দুঃখিনী মা'
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪১:০৯ রাত
সবাই জীবনের দায়িত্ব বুঝে নিতে অপেক্ষায় থাকে,কখন আসবে সেই সময়? একদিন হৃদয়ের বাগানে ভালবাসার লাল গোলাপ দোলা দিয়ে মেহদী রাঙানো হাতে লাল বেনারসি শাড়ী পড়ে বৌ সেজে পার হয়ে যায় জীবন নামের খেয়া নৌকা চড়ে স্বামীর ঘরে।বেশ আনন্দ সুখেই কেটে যাচ্ছিল সংসার।
হাতের মেহেদী তখনো মোছেনি কিশোরী সুমাইয়ার।এমতাবস্থায় খবর পেল তার স্বামীর রক্তাক্ত দেহটি রাস্তায় পড়ে রয়েছে! নববধূর চোখের সামনে স্বামীর লাশ! বধূবেশে মেহেদী রাঙা হাতে ভালোবাসার স্পর্শে স্বপ্নের দুনিয়া সাজাবার আগেই রোড এক্সিডেন্টে স্বামীর মৃত্যুতে তার পরনে জায়গা করে নিল অনাকাঙিক্ষত ভাবে বিধবার সাজ ! দশ মাস পেরুতেই নিশিরাতে শুরু হল প্রচন্ড প্রসব বেদনা।মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল শরীরের প্রতিটি কোষ। হঠাৎ ভুবন কাঁপিয়ে কেঁদে উঠে নবজাতকের কণ্ঠস্বর।সদ্য জন্ম দেয়া নতুন মুখ দেখে মা উথলে উঠে ভালোবাসার প্লাবনে।জন্মের পর থেকে বাবার মুখ দেখে না সন্তান আনাস! কিছুদিনের মধ্যেই কিশোরী সুমাইয়ার মা এসে জানিয়ে যায় তোমার জন্য পাত্র ঠিক করেছি। তুমি কিশোরি বয়সে স্বামী হারিয়েছ। কিশোরী চিৎকার করে কেঁদে বলছে মা' গো। এই দুধের শিশু কি করে বাঁচবে? আর এও বলে দিচ্ছি। অবুঝ শিশুকে নিয়ে সুখেদুঃখে থাকতে চাই জীবনভর।
ভালোবাসার মাতৃত্ব পূর্ণ সন্তান কে আদরযত্ন করে কিশোরী সুমাইয়া স্বামীর বাড়ীতে থাকতে শুরুকরে। আনাসের চাচারা সামান্য কিছু সাহায্য করে। মাঝেমাঝে অন্যের বাড়ীতে থালাবাসন পরিষ্কার, রান্নাবান্নার কাজ করে। রাস্তার পাশে লাউ,শিম, কুমড়োর ঝাড় লাগিয়ে সবজি চাষ করে। আর কষ্টে লাল টকটকে মুখে স্তমিত সন্ধ্যা প্রদীপের ছায়া। তাতে ভেসে আছে প্রতীক্ষা!আদরের সন্তান বড় হবে কখন?
পিতৃশূন্য পরিবারে মায়ের হৃদয় নিংড়ানো সুখেদুঃখে ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে আনাস। অভাব অনটনে মধ্যে দিয়ে একমাত্র সন্তান দুঃখ মাখা মমতার আঁচলে স্বপ্নিল জগতে শৈশব-কৈশোর পেরিয়েছে।
জীর্ণ ঘরে থাকতে হয় মা ছেলেকে। বৃষ্টির পানি অহরহ তো আছেই !
মায়ের স্বপ্ন হল একমাত্র সন্তান মানুষের মতো মানুষ হবে। স্বামী হারানোর বেদনা! কষ্টের সংসারের ঝুট ঝামেলার সাথে সন্তানের লেখাপড়া খাওয়া দাওয়া রোগ-শোক, দুঃখিনী মায়ের নিত্যসঙ্গী।
দুঃখিনী মা শত কষ্টের জ্বলাঞ্জলি দিয়ে আনাসকে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ পর্যন্ত নিয়েছে। দীর্ঘ ১৮/১৯ বছরের তিলে তিলে করে জমানো ভালবাসায়।
আনাস ও মা কে নিয়ে ভাবতে শিখেছে। মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক কাজকাম করে মায়ের হাতে কিছু টাকা জমিয়েছে। সাথের বন্ধুরা প্রায় সকলে বিদেশে। কিছুদিন পরপর বন্ধুরা কথা বলে আনাসের সাথে।
আনাসের মাথায় ও বিদেশে যাওয়ার ভূত ছড়ে বসে। মাকে অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে রাজি করেছে বিদেশ যাবে। দুঃখিনী মাও চিন্তাকরে দেখল, ছেলে বিদেশ গেলে কষ্ট লাগব হবে।৭ দিনের মাথায় দালাল এসে বাড়িতে পাসপোর্ট দিয়ে গেলো।অল্প দিনের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার সব কাগজপত্র প্রস্তুত হয়েছে।
আনাসের মায়ের বিয়েতে পাওয়া দেনমোহরের টাকা ব্যাংকে জমা ছিল।সেই জমাটাকা থেকে কিছু খরচ করেছিল আনাসের পড়ালেখার পিছে। বাকি টাকা ভিটেমাটি বন্দক এবং চাচারা, পাড়া প্রতিবেশীরাসহ জোগাড় করে আনাসের বিদেশের টাকা।
বিদেশ গিয়ে আনাস একেএকে সবার টাকা পরিশোধ করে দেবে কোনো অভাব থাকবে না ৷
যাওয়ার সময় অশ্রুজলে মা মাথা মুছে
দোয়া করে দেয়, আনাস মা কে বলে এবার তোমার দুঃখ যাবে ঘুচে ৷কেঁদো না মা, বিদায় নিয়ে বলে মাগো আসি।
খানিক দূরে গিয়ে পেছন ফিরে দেখে মা কাঁদে ছেলের শোকে। ছেলে আকাশসম স্বপ্ন নিয়ে চলে যায় বিদেশ।
যাওয়ার পরে একদিনে তার কলিজা উল্টে যায়
আশার বাণী শুধানো মন নিমিষে পাল্টে যায়।
ফোন করে কেঁদে কেঁদে বলে কী ভুল করেছি মা, কেন বিদেশ এলাম জীবন-যৌবন,শখ-আহ্লাদ বন্দীশালায় ৷ মায়ের কাছে ফোন করে জানতে পারল মা জননীর বিষণ অসুখ।এদিকে সেও চারমাস যাবৎ কাজ পায়না, যাই পায় থাকা খাওয়ায় চলে যায় এর পরেও মাকে শান্তনা দিয়ে বলেছে মা গো, চিন্তা করোনা টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমার চিকিৎসা হবে। অনেক কষ্টকরে হাড় ভাঙা একটা কাজ পেয়েছে আনাস। বিশ তলার উপর কাজ পেল।দিন মাস ঘুরে বছর গেল হঠাৎ কি হতে কি হল। বিশ তলার উপর থেকে আনাস পড়ে গেল। আনাসের আকাশসম স্বপ্ন আকাশে উড়ে গেল। আশেপাশের সাথীরা এসে দেখে আনাসের রক্তে ভেজা নিথর দেহ পড়ে আছে পাথরের উপর। পাঠাতে হবে কফিন আনাসের বাড়ী। আপন বলতে বিদেশে কেহ নেই। বন্ধুরা মিলে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো কফিন। দুঃখিনী মা'জননী শুনে কেঁদে কেঁদে বলে কোথায় আমার কলিজার বোটা? বিদেশ গেলী সুখের আসায় এখন কোথায় গেলি? মা কাঁদে, চাচা কাঁদে, কাঁদে প্রতিবেশী! দুঃখিনী মা'জননীর কান্না শুনে আকাশ হল ভারী।
৭দিন পরে একটি এ্যাম্বুলেন্স এসে বাড়ীর সামনে দাঁড়ালো। আনাসের মা লাশের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো! কান্না করার শক্তি আগেই হারিয়ে ফেলেছে। দুখিনী মা দাঁড়িয়ে রইলো কোনো টু-শব্দ পর্যন্ত করেনি। দুদিন পরে কলিজার টুকরা সন্তানের শোকে দুঃখিনী মা' ও চলে গেলেন দুঃখ নিয়ে না পেরার দেশে।
বিষয়: বিবিধ
১৮৬১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্র বা স থেকে আমি
ভালো থাকবেন অবিরত
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ
পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানবেন ভাইজান।
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন