আমাদের সন্তানেরা এখন আর খেজুরের রস খেতে পায়না

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০২:৪৬:৫৩ রাত



একসময় আমাদের প্রায় সব গ্রামেই প্রচুর খেজুর গাছ থাকায় শীত আসলে গাছিদের ব্যস্ততা বেড়ে যেত। সকালে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু শীতের আগমনী বার্তা আর খেজুর গাছের মাথায় সুদৃশ্য মাটির হাঁড়ি শীতের পিঠা-পুলির উৎসবের বার্তা নিয়ে আসত। প্রচুর খেজুর রস এবং খেজুর গুড় বানান হতো আমাদের। কাক ডাকা ভোরে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে খেজুর রস উনুনে দিয়ে বাড়ির সবাই চারপাশ ঘিরে আগুনের আঁচ নিত। গ্রামের কেউ কেউ খেজুরের রস বিক্রি করতে নিয়ে যেত আমাদের বাজারে। আজ ভাঘীনাকে ফোন করলাম মামা খেজুরের রসের নাস্তা খেয়েছ!সে বললো খেজুরের রসকি! কিন্তু আমাদের রাস্তার পাড়ে সাড়ি সাড়ি খেজুর গাছে ঝুলে থাকা হাঁড়ি থেকে খেজুরের টাটকা রস খাওয়া কিংবা রাতে খেজুরের রসের পায়েশের স্বাদ কতইনা মজা ছিল!







খেজুর রসের সিরনি কে না ভালোবাসে। আমাদের গ্রাম - থানা এমন কোনো বাড়ি বা রাস্তা ছিল না যেখানে অন্তত দু’একটি খেজুর গাছ ছিল না। বাংলা কার্তিক থেকে মাঘ পর্যন্ত প্রতি বাড়ির দু’একজন মধ্য বয়সী মানুষ খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখত। এমনকি আমি ও এবৎসর কেটেছিলাম (গাছি অসুস্ত থাকায়) । যারা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করত,আমাদের স্থানীয় ভাষায় তাদের গাছি বলা হয়। গাছিরা দিনের মধ্যভাগ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধারাল চেনি (দা), মুগির আর রস সংগ্রহের হাঁড়ি পিঠের পেছনে একটি লম্বা ঝুড়িতে বেঁধে এ বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি বয়ে নিয়ে যেত খেজুর গাছ কাটার জন্য।





[img]

এ কাজে গাছিদের বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েরা সাহায্য করত পেছনে পেছনে হাঁড়ি বহন করে। আবার খুব ভোর থেকে রস সংগ্রহ করে খেজুর গুড় তৈরির জন্য রসের হাঁড়ি একত্রিত করত। সকাল থেকে দিনের অর্ধবেলা পর্যন্ত মা-বোনেরা রস থেকে গুড় তৈরি করত। আবার অনেক গাছি কুয়াশার ভেতরেই গ্রামীণ পথ ধরে কাঁধে-হাতে রসের ভার বহন করে হেঁটে চলত রস বিক্রির আশায় বাজারে। দিনের বেলায় পাখিরা রসের চুঙ্গিতে বসে মনের সুখে রস খেয়ে উড়ে যেত। মৌমাছিও রসের আশায় ভোঁ ভোঁ করে উড়ে বেড়াত।ছোট ছোট ছেলেরা প্লাস্টিকের বতল কেটে হাঁড়ি বানিয়ে গাছে লাগিয়ে রাখত। সে দৃশ্য দেখে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যেত সবার। প্রতি বাড়িতে সকাল বেলা খেজুর রসের পায়েস (নাস্তা) তৈরি হতো।









এখন অন্য গ্রাম থেকে মাঝেমধ্যে খেজুর রসের ভার নিয়ে রস বিক্রি করতে এলেও চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি।শুনেছি ছোট ভাই বলেছে একটি রসের হাঁড়ির দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আমরা আগে কত রস বিক্রিকরেছি কিন্তু এখন আমরাই রস পাচ্ছি না। ছোট বাচ্চারা তো রস চিনেই না।

ছবিসুত্রঃ নেট

বিষয়: বিবিধ

৩৯০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File