাজ করছে। অল্প বেতন দিয়ে সংসার চলে না বলে কাজ থেকে ফিরে এসেই ব্যাচেলর রুমে রান্নার কাজ করে কিছু বাড়তি ইনকাম করে। রাত দিন কাজ আর কাজ। কালাম সাহেবের অবসর নেই। ট্যুরিষ্ট ভিসায় দুবাইতে প্রবেশ করে অবৈধ ভাবে বসবাস করে বলে বাড়ীতে যেতে পারে না। তিন মেয়ে ও এক ছেলের ভবিষ্যতের কথ চিন্তা করে কালাম সাহেব দেশে যেতে ভয় পায়। ইতিমধ্য এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আরো দুই মেয়ে বিবাহ যোগ্য। ছেলে এখনো উপার্জন করার মত বয়স হয়নি। মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে আর ছেলেকে প্রতিষ্টিত করতে কালাম সাহেবকে আরো অনেক কষ্ট করতে হবে। আরো বহু বছর প্রবাসে থাকতে হবে। এই ভাবে কাজ করতে গিয়ে কোন একদিন কালাম সাহেব পৃথিবী থেকে বিদায় নিবেন। কি পেলেন বা কি পাবেন প্রবাসী কালাম সাহেব? এই রকম লক্ষ প্রবাসী কালাম সাহেবকে প্রবাসে বসবাস করতে দেখি। তাদের সংখ্যা এখন কোটির কাছাকাছি। এই সংখ্যা আরো বাড়বে----------------তাদের দুঃখ কষ্টগুলো কেউ দেখে না---তাদের কথা গুলো কেউ শুনে না----কারন তারা প্রবাসী-------------------

পরিশেষে, মাসুমা মিমের মত একটি উপন্যস লিখতে ইচ্ছে করছে যার শিরোনাম হবে, "কন্যা আমি তোমার জন্য কাঁদছি"----------------------

۞ মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন,দুবাই,ইউ এ ই ۞

বিষয়: বিবিধ

৫২১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File