মক্কা-মদিনার স্মৃতি : পর্ব-(৫)
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৩ মে, ২০১৬, ০৫:০৭:৩৬ বিকাল
ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট কন্ট্রোলের কাজ শেষকরা হলে বাহিরে এসে বাসের কাছে দাাঁড়ালে দু‘ তিনজন বাংলাদেশিকে সৌদি সিম কার্ড বিক্রির জন্য আসতে দেখা গেল। মূল্য জিজ্ঞেস করলে জানালো ৫০রিয়েল। অবশ্য ‘দশ রিয়েল বেশি দিয়ে কিনতে হয় এখানে। বাইরে এ সিম কার্ডটি ৪০ রিয়েল বিকায়। কারো প্রয়োজন পড়লে এখান থেকেই সৌদি সিম কার্ড নিয়ে নেয় এবং প্রিয়জনদের সাথে কথা বলতে পারে। তবে সিম কার্ড বিক্রেতা ক্লিনার, পেশাগত কার্ড বিক্রেতা নয়।
এদিকে রাত তখন ১১টা হবে। হাইওয়ে রাস্তাসমন্বিত পথে গাড়ী, দূর থেকে কিছু বাতি নজরে পড়লো। আমাদের গাড়ী যাত্রা বিরতি করলেন। প্রথমে সবাই এশার নামাজ আদায় করলেন। নামাজ আদায় করে রাতের খাবারের জন্য খুঁজতে লাগলাম হোটেল রেস্তোরা। আছে কয়েকটিমাত্র। শেষমুহুর্তে বেছে নিলাম পাকিস্তানী হোটেল। হাবিব ভাই আর আমি ভাবলাম ভালো কিছু খাবো। বললাম মুরগীর গোস্ত আর পাঠান রুটি। এত মজাদার রান্না? অনেক কষ্টে ধকল হলো। তবে রুটি গরম থাকায় সাবাড় করা সম্ভবপর হয়েছে। আমি রান্নাবাড়া করতে পারিনা কিন্তু ইচ্ছে হচ্ছিল বলতে আমার কাছে শিখতে এসো। টাকার অংক কিন্তু কম ছিলনা। যেই খানা খেয়েছি গলা বেয়ে নীচে নামতে নামতেই ফুরিয়ে গেছে।
যাইহোক খানিক ক্ষুধা নিয়েই চললাম যাত্রাপথ মাড়াতে। সুনশান পিনপতন নিরবতা বাহিরে তাকিয়ে কোণ কিছু খুব একটা দেখা যায়না। নিয়ন সাইনের আলো রাতের অন্ধকার ভেদ করে দু‘পাশের পাহাড়গুলোর অবস্থান আমাকে জানান দিতে ভুল করে নি। শুধুমাত্র শাঁ শাঁ স্বব্ধ। খানাদানা শেরে অনেকেই ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বিশ্রামরত। কেহকেহ প্রেমানুরাগী মন পরম ব্যাকুলতায় মহান প্রভূর স্মরণে তওবা ইস্তেগফার ও জিকিরের মাধ্যমে নিজেকে তাঁর ধ্যানে নিবিষ্ট ও নিমগ্ন রাখার পরিতৃপ্তির অনুপম স্বাদ গ্রহণ করছে। এদিকে রাতের আঁধার ঘুচিয়ে ধীরে ধীরে নেমে এলো প্রত্যাশিত সুবহে সাদেক। ফজর পড়ে আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম স্নিগ্ধকর প্রভাত জানান দিলো! কি দারুণ স্নিগ্ধতা সকাল!
খানিক দূর থেকে দেখী সতে সতে গাড়ি রাস্তার আশেপাশে পার্ক করা। হাজারে হাজারে মানুষ গিজগিজ করছে। বেশিরভাগ ই সাদা ধবধবে কাপড় পড়ে কেউ গাড়িতে উঠছে কেউবা মসজিদ পানে ছুটে যাচ্ছে। স্নিগ্ধতা মেখে সকাল ১০টায় পৌছাই কাঙ্ক্ষিত মিকাত নামক স্থানে।আমরাও গাড়ি থেকে ধড়ধড়িয়ে নেমে লাগিজ নামিয়ে একটি বড় পলিথিনের ব্যাগে ইহরামের কাপড়, বেল্ট, প্লাস্টিকের সেন্ডেল, সাবান, তোয়ালে, ব্রাশ, পেষ্ট ইত্যাদি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম গোসলের উদ্দেশ্য ।
হয়ত অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে ইহরাম কি? ইহরাম মানে হলো সকল সাধারণ পোষাক ত্যাগ করে দুই খন্ড সাদা কাপড়ের পোষাক গ্রহণ। আর হ্যাঁ! তা কেবল মাত্র পুরুষদের জন্য। মহিলাদের জন্য পাক সাফ সাধারণ পোষাকই ইহরামের পোষাক বলে গন্য। তবে এমন পোষাক, যা পর্দা ও রুচিশীলতা রক্ষা করে। আর পার্থক্য এতটুকু যে, মহিলাদেরকে ইহরাম অবস্থায় মুখ মন্ডল খোলা রাখতে হয়।তবে ইহরামের জন্য নির্ধারিত পোষাক পরিধানের আগে পুরুষ মহিলা উভয়কে গোসল করে পবিত্র হতে হয়। অতএব, মিকাতে পৌছে একজন উমরাহকারীর কাজ হলো গোসল করা। সৌদী সরকার হাজী সাহেবদের সুবিধার জন্য প্রতিটি মীকাতে শত শত বাথরোমের ব্যবস্থা করে রেখেছেন আর সেখানে একজন হাজী সাহেবের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুই পাওয়া যায়।
চলবে.....
বিষয়: বিবিধ
১১৪০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গল্প চলছে চলুক,,,,,,,,,,,
সাথে আছেন থাকুন
চলছে গল্প চলবে
সত্য কথা বলবে।
সাথে থাকার জন্য জাজাকাল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন