প্রবাসীদের সংগ্রামী জীবন. পর্ব--- (৩)
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ১০ অক্টোবর, ২০১৫, ০৭:২৭:৫৩ সন্ধ্যা
স্বপ্নের সাজানো প্রবাস আর বাস্তবের এই প্রবাসের মধ্যে আকাশ পাতা ব্যাবধান।বিষেশ করে আমার এই লেখার সাথে স্বপ্নের প্রবাসের কোন যোগসূ্ত্র নেই। আমার এবং অনেকের প্রবাস জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে অনাখাংখীত হাজারো কাহিনী যা আমার আপনজন দেশবাসী জানেন না, আজ আমি প্রবাসের বাস্তব রূপ দেখাবো ইনশা আল্লাহ্ । প্রথমদিকে ব্যাপারটা বনবাসের মতোই লাগত । একজন প্রবাসী প্রতিদিনই নিত্যনতুন ঘটনার সম্মুখীন হয়, অভিজ্ঞতার ভান্ডারও বৃদ্ধি পেতে থাকে সেই সঙ্গে। এভাবেই কেটে যেতে শুরু করল প্রথম দু’বছর। প্রতিদিন ডিউটি করতে হত সকাল ৭টা থেকে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত। এর মধ্যে সাপ্তাহে প্রতি বুধবার সকাল ৭টায় কাজে জয়েন্ট করাত বুধবার সারাদিন সারা রাত,বৃহস্পতিবার সারাদিন সারা রাত,শুক্রবার সকাল ৯/১০ টা পর্যন্ত ডিউটি করাত। ঘড়ির কাঁটা নিজেই যেন ক্লান্ত হয়ে যেত আমাদের ডিউটির হিসাব কষে।
এই সময়ের মধ্যে শুধু মাত্র খাওয়া এবং নামাজের সুযোগ দেয়া হত।সবার চোখেমুখে তাকালে অজান্তেই কষ্টের নোলা জল চোখেই শুকিয়ে যেত।এই ৪৮/৫০ ঘণ্টা ডিউটি করার পরেও মাঝেমধ্যে শুক্রবার বিকেলবেলা গাড়ি ফ্যা ফ্যা শুরু করতো ডিউটিতে যাবার জন্য। এমন অমানবিক ডিউটি করার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লে, একদিন ডিউটি না করলে তিন দিনের বেতন কেটে ফেলা হত।এ ভাবেই চলতে থাকে প্রবাস জীবনের সংগ্রাম। এই লিখা শুধু আমার একজনের জীবন কাহিনী নয়।এই লেখাগুলো আমার মতো হাজার হাজার প্রবাসীদের প্রতিদিনের কাহিনী, চোখের জল দিয়ে লেখা এই কাহিনী।
এই অমানবিক ডিউটির প্রতিবাদ করলে নেমে আসতো কেন্সেল নামের বিষাক্ত চোবল। এই বিষাক্ত চোবল থেকে বাচার জন্য কেহ প্রতিবাদ করতে যেতো না। নিথর দেহযন্ত্র নিয়েই থাকতে হত।কারণ একটা-ই আমরা বাংলাদেশী বলে কথা! একই ভিসা, একই কাজ। কেহ এসেছে একলক্ষ দিয়ে কেহ দু’লক্ষ দিয়ে কেহো বা আড়াই লক্ষ দিয়ে।এই কাজটি করে থাকে আমাদের দেশের আদম ব্যাপারী।এই আদম ব্যাপারীদের কে প্রবাসীরা যে গালিগালাজ করে, এইটা তাদের পাওনা। যে পরিমাণ পরিশ্রম আর কষ্টের কাজ সেই অনুযায়ী টাকা না পাওয়াটা অমানবিক, মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে লোকগুলোকে নিয়ে আসে তাই মানুষগুলোর ক্ষোভটাও অনেক বেশী। এই অসহায়,মজলুম,মজদুর প্রতারিত মানুষের আহাজারি-কান্না আদম ব্যাপারীদের উপর প্রবাসীদের যে কি অভিশাপ পড়ে ওরা যদি তা বুঝতেন জীবনেও এই মানুষের ব্যাবসা করতেন না।আর যদি ও করতেন সামান্য ব্যাবসা করতেন।এবং মিথ্যাচারীর স্বপ্ন নাদেখিয়ে সৎকাজ করতেন।
প্রবাস জীবনের প্রথম দু’বছর অনিশ্চয়্তার মাঝে কেটে যায়। জীবনের এক একটি দিন রাত বড়ো অবহেলায় অনাদরে কাটে। বুকের মাঝে সমাহীত কষ্ট গুলো বুকের মাঝেই কেঁদে কেঁদে মরেছে। চারপাশে শান্তনা দেবার কেউ ছিলনা। যারসাথে এক দুঃখ কষ্টের কথা বলবো।
এই প্রবাস জীবন শিখিয়েছে কীভাবে কিভাবে আশপাশে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুকেই এড়িয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে হয়।নিরাশার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটা হাতে হাত চেপে, চোখের নোনাজলকে উপেক্ষা করে বলতে শিখেয়েছে, ‘আমি ভালো আছি মা, তোমরা ভালো আছো তো?
কাতার প্রবাসী
চলবে…………………..
বিষয়: বিবিধ
১২১০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে তা পন্ড করা যেতো, আমার মনে হয়ে তা করা হয় নি। এবং ধারণা করা হচ্ছে এর মধ্যে বেশ কিছু লোক কোম্পানীর চামাচা ছিল। না হলে সকলে মিলে লেবার কোর্টে নালিশ করলে এমন অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হতো কোম্পানী। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন