রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ২০ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৩৪:০০ বিকাল



আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন।

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আর নেই, ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান আর নেই। তিনি আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটা ৪৭ মিনিটে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে আগামী তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

শ্বাসকষ্টজনিত কারণে গত ৯ মার্চ রাতে বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০ মার্চ রাতে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। ১১ মার্চ সকালে তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্যে অসুস্থতার জন্য কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত ডিসেম্বর মাসেও যুক্তরাজ্যে তার স্বাস্থ্য পরীা হয়।

১৯২৯ সালের ৯ মার্চ জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

জিল্লুর রহমান ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর-ভৈরব আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ এর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তিনি এলজিআরডি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার সহধর্মিনী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমানকে হারান।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নবম জাতীয় সংসদে জিল্লুর রহমান সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেন। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

পারিবারিক জীবনে তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের পিতা।

জিল্লুর রহমানকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ১৪ মার্চ থেকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা স্পিকার আবদুল হামিদ গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে আগামী তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

রাষ্ট্্রপতির দায়িত্বে থাকা স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ আজ বুধবার এ শোক ঘোষণা করেন।

লাশ আসবে বৃহস্পতিবার

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের লাশ দেশে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাশ গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল আলম শাকিল জানান, একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে রাষ্ট্রপতির লাশ দেশে আনা হবে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় রাষ্ট্রপতির লাশবাহী উড়োজাহাজটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

একটি সংগ্রামী অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো : প্রধানমন্ত্রী

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রাষ্ট্রপতির শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

শোকবাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে বাঙালি জাতির একটি সংগ্রামী অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে জিল্লুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর।

১৯৭৫ পরবর্তী দুঃসময়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় প্রিয় স্ত্রী ও রাজনৈতিক সহকর্মী আইভি রহমানকে হারিয়ে শোকাহত হয়েছিলেন, কিন্তু দমে যাননি।

এক-এগারো-পরবর্তী চরম দুঃসময়ে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আমাকে মুক্ত করে আনে। বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পায় মুক্ত গণতন্ত্র।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জিল্লুর রহমান চিরদিন বেঁচে থাকবেন। সাহসী, আপোসহীন ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিক হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও অবদানের প্রতি দেখিয়েছেন যথার্থ সম্মান।

বাংলাদেশ এক সুবিবেচক রাজনীতিককে হারালো : খালেদা জিয়া

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শোক জানিয়েছেন।

বুধবার রাতে এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী, আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যম মারফত জানতে পেরে আমি গভীরভাবে শোকাভিভূত।

খালেদ জিয়া বলেন, আমি আমার নিজের ও বিএনপির পক্ষ থেকে মরহুমের শোকার্ত স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। দোয়া করি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জিল্লুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তার ইতিবাচক ভূমিকা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, জিল্লুর রহমান ছিলেন মিতবাক, ভদ্র, নম্র একজন ভালো মানুষ। তার ইন্তেকালে বাংলাদেশ একজন অভিজ্ঞ, মননশীল ও সুবিবেচক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো। রুচি ও প্রজ্ঞার প্রকট অভাবের এই সময়ে তার মৃত্যু যে শূন্যতা সৃষ্টি করলো তা সহজে পূরণ হবার নয়।

খালেদা জিয়া বলেন, দায়িত্বরত অবস্থায় রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর সংবাদ রাষ্ট্রীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়া, রাষ্ট্রপতির চিকিৎসার তদারকির জন্য বিদেশে কোনো দায়িত্বশীল মন্ত্রীকে না পাঠানো, তার অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত বুলেটিন প্রচারের মাধ্যমে জাতিকে অবহিত না করা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসাবে সাংবিধানিক পদে থাকা সত্বেও সরকারের তরফ থেকে রাষ্ট্রপতির মৃত্যু সংবাদ আমাকে না জানানোর ঘটনায় আমি যুগপৎভাবে দুঃখিত ও মর্মাহত।নয়া দিগন্ত অনলাইন

http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=143777

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File