۞ কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা বাবুল মিয়ার কান্না কি কেউ শুনে না? ۞

লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ২৬ জুন, ২০১৩, ০৮:০৯:২২ রাত



বাবুল মিয়া পেশায় মুরগী ব্যবসায়ী। গ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজারে মুরগী বিক্রী করে সংসার চালায়। সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ে। দেখতে সুন্দর বলে পাশের গ্রামের রহিম মিয়া তার পুত্রের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে বাবুল মিয়ার টেনশনে বেড়ে গেছে। কারণ তার যে জমানো টাকা পয়সা নেই।

বাবুল মিয়া ও রহিম মিয়া দুপক্ষ মিলে বিয়ের দর কষাকষি শুরু হয়েছে। ছেলের পক্ষের মুল কয়েকটি দাবী হচ্ছেঃ

১. বিয়েতে ২০০ জনকে খাওয়াতে হবে।

২. বিয়ের দিন ৫০ জনের খাবার রহিম মিয়ার বাড়ীতে পাঠাতে হবে।

৩. কনেকে ১ ভরি স্বর্ণ দিতে হবে।

৪. ছেলের জন্য আলমারী, খাট, সোফাসেট, লেপ-তোষক দিতে হবে।

উপরোক্ত দাবীগুলো শুনে কন্যা পক্ষও ছেলের পক্ষ থেকে কিছু আদায় করে নিতে চায়। তাদের দাবী হচ্ছেঃ

১. মোহরানা হবে ৪ লাখ।

২. কনেকে ২ ভরি স্বর্ণ দিতে হবে।

৩. কনেকে সাজানের জন্য বিয়ের শাড়ী,প্রসাধনীসহ আরো অন্যান্য জিনিষ দিতে হবে।

৪. বিয়ের পরে কন্যাপক্ষের ৫০ জনকে খাওয়াতে হবে।

উভয়পক্ষ দাবীগুলো মেনে নিয়ে বিয়ের একটি দিণক্ষণ ঠিক করে।

কিছুদিন পরেই বাবুল মিয়ার বড় মেয়ের বিয়ে। বাবুল মিয়ার টেনশন বেড়ে গেছে। ছেলেপক্ষের দাবীগুলো পুরণ করতে প্রায় ২ লাখ টাকার বেশী খরচ হবে। সামান্য মুরগী ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া এত টাকা কিভাবে জোগাড় করবে?

বাবুল মিয়া তার পয়সাওয়ালা আত্বীয় স্বজন, পাড়ার বিত্তশালী, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়ীতে গিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে মাঠে নেমেছে। সবাই বাবুল মিয়ার আহবানে সাড়া দিয়েছে। সবটাকা জোগাড় না হওয়ায় বড় অংকের সুদের বিনিময়ে বাবুল মিয়াকে কিছু টাকা সংগ্রহ করতে হয়েছে।

কিছুদিন পরে--------------------

আজ বাবুল মিয়ার বড় মেয়ের বিয়ে। সব আয়োজন শেষ। যোহরের নামাযের আগেই রহিম মিয়ার বাড়ীতে ফার্নিচার ও খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে। যোহরের পরে রহিম মিয়ার তার দলবল নিয়ে বেয়াই বাবুল মিয়ার বাড়ীতে উপস্থিত হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষ করে আকদ পড়ানোর পর বাবুল মিয়া কাঁদতে কাঁদতে তার বড় মেয়েকে রহিম মিয়ার পুত্রের হাতে তুলে দেয়।

কিছুদিন পরে----------------

বাবুল মিয়াকে বড় মেয়ের শশুরবাড়ীতে আম-কাঠাল-তরমুজ-খেজুরের রসসহ পিঠা দিতে হবে।

আরো কিছুদিন পরে---------------

রমজান মাসে বাবুল মিয়াকে বড় মেয়ের শশুরবাড়ীতে ইফতারী দিতে হবে। ঈদের আগে মেয়ের জামাই, শশুর-শাশুড়ী, নদন-দেবর ও মেয়ের জন্য কাপড় দিতে হবে। জামাইয়ের পক্ষ থেকে বাবুল মিয়ার কপালে কিছু জুটবে না।

আরো কিছু দিন পরে----------------

কোরবানীর ঈদের আগে বাবুল মিয়াকে বড় মেয়ের শশুরবাড়ীতে একটি ছাগল পাঠাতে হবে। ঈদের দিন মসলা-রান্না করা মাংস, পরোটা-পিঠা পাঠাতে হবে।

আরো কিছু দিন পরে----------------

বাবুল মিয়ার বড় মেয়ের একটি ছেলে বা মেয়ে জন্ম গ্রহন করবে। এই খুশীতে বাবুল মিয়াকে রহিম মিয়ার পরিবারের জন্য রান্নাকরা ভাত-তরকারী পাঠাতে হবে। নাতী/নাতনীর জন্য দোলনা, কাপড় ও প্রসাধনী পাঠাতে হবে।

বছর শেষ হতে না হতেই বাবুল মিয়ার দ্বিতীয় কন্যাটিও বিবাহযোগ্য হবে------------------

এই হচ্ছে কন্যা দায়গ্রস্থ বাবুল মিয়াদের কন্যা জন্মদানের শাস্তি। যারা বড় লোক তাদের শাস্তির পরিমান আরো বড়। এই শাস্তি থেকে গরীব-ধনী কেউ রেহায় পায় না। টাকা থাক বা না থাক দিতে হবে। খরচ করতেই হবে। না দিলে/ না করলে যে কিপটা বলবে। খোটা দিবে। সমাজে মুখ দেখাবে কি করে?

যুগের পর যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। কন্যাকে সুখে রাখতে গিয়ে বাবুল মিয়ারা আজ দিশেহারা। অন্যদিকে রহিম মিয়ারা আনন্দে সব কিছু গ্রহন/ভোগ করে চলেছে।

বিয়েতে ও বিয়ের পরে দেয়া-নেয়ার এই ট্রেডিশান থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। তরুন সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। বিয়ে করতে গিয়ে উভয়পক্ষ যাতে সর্বশান্ত না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

হে অবিবাহিত যুবক ভাইয়েরা! পাত্রী পছন্দ হওয়া মাত্রই বলে দিন আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। শূধুমাত্র ১০০ জন অতিথি নিয়ে আপনার মেয়েকে ঘরে তুলতে চাই। কোন আসবাবপত্র ও দেয়ার দরকার নেই। এই রকম প্রস্তাব পেলে কন্যার পিতা আলহামদুলিল্লাহ বলে অবশ্যই বলতে বাধ্য হবে “ আপনারা খূশী হয়ে একটা মানসম্মত দেন-মোহর ধার্য করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেন।

বিষয়: বিবিধ

২৬৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File