মক্কা-মদিনার স্মৃতি : পর্ব-(১৫)
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ১৭ মে, ২০১৬, ০৪:৪১:২৫ বিকাল
সাফা মারওয়া পাহাড়ে। রাত তখন একটা ছাব্বিশ মিনিট বাজে।
প্রিয় মক্কাতে আমাদের ছয়দিন চলে গেলো।এদিকে মনের গহিনে ব্যথা কষ্টবোধ করছি দোদুল্যমানতার দোলাচলে। দমকা হাওয়া মনকে করতে ছিল উতাল। দীর্ঘদিনের পোষিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই হবে। অন্তর জুড়ে বিরাজ করছিলো আশ্চর্য ধরণের এক অব্যক্ত ভাবনার।
দু'চোখে এক ফোঁটাও ঘুম নেই। বয়স্ক হয়ে যাইনি আমাদের পারতেই হবে। ভাবতে ভাবতে দু'চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি রুমের লাইট অফ। তাতে কি? হাবিব ভাইয়েও আজ নিদ্রাহীন এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করছে। বুঝতে পেরেছি উনিও আমার নেয় কষ্টবোধ করছেন।
ঘড়ির কাটা থেমে নেই চলছে নিরবে। তাকিয়ে দেখি রাত একটার উপরে। বললাম আগামীকাল মদিনা নিয়ে যাবে। আমরা বুড় হয়ে যাইনি এখনো হাজরে আসওয়াদ চুমু দিতে পারিনি। বলার সাথে সাথে হাবিব ভাই ও অজু করে রেডি, একমিনিট ও দেরি না করে চলে গেলাম হেরেম শরিফে। যেই মাত্র গেইটদিয়ে মারওয়া পাহাড়ে প্রবেশ করলাম দেখলাম, সুবহানআল্লাহ লোকে লোকারণ্য। আজকে ওমরাহ্ যাত্রী অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশী। দেখে প্রথম একটু ঘাবড়াই। তবুও বীরের ন্যায় হেরেম শরীফের ভিতর দিয়ে সরাসরি ক্বাবার নিকট পৌঁছেছি।
মধুময় ভাবনা নিয়ে ধীরেধীরে তাওয়াফ শুরু করলাম। আর আব্বু আম্মু স্ত্রী সন্তান ভাইবোন সহ সবাইর জন্য দোয়া করতে থাকলাম। রুকনে ইয়ামানীতে স্পর্শ করার পর দেখতে পেলাম ক্বাবা ঘরের দিকে প্রচন্ড ভীড়। কারণ সামনে হাজারে আসওয়াদ। ওখানে চুমু দেয়ার জন্য লোকজন প্রতিযোগিতা করছে। আমিও কৌশলে রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করে ধীরেসুস্থে ক্বাবার গিলাফ ঘেসে সামনে এগুতে লাগলাম।এদিকে টেনশন আজকেই আমাদের মদিনা নিয়ে যাবে! টেনশন হচ্ছে দোয়াও চলছে “হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি দান করো। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ ও নিরাপত্তা ভিক্ষা চাই।” ধাক্কা ধাক্কায় হাজরে আসওয়াদ পৌঁছে গেলাম।হাজরে আসওয়াদ চুমা দিতে পারায় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই।
ফড়িং গুলি উড়া উড়ি করে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখে ছবিতোলা থেকে বিরতি নিতে পারিনি। তাই ক্লিক দিলাম ..।
খানিক পরে পকেটে তাকিয়ে দেখি কাতার এজেন্সি থেকে যে ওমরাহ্ ভিসার কার্ড দিয়েছিল সেটি নেই। ঠেলাঠেলিতে পড়ে গেছে সাথে সাথে পুলিশসাহেব কে জানালাম। সে বলল এখানে দেখো আছে কিনা। না ফেলাম না। পরের চক্করে এসে পেয়েছি। যাদের কিছু হারিয়ে যায় মাকামে ইব্রাহীম-এর পরে একটা দেয়াল আছে হাজি সাহেব গন কিছু পেলে সেখানে তুলে রাখেন। তাই সবাই হারিয়ে যাওয়া জিনিশ ওখানে খুঁজেপায়।
খানিক পরে হাবিব ভাইয়ের সাথে দেখা। জিজ্ঞেস করলাম পেরেছেন? না পারেনি! এরে মাঝে আজান শুনলাম। ভাবলাম এইতো সুবর্ণ সুযোগ এখনি নামাজ শুরু হবে আপনি এক কাজ করেন। রুকনে ইয়ামানীতে স্পর্শ করে একদম ক্বাবার সাথে মানে প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে যাবেন। যেই মাত্র সালাম ফিরাবে সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুমু দিয়ে আসবেন। যেই কথা সেই কাজ, সামনে চলে গেলেন নাহ! নামাজ শুরু হচ্ছেনা। মূলত আযান দিয়েছিল তাহাজ্জত নামাজের। আমার মনে হয় পৃথিবীতে শুধুমাত্র মক্কা-মদিনাতে তাহাজ্জত নামাজের আজান হয়। প্রায় ঘন্টা খানিক পরে দেখা।দু'টি চোখ লাল। বললেন ভাই ভাবছিলাম আজকেই শেষ? আলহামদুলিল্লাহ্ হাবিব ভাইও চুমু দিতে পেরেছেন।
একদিকে ক্বাবার সামনে পিছনে পরিষ্কারের কাজ চলছে, অন্যদিকে তাওয়াফ ও চলছে।
যদিও অন্যান্য দেশের জিয়ারতকারীরা যৌবনকালের শুরুতে সুঠাম দেহ থাকতে ওমরাহ বা হজ্জ করতে যায়। আমরা বাংলাদেশী মুসলিমরা যাই বৃদ্ধ বয়সে। সেখানে গিয়ে অন্যান্য দেশের শক্তিশালী লোকদের ঠেলা ধাক্কায় এই দেশ থেকে কেহই গিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুমাও দিতে পারে না বা কেহ রওজা মোবারকের পাশেও যাইতে পারে না। ঠেলা ধাক্কা বলা ভুল হবে এটা তাদের স্বাভাবিক চলা। কারণ আমাদের দেশের লোক যৌবনে না গিয়ে বৃদ্ধাবস্থায় রুগ্ন অসুস্থ অবস্থায় গিয়ে তাদের সাথে তাল মিলাতে হিমশিম খায়।
চলবে.........
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মক্কা ও মদীনার হৃদয়ছোঁয়া স্মৃতি আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) কে বার বার মনে করিয়ে দেয়।
সুন্দর উপস্থাপনের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন