মক্কা-মদিনার স্মৃতি : পর্ব-(৭)
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৬ মে, ২০১৬, ০৭:১২:০২ সন্ধ্যা
কোরাসের মতো করে তালকিয়া পড়তে পড়তে হোটেলে এসে পৌঁছেছি। হোটেলে পৌঁছে বাথরুমে গিয়ে অজু করে ফ্রেস হয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমাদের হোটেল মিছফালাহ এলাকায়। আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। এই এলাকায় বাংলাদেশী হোটেল রেস্টুরেন্ট দোকানপাট অনেক। আর তুলনা মূলক ভাবে মসজিদুল হারামের সবচেয়ে নিকটবর্তী এলাকা এটি। আমরা পায়ে হেটে নামাযের জামায়াতে শামীল হতে পারব। আমরা যেহেতু কিছু সময়ের মধ্যে ওমরার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে যাব-এতে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে এবং পরিশ্রম ও হবে সেহেতু সামান্য নাস্তা গ্রহণ করব। কিন্তু আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি এ ক্ষেত্রে অনেক হালাল বস্তু ও এই মুহুর্তে আমাদের জন্য হালাল নয়। যেমনঃ সুগন্ধি জাতীয় খাবার আমাদের পরিহার করে খেতে হবে। তাই জুস আর ব্রেড খেয়েছি।
খানিক পরে ছ'তলা থেকে লিফট যোগে নিছে নেমে আসলাম। সাথে নিয়েছি মোবাইল আর ওমরার কার্ড খানা। যেন কোন সমস্যায় পড়লে পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারি। আমরা যেহেতু এখন মসজিদুল হারামের দিকে যাব ওমরাহ পালনের জন্য। সেজন্য আমাদের ভাল ভাবে বুঝে নেওয়া উচিৎ যে, মসজিদুল হারাম যাওয়ার পথে আমাদের আবাস স্থলটি হাতের ডানে না বামে। তা ভাল ভাবে মনে রাখার প্রয়জন। তা না হলে আবাস স্থল হারিয়ে ফেলতে পারি বিধায় সেখান থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ঐ বিল্ডিং এর চার দিক একবার দেখে নিলাম। মনে রাখার জন্য আশ পাশের কয়েকটি বোর্ড ভাল ভাবে পড়ে নিলাম। আমরা যে হোটেলে অবস্থান করছি, তাদেরও কার্ড সাথে রাখলাম। এরে মধ্যম নজরে পড়লো আমাদের সহযাত্রী অনেকেই গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জানতে পারলাম হোটেলের পক্ষ থেকে সব ওমরাহ্/ হজ্জ্ব যাত্রীদের জন্য বাস বরাদ্দ আছে। এদিকে আবহাওয়া উত্তপ্ত বাস হলে মন্দ নয়। হোটেল থেকে বেশি দূরে ও নয়, তবুও প্রথমবার তো তাই বাসের অপেক্ষায় থাকলাম।
সামান্য কিছু সময়ে মধ্য বাস এসে হাজির। চেপে বসলাম বাসে। এদিকে মনের মধ্যে উকিঝুঁকি মারছে অনেক কথা। অন্তর জুড়ে বিরাজ করছিলো আশ্চর্য ধরণের এক অব্যক্ত ভাবনার। আল্লাহর ঘর প্রথম দেখতে পেলে কি সব দোয়া করব। এ সব কিছু ভেবে ভেবে চলেছি। অনেক ভাই ও বোনেরা আত্মীয় স্বজন দোয়া চেয়েছে। কতজনের নাম উল্লেখ করতে পারব আল্লাহর দরবারে!মনে পড়ে অনেকই বলেছে, এ জায়গাতে দোয়া কবুল হয়। খুবই পরীক্ষিত। দোয়া কবুলের জায়গাতে শেষাবধি আমি এসেছি। মনটা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠল। সাথে সাথে মনে হল আল্লাহর দরবারে এসেছি, কোন মুখে যাচ্ছি। জীবনে তো বহু অপরাধ করেছি। আমি তো ‘আল্লাহর কাছে বড় একজন আসামী। গুনাহ মাফ চাইতে যাচ্ছি। গুনাহার মহা সমুদ্র আমার। এদিকে তালিবিয়া পড়তে পড়তে চলছি বাইতুল্লাহর দিকে । আল্লাহর ঘর দর্শন পর্যন্ত এই তালিবিয়া পাঠ চলবে।
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَشَرِيْكَ لَكَ-
‘লাববাইকা আল্লা-হুম্মা লাববায়েক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববায়েক; ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক; লা শারীকা লাক’।
“হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির তোমার সমীপে।আমি হাজির তোমার সমীপে-তোমার কোন অংশীদার নাই। আমি তোমার দরবারে হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রসংশা তোমার জন্য, সকল নিয়ামত তোমার জন্য এবং সকল রাজত্বও তোমারই। তোমার কোন অংশীদার নাই।”
এরে মধ্য গাড়ী থেমেছে রাস্তার এক পাশে। সাবাই নেমে মসজিদুল হারামে প্রবেশের গেইটে পৌঁছলাম। প্রবেশের আগে জুতাটি নির্দিষ্ট বক্সে রাখলাম এবং তার পাশে দেয়া গেইট নম্বর মুখস্ত করে নিলাম। যেন উমরার আনুষ্ঠানিকতা সেরে চলে আসার সময় জুতাটি নিয়ে আসতে পারি।
যাইহোক, প্রবেশের সময় মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়ে নিলাম। প্রবেশ করে আমি মনের আকুলতা নিয়ে শান্তির অন্বেষণে নির্মল সুকোমল একটি পরিবেশের প্রত্যাশায় মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম ঠিক তখনি নজরে পড়ল আল্লাহর ঘর। দরদর করে দু‘চোখ দিয়ে পনি ঝরছে অঝোরে। আমি বুঝতে পারি নি- কোথা থেকে আমার এত আবেগ আর অনুভূতি এলো।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আমিও হজ্ব থেকে এসে লিখা শুরু করেছিলাম কিন্তু এখনো শেষ করতে পারিনি। ইচ্ছে আছে বিস্তারিত লিখার। দোয়া করবেন।
সুন্দর লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মাহে রমযানের লিখায় অংশগ্রহণের অনুরোধ থাকলো।
ইহরাম অবস্থায় খাবার এর বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন কি। আমি তো অনেক হাজির কাছেই শুনেছি আরাফার দিন বা তার আগের দিন সৌদি সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠন এর উদ্যোগে হাজিদের বিরিয়ানি খাওয়ান হয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন