মক্কা-মদিনার স্মৃতি : পর্ব-(১০)
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ১০ মে, ২০১৬, ০১:২৭:৪৫ দুপুর
তাওয়াফ শেষকরে জমজমের পানি পান করেছি।এই জমজমের পানি পান করা হাজিদের জন্য একটি বড় আকর্ষন। জমজম কুপ একটি লিভিং মিরাকল। এই কুপটি থেকে প্রায় ৫০০০ বছর ধরে পানি পান করা হচ্ছে। এটি বাইতুল্লাহর (যেখানে তাওয়াফ করা) মাত্র ৬৬ ফুট উত্তরে অবস্থিত। উপর থেকে মাত্র ১০.৬ ফিট নীচে পানির স্তরের অবস্থান। প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার হারে পাম্প করা হলে ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৬৯০ মিলিয়ন লিটার পানি উত্তোলন করা যায়। এতে পানির স্তর প্রায় ৪৪ ফিট নীচে চলে যায়। পানি পাম্প বন্ধ করা হলে মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে প্রায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে! জমজমের পানি কিছুটা ক্ষারীয়। এতে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের পরিমান কিছুটা বেশী। এটি খুব সুপেয়। শিশু ঈসমাইল (আ) কে রেখে মা হাজেরা (আ) পানির অন্বেষণে সাফা-মারওয়া পাহাড়ে ছুটোছুটি করছিলেন তখন ঈসমাইল (আ) এর পায়ের আঘাতে অনুর্বর মরুভূমিতে পানি উঠা শুরু হয় যা এখনো সচল! হজ্জ-ওমরায় আগত বিশ্বের মিলিয়ন মিলিয়ন মুসলিম জমজমের পানিতে পিপাসা মিটিয়ে থাকেন। সৌদি সরকার মদিনার মসজিদ নববীতেও জমজমের পানির ব্যবস্থা করেছেন। নবীজি (সা) মদিনায় ফেরার পথে জমজমের পানি বহন করে এনেছিলেন । অসুস্থ রোগীদেরকে এই রহমতপুর্ন পানি পান করতে আহবান করেছেন। এজন্য বাড়ি ফেরার পথে জমজমের পানি বহন করা হাজিদের জন্য নবীজির একটি সুন্নাতের আমল হিসেবে পরিগনিত হয়।
সাফা মারওয়া “ঐ দুই পাহাড়ের মাঝখানে সায়ী করায় কোন গোনাহ নাই”। (আল কোরআন) আমরা এই দুই পাহাড়ের মধ্যে হাটা শুরু করলাম এজন্য যে, হযরত ইব্রাহীম আঃ এর স্ত্রী হযরত হাজরা শিশু ইসমাঈল আ. এর জন্য পানি খোঁজতে এই দুই পাহাড়ের মাঝে বার বার দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। মাতৃত্বের সেই পরম প্রকাশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে খুবই পছন্দনীয় হয়েছিল বলে তিনি আমাদের জন্য তা করণীয় করে দিয়েছেন।
এই সাফা মারওয়া মাঝে যে জমজম পানি তার সামান্য ইতিহাসঃ
বর্তমানে আমাদের সাফা মারওয়া পাহাড়ের যে অংশ দেখার সুযোগ হয়েছে, তা পাহাড় গুলোর একদম চূড়া। আর আমরা যে স্থান দিয়ে হেটেছি দেখতে তা সমতল ভূমি ছিল। আসলে কিন্তু সমতল ভূমি না। বরং তা হচ্ছে দুই পাহাড়ের মাঝে সংযোগ ব্রীজ। ঐ ব্রীজের নিচে পাহাড়ের বিরাট অংশ রয়েছে।এই পাহাড়টি এক সময় উম্মুক্ত ছিল। কিন্তু সৌদি সরকার বর্তমানে তা গ্লাস দিয়ে আবৃত্ত করে রেখেছেন। কারণ আমার মতো অশিক্ষিতরা এই পাহাড়ের পাথর মাটি ইত্যাদি নিতে নিতে তাকে একদম সাবাড় করে দিচ্ছিলেন। অথচ এই পাহাড়ের মাটিতে কোন বরকত আছে বলে আমার জানা নেই আপনাদের জানা থাকলে বলবেন।
সাফা পাহাড়ে আরোহন করে আমি কাবাঘরের দিকে মুখ করে আল্লাহর দরবারে তসবিহ পড়লাম, দোয়া করলাম। আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. এই স্থানে নিম্নের দোয়া করেছেনঃ
لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير. لا إله إلا الله وحده أنجز وعده ونصر عبده وهزم الأحزاب وحده.
“আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নাই। তিনি একা তাঁর কোন শরীক নাই। রাজত্ব তারই এবং তারই জন্য সকল প্রশংসা। এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মাবুদ নাই। তিনি একা। তিনি কাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন। তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং সবকটি দলকে একাই পরাজিত করেছেন।”
উপরের এই দোয়াটি নবী মুহাম্মদ সা, ৩বার পড়েছেন। এবং সাথে অন্য দোয়াও পড়েছেন। তাই আমরাও পড়েছি।দোয়া পড়ার পর সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের দিকে হাটতে শুরু করলাম। এক জায়গায় গিয়ে দেখলাম উপরে সবুজ বাতি। দুই স্থানে সবুজ বাতি রয়েছে। সেই দুই সবুজ বাতির মধ্যখানেই দৌড়াতে হয়। হঠাৎ দেখলাম যে, আমাদের সামনের পিছনের এবং ডান বামের সবাই দৌড়ানো শুরু করেছে। তাদের সাথে আমরাও দৌড়াতে থাকলাম।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ
আপনার ভালো লাগায় আমি ধন্য। তাই আপনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন