মক্কা-মদিনার স্মৃতি : পর্ব-(৬)
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৪ মে, ২০১৬, ০৮:০১:৫১ রাত
যে কোণ ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য দু'টি প্রধান শর্ত রয়েছে। এর একটি হল-বিশুদ্ধ নিয়্যাত। আর অপরটি হল-রাসুল সা: এর তরিকা বা দেখানো পদ্ধতির অনুসরণ। বিপুল অর্থ ব্যয় এবং শারীরিক কষ্ট আর ত্যাগের ইবাদত হচ্ছে হজ্জ এবং ওমরাহ্। এ ইবাদত আমরা যাতে উপরোক্ত দু'টি শর্তনুযায়ী পালন করতে পারি মহান মায়বুদের দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করি।
আমাদের এসফর দুনিয়ার কোণ চাওয়া পাওয়ার জন্য ছিলনা, বরং কেবল মাত্র আমাদের মালিক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়লাকে রাজী আর খুশী করার জন্য ছিল।
দ্বিতীয়তঃ নবী মুহাম্মদ সা: তাঁর সাহাবায়ে কিরাম রা:-দের নিয়ে যে পদ্দতিতে উমরাহ্ পালন করেছিলেন, আমরা যেন সেই পদ্ধতিতে উমরাহ্ পালন করতে পারি। মহান মায়বুদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।
রাসুল সা: এর তরিকা অনুযায়ী বাথরুমে গিয়ে সাবান দিয়ে ভাল ভাবে গোসল করে, শুকনো টাওয়াল দিয়ে মাথা ও শরীরের পানি উঠিয়ে শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করে, ইহরামের একটি চাদরকে লুঙ্গির মতো করে পরিধান করে ইহরামের কাপড়কে শক্ত করে ধারণ করার জন্য উপরে বেল্ট লাগিয়েছি। এবার বেল্টের পকেটে মোবাইল, টাকা পয়সা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢুকিয়ে ইহরামের অপর চাদর খানা গায়ে পরিধান করে,বাথরুমে প্রবেশ করার সময় সাথে নেয়া সকল জিনিস পলিথিনের ব্যাগে ঢুকিয়ে বাহিরে আসলাম।
বাহিরে এসে হাতের ব্যাগটি বাসের মধ্যে রেখে দিয়েছি। এবার গোসলের পর রয়েছে নামায।পাশেই ছিল মসজিদ। সেখানে গিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করলাম। নামায শেষ করে মসজিদ থেকে বের হয়ে কিবলামুখী হয়ে উমরার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা শর্ত। তাই মুখে উচ্চারণ করে পড়েছি “আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাহ”-যার অর্থ হচ্ছে: হে আল্লাহ! উমরা পালনের জন্য আমি তোমার সমীপে হাজির।
নিয়ত মুখে বলার পর তালবিয়া পড়তে হয় কোরাসের মতো করেঃ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারীকা লাক। এর অর্থ হচ্ছেঃ হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির তোমার সমীপে।আমি হাজির তোমার সমীপে-তোমার কোন অংশীদার নাই। আমি তোমার দরবারে হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রসংশা তোমার জন্য, সকল নিয়ামত তোমার জন্য এবং সকল রাজত্বও তোমারই। তোমার কোন অংশীদার নাই। তবে শুধু পুরুষেরা আওয়াজ করে তালবীয়া পড়ে। মহিলারা নিচু স্বরে পড়ে। এই তালবিয়া পড়া চলে আল্লাহর ঘর চোঁখে দেখা পর্যন্ত। তালবিয়া পড়তে পড়তে মীকাত থেকে আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে বাসে গিয়ে বসলাম।
এই ইহরাম গ্রহণের পর আমি এখন অন্য জগতের এক মানুষ। আমি ভাবনাযুক্ত সাগরতলে ডুব দিলাম যে, আমার সামাজিক অবস্থান এখন কোথায়? আমি বা আপনি কত বিত্তশালী? আমি বা আপনার ক্ষমতার পরিধি কতটুকু? এবার নজর দিলাম আমার শরীরের দিকে, নজর দিলাম আমার আশে পাশের হাজী সাহেবের দিকে। কি দেখলেন বা দেখলাম? দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মাত্র দুইটি চাদরের মালিক আমি। আমি আর আমার পাশের জনের মাঝে কোন পার্থক্য নাই। আমি লক্ষ্য করলাম যে, এই পোষাকেই আমাকে আপনাকে এই ধরণী থেকে চলে যেতে হবে। তাহলে কিসের এতো বাহাদূরী, কিসের এতো বড়াই।
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলামঃ আমি কে? উত্তর এসেছে -আমি একজন দাস, আমার কোন অস্তিত্ব ছিল না, একজন মহান সত্তা তার দাসগিরি করার জন্য আমাকে তৈরী করেছেন। আমি আবর্জনায় ভরা একটি ডাস্টবিন-যে ডাসবিনের ময়লা পৃথিবীর নিকৃষ্ট ময়লা সমূহের একটি-আমি সেই চলন্ত ডাস্টবিন।আমি যেখানে আছি সেখানে আমার অবস্থানের কোন গ্যারান্টি নাই। যে কোন সময় আমার ট্রান্সফার অর্ডার আসতে পারে। তখন আমি সাথে সাথেই প্রন্থান করতে হবে। প্রস্তান করতে হবে শুধু এমন নয়-প্রস্থান করে যেখানে যাব, সেখানে এখানকার একটিভিটিজ এর পংখানুপংখু হিসাব দিতে হবে। জবাব দিয়েই খান্ত হওয়া যাবেনা-আমার জবাব নিপূণ হাতে তৈরী একটি রেকর্ড নামার সাথে মিলিয়ে দেখা হবে। এমনই এক নিরুপায় প্রাণী এই আমি। আমি এখন চলে যাওয়ার পোষাক পরে আমার মালিকের বরাবরে হাজিরা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে তৈরী। তাই বলছিঃ লাব্বাইক-আমি হাজির।
আমি যে মালিকের নিকট হাজির হতে ইহরাম গ্রহণ করলাম, সেই মালিক আমার জন্য হালাল এমন কিছু বিষয় ক্ষনিকের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। আমাকে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে ইহরামকালীন সময়ে নিম্নোক্ত কাজগুলো থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। যেমনঃ
চুল কাটা, নখ কাটা, শরীরের লোম উঠানো, শরীরের কোন অংশ দিয়ে রক্তে বের করা।
শরীর, পোষাক, খাদ্য বা পানীয়তে সুগন্ধি ব্যবহার। কোন ধরণের শিকার করা বা শিকারীকে শিকার দেখিয়ে দেয়া।
স্ত্রী সহবাস করা বা উত্তেজনার সাথে স্ত্রীর শরীর স্পর্শ করা বা চুমু দেয়া। বিয়ে করা বা বিয়ে প্রস্তাব দেয়া বা আকদ করা। হাত মোজা বা পা মোজা পরিধান করা। পুরুষেরা মাথা ঢাকা। যেমনঃ পাগড়ী, ক্যাপ, টুপি ইত্যাদির ব্যবহার।
ইহরামের দুই টুকরা চাদর ছাড়া অন্য কোন পোষাক পরা।মসজিদুল হারামের এলাকার কোন গাছপালা কর্তন করা বা কোন ঘাস মাড়ানো। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে উপরোক্ত নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন।
আমরা ইহরাম পরে মক্কা যাচ্ছি তবে হেরেম শরীফে না গিয়ে হোটেলে উঠবো আগে----------
চলবে-----------
জ্ঞাতব্যঃ এই লেখাটি মুলতঃ "হজ্জ্ব উমরা পদ্ধতি বিষয়ে" আমার আত্মার আত্মীয় পরম আপনজন জনাব নজরুল ভাইয়ের নোট থেকে সংগ্রহ করেছি। আমি তাঁর জন্য মহান আল্লাহ্ তায়লার নিকট দুনিয়া এবং আখেরাতের জন্য কল্যাণ কামনা করছি। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১১২১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আগের পর্ব গুলো পড়া হয় নি,
পড়ে নিব,
ইন শাহ আল্লাহ
পড়ে পরামর্শ দিলে উপক্রিত হব। জাযাকাল্লাহ
এটুকু পড়ে একেবারে কেঁপে উঠলাম -----
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন