۩۞۩ আমার কলিজার টুকরা জারিফার সাথে ৭০দিন ۩۞۩
লিখেছেন লিখেছেন সিটিজি৪বিডি ২৫ মে, ২০১৩, ০৬:০৫:২৫ সন্ধ্যা
۩۞۩ আমার কলিজার টুকরা জারিফার সাথে ৭০দিন ۩۞۩
২৫.২.২০১৩ ইং
আজ দুবাই থেকে দেশে আসছি। আমাকে নিয়ে যাবার জন্য জারিফা তার দাদার সাথে চট্টগ্রাম এয়ারপোটে এসেছে। আমিও ফ্লাইটে বসে কন্যাকে দেখার জন্য ছটফট করছি।
সকাল দশটায় চট্টগ্রাম এয়ারপোটে এসে তাড়াতাড়ি লাগেজ নিয়ে বের হয়ে আমার বাবা ও জারিফাকে খুজতে থাকি।
এয়ারপোটের বাইরে বাবা তার নাতনীকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। বাবার কাছে গিয়ে সালাম করে জারিফাকে কোলে নিতে চাইলে কান্না শুরু করে। অতিরিক্ত গরমের কারনে জারিফাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তাই দেরী না করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরি।
২৬.২.২০১৩ ইং
জারিফা আমার উপস্থিতি মেনে নিতে পারছে না। কিছুতেই আমার কাছে আসছে না। জারিফার সাফ কথা "এটা আমার দাদুর বাসা। তুমি দুবাইতে চলে যাও।" তার এই কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। যার জন্য এতদুর থেকে ছুটে এসেছি সে বলে কিনা চলে যাও?
আমাদের ছোট বোন ব্লগার সুমাইয়া বরকতুল্লাহ জারিফা নিয়ে সোনার বাংলাদেশ ব্লগে একটি সুন্দর কবিতা লিখেছিল।
তার কয়েকটি লাইন----
তুমি আমাল বাবা
তোমাল জন্য লানছি পোলাও তুমি এসে খাবা
সবাল বাবা ঘলে ফিলে
তুমি কেন আস না
তুমি আসলে ঘলে তোমার কাছে (সাথে) কথা বলব না-
এই কয়েক দিনে জারিফাকে কবিতাটি শিখিয়েছি। এখন সে কবিতাটি পাঠ সবাইকে শুনাচ্ছে।
হরতালের কারনে বেশীর ভাগ সময় বাসায় থাকতে হচ্ছে।
ছুটির দিনগুলোও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। জারিফা কিছুতেই আমাকে আপন করে নিচ্ছেনা। কাছে ডাকলেই দুরে সরে যায়। চিন্তায় আছি। কি যে করি। আমার বড় ভাইয়ের আদর পেয়ে সে আমাকে পাত্তায় দেয় না।
প্রায় ১ মাস পর হঠাৎ একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, "বাবা, আমি দাদুর সাথে তোমাকে আনতে এয়ারপোটে গিয়েছিলাম। আমি তোমাকে চিনতে পারিনি তাই কান্না করেছিলাম।" তার মুখ থেকে এই কথা শুনে হাসতে থাকি। এতদিন পর সে আমাকে আপন করে নিল।
ল্যাপটপে কাজ করার সময় সে কি-বোর্ডে হাত দিয়ে আমার কাজে ডিস্টাব করে। আমার মোবাইল ও ক্যামেরা নিয়ে একের পর এক ছবি তুলতে থাকে। নিষেধ করলেই কান্না শুরু করে। আমি বাসা থেকে বাইরে গেলেই অর্ডার আর অর্ডার'। এটা আনবে ওটা আনবে। সব আনবে----
৩.৫.২০১৩ ইং
সুখের দিনগুলো দ্রুত শেষ হলে গেল। জারিফাকে নিয়ে ঢাকা ও গ্রামের বাড়ীতে ঘুরে এসেছি। হরতালের কারনে আর কোথাও যাবার সাহস পাইনি। আগামীকাল দুবাইতে ফিরে যেতে হবে। আজকে হঠাৎ জারিফা তার আম্মুকে বলে, " আম্মু, বাবা কালকে দুবাই চলে যাবে। বাবা আমার জন্য কান্না করবে।"
৪.৫.২০১৩ ইং
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামায পড়ে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে পরিবারের সবার জন্য দোয়া করি। বিশেষ করে অসুস্থ মায়ের জন্য একটু বেশী দোয়া করেছি।
আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। জারিফা তার বড় আব্বুর কোলে। বিদায় বেলায় আরেকটু আদর চাইলেই কান্না শুরু করে।
সকাল ১১টায় ফ্লাইট। তাই ৮টায় বাসা থেকে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোটের দিকে ছুটতে থাকি।
ফ্লাইটের নির্ধারিত সিটে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। দ্রুত গতিতে প্লেন ছুটে চলেছে। আমার খুব খারাপ লাগছে। নিজের ভিতরে হাহাকার শুরু হয়েছে। লজ্জায় কান্না করতে পারছি না। প্রিয়জনদেরকে ছেড়ে প্রবাসে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
৫.৫.২০১৩ ইং
আমি এখন দুবাইতে। বাসায় ফোন করলে জারিফা জিজ্ঞেস করে, "বাবা তুমি কোথায়? তুমি কখন আসবে?"
তারপর------(প্রতিদিন)
জারিফার সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলার চেষ্টা করি। বয়স এখনো কম বলে আমার সাথে বেশীক্ষণ কথা বলে না। খেলনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। জারিফার কথা শোনার জন্য, একটু দেখার জন্য মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ক্লিপগুলো দেখতে থাকি।
লক্ষ লক্ষ প্রবাসী ভাইয়েরা তাদের আদরের সন্তানদের কাছ থেকে অনেক দুরে থাকে। প্রবাসীরা প্রতি বছর অথবা দুই/তিন বছর পর কিছু দিনের জন্য সন্তানদেরকে আদর করার সুযোগ পায়। প্রবাসে অবৈধ বসবাসকারী সন্তানের বাবারা সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। হায়রে প্রবাস জীবন। নিষ্টুর এই জীবন।
আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনদের আদরের সন্তানেরা ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক এই কামনায়--------
۩۞۩ মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, দুবাই,ইউ এ ই ۩۞۩
বিষয়: বিবিধ
৩০৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন