প্রবাসীদের সংগ্রামী জীবন.... পর্ব.২

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৫৬:২৩ রাত



বিমানের জানালার পাশে বসে বাহিরে তাকিয়ে সুন্দর এই পৃথিবী! দেখেছি, বিরাট আকাশের দিকে তাকিয়ে।প্রায় ৩৮ হাজার মাইল উপরদিয়ে মেঘের কোলে ভেসে চলছে ডানা মেলা পাখির নেয় বিমানটি।আর মেঘালয় গুলি তুলুর নেয় বিশাল আকাশদেশে উড়ে বেড়াচ্ছে, রোদ হাসছে ঝিকমিক। কি সুন্দর! কি সুন্দর এই সৃষ্টি! কি বিরাট বিষ্ময়কর এই সৃষ্টি! সৃষ্টির এই সৌন্দর্য উপভোগ করে শেষ করা যায় না। এর সীমা-সংখ্যা গুণে শেষ করা যায় না। বিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণু মেনে চলছে আল্লাহর আইন। এই শৃংখলার কোন ব্যতিক্রম নেই।

যখন কাতার এয়ারওইজ ফ্লাইটটি কাতার ইয়ারপোর্ট ল্যান্ড করল, সবাই যার যার লাগেজ হাতেনিয়ে লাইনে দাঁড়াল। আমি ও তাদের সাথে নামার জন্য প্রস্তুত। যেই গেইটে আসলাম মনে হলো যেন আগুনের লাভা এসে চোখে মুখে লাগছে। দাঁড়িয়েই দেখি খাঁ খাঁ রোদ্র দু’চোখ খোলা যাচ্ছেনা । এমন প্রচন্ড গরম লাগছিল। দ্রুত নিচে এসে এসি বাসে দাঁড়ালাম , বাসটি অনেক দুর ঘুরে নিয়ে এসে ইমিগ্রেশনের গেইটে নামিয়ে দিল।

পুরো যাত্রাটায় যে জিনিসটা নিয়ে খানিকটা টেনশনে ছিলাম সেটা হচ্ছে ইমিগ্রেশন অফিস। যদিও আমার সবুজ পাসপোর্ট, চকচকা একটা ভিসা আছে, অনেকের কাছে শুনেছি ইমিগ্রেশন আমার কাগজপত্র দেখে সন্তুষ্ট না হলে অনুমতি না দিয়েই ভাগিয়ে দিতে পারে এবং এমন ঘটনা অনেকের ঘটেছে ,বাস্তব কিন্তু ভিন্ন ইমিগ্রেশনের কাতারি মহিলা যথেষ্ঠ আন্তরিকতার সাথে দুই এক কথা বলেই সীল দিয়ে মিষ্টি হেসে “ওয়েলকাম টূ কাতার, আমি মুগ্ধ …ইমিগ্রেশন পার হয়ে । ইমিগ্রশন পার হয়ে সামনে এসে দেখি সারি সারি কোম্পানির নামের নেমপ্লেট হাতে নিয়ে বহু লোক দাঁড়িয়ে আছে। একজনের হাতে কোম্পানির নামটা দেখেই তার কাছে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ, ঠিক জায়গায় পৌঁচেছি।

এবার গাড়িটি যখন দোহা সিটি পাড়ি দিয়ে পাথর ঠাশা মুরুভূমির দিকে জাচ্ছিল। মুরুভূমিটা দেখে চমকে উঠি, গাড়িটা চলছেতো চলছেই, আমাদের দেশের বাতাসগুলো ঘুম পাড়ায় আর মরুভূমির তপ্ত বাতাসগুলো ঘুম তাড়ায়। এমন গরম বাতাস গায়ে মেখে পৌছে গেলাম গন্তব্যে।

গন্তব্যে পৌছার সাথে সাথে পিএম এসে হাজির, রিসিভ করেই আমাদের কাছ থেকে পাসর্পোটটি নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফর্মে সাইন দিতে বললো। আমিত অবাক দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকলাম! তখনই ভাবতে থাকলাম কি আছে কপালে!

কিছুক্ষণ পরে বললো তোমরা কেন্টিন থেকে লান্স করে এসো । লান্স সেরে জখনই আসলাম বললো এবার ডিউটি শুরু কর।একি অবস্তা! থমকে গেলাম, বললাম স্যার আমরা কাল থেকে ডিউটি করব! একথা শুনেই সে এমন মুড নিলো………।কিআর করা!

আমাকে নিয়ে গেলো এক লাইনে,আর বন্ধু কাশেমকে অন্য লাইন এ দিল কাজ পরিদর্শনে।ঘন্টাখানিক পরেই পিএম এসে বললো, আমাদের ক্যাম্পে বর্তমানে যায়গা নেই আপাতত তোমাদেরকে ষ্টোর রুমে থাকতে হবে ৩-৪দিনের জন্য। ভাবলাম কি-বা করার আছে। ডিউটি সেরে যখন আমাদেরকে নিয়ে গেল ষ্টোর রুমে, প্রচন্ড গরমের জন্য দাঁড়ান অসাধ্য,ঘুমের তো প্রশ্ন-ই আসেনা। সিকিউরিটি দুইটা ফ্যান এনে দিলো তাতে কি কাজ হয়?

রাত জেগে মনকে প্রশ্ন করা শুরু হল,কেন আপন দেশ/সমাজ ছেড়ে এই কঠিন দেশে আমি! কেন আমি পরিবারকে দূরে ঠেলে দূর প্রবাসকে বেছে নিলাম! ভালবাসা মমতা আজ কোথায় ঠাঁয় পেয়েছে ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে সারা রাত না ঘুমিয়ে কেটে দিতে হল নানান কল্পনা আর স্বপ্ননিয়ে আমাদের দু’জনকে। প্রত্যাক প্রবাসী-ই আকাশ সম স্বপ্ন নিয়ে মায়ার বাঁধনকে মাড়িয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে পাড়ি যমায়। কিন্তু স্বপ্নকে যত সুন্দর করে সহজে সাজানো যায় বাস্তবকে এত সহজে হাতে নাতে ধরে কাছে বসানো যায় না। স্বপ্নের সাথে বাস্তবের এই বিবাদ আজীবন থেকেই চলে আসছে যা অশ্বিকার করার কোন উপায় নেই।অনেকেই আসা পোষান করে চাঁদ-তারা ছুঁইতে, মেঘের সাথে ভেসে বেড়াতে। এগুলা সবই স্বপ্ন, সত্য কিন্তু ভিন্ন কথা বলে।

চাঁদ-তারা ছোঁয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় কারন চাঁদ-তারাকে মানুষের ছোঁয়াযোগ্য করে সৃষ্টি করা হয় নি।এত কিছু জানার পরও মানুষের আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়। তার একটি মাত্র কারন আর তা হলোঃ যাহা লাগালের বাহিরে তাহা নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার একান্ত চেষ্টা আর এরই নাম হল স্বপ্ন। দেশে থাকতে মনে করতাম প্রবাস জীবন কতো না সুখের! কতো না মধুর! কিন্তু বিদেশের মাটিতে পা দেয়ার পরপরই শুরু হল অন্যরকম সংগ্রাম।

চলবে…..

বিষয়: বিবিধ

১২৪৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345075
০৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কি কোম্পানি ছিল ভাই??
এমন ভয়ংকর কাজ!
০৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:২২
286350
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : গার্মেন্টস। আমাদের কে ট্রাভেল বলেছিল ৮ঘণ্টা ডিউটি হবে।
345076
০৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৫০
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : এই কোম্পানিতে এখনো আছেন?
০৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:২৮
286351
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : প্রায় আড়াই বছর চলছিল কোম্পানি। এর পরেই আল্লাহ্‌র অশেষ মেহের বানীতে অচল হয়ে পড়ে। দু'হাজার সালে আসি দু'হাজার ২০০২ তে বন্দ হয়ে যায়।
পরে অন্যত্রে চাকরী নেয়ে আছি আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো অবস্থায়।
দুয়া করবেন। Good Luck
345081
০৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৪৭
আফরা লিখেছেন : জীবন মানেই সংগ্রাম দেশে থাকলে যতটা না বুঝা যায় প্রবাসে আসলে এটা হাড়ে হাড়ে ঢের পাওয়া যায় । অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
০৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:২৯
286352
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : পড়ার জন্য আপুজি কে অনেক অনেক শুকরিয়া।
345120
০৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৩:৫৮
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : সংগ্রামী জীবনের আমিও এক অংশীদার।
১০ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:১১
286474
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ভাইজান লিখা শুরু করেন।
আপনার অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে চাই।
345181
০৯ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
শেখের পোলা লিখেছেন : আমরা সাধারণ মানুষ যারা প্রবাসে আছি,আমরা সখ করে বোধ হয় কেই আসিনি৷ আসতে বাধ্য হয়েছি৷দেশে যদি আমাদের উপার্জনের ক্ষেত্র থাকত তাহলে আসতাম না৷ ৭১এর আগে সাধারন কামলা দিতে কেউ প্রবাসে গেছে বলে শুনি নাই৷সাধের স্বাধীনতাই আমাদের এ কামলা বানিয়ে ছেড়েছে৷
১০ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:১৭
286475
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ।
জ্বি শ্রদ্ধেয় ভাইজান,সাধের স্বাধীনতাই আমাদের এ কামলা বানিয়ে ছেড়েছে৷
আর যাহারা লুটেপুটে খেতে পারে তাদের জন্য দেশই ভালো।
শুকরিয়াজানুন ভাইজান সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File