প্রবাসীদের সংগ্রামী জীবন -পর্ব -১

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৭:৪০:৪৭ সন্ধ্যা



প্রবাসী জীবনের সুখ দুঃখের কথা লিখতে গেলেই মনটা কষ্টে ভরে উঠে।বুকের মধ্যখানে অজানা এক শুন্যতা আসন করে বসে, পুরনো স্মৃতির খাতার প্রতিটি পাতা নতুন করে চোখের সামনে ভেসে উঠে নিজের অজান্তে চোখ থেকে অনাখাংখিত কিছু জল ঝরে পড়ে।আসারদিন আত্মিয় স্বজনরা অনেকেই আসলেন দেখা করতে। অনেকেই গিফট দিলেন সান্তনা ও দিলেন। সবার ঘরে ঘরে গিয়ে বলে আসলাম, এত খারাপ লাগে নাই। ভাই-বোনদের মাথায় হাত বুলিয়ে বাবাকে সালাম দদিয়ে যখন মাকে বলছিলাম “মা” চলে যাচ্ছি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। মাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলাম।কাঁদবো না কেন এই রঙিন পৃথিবী দেখার পিছনে যার সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে সেই মানুষটি আর কেউ নয়। তিনি হলেন আমার প্রিয় মা। এই নামটি সবার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। জন্মের পূর্ব থেকেই যেমনি মায়ের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে তেমনি জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। মায়ের ভূমিকার নেই কোনো জুড়ি।মনি কোঠায় উকি দিচ্ছে বার বার।দিবালকের ন্যায় স্পষ্ট ‘মা’ নামটি অতি ছোট্ট হতে পারে। কিন্তু তাতে রয়েছে অজস্র মধু। কারণ মায়ের মুধুমাখা ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর কোনো ভালবাসার তুলনা হয় না । মায়ের মতো করে কেউ কখনও আদর করে না। কাছে টেনে নেয় না। মা আচল দিয়ে মুখটা মুছে দিয়ে আল্লাহর দরবারে সফর্দ করে দিলেন। অস্রু সিক্ত হয়ে বিদায় নিতে হলো।

সকল প্রতিকুলতা পেরিয়ে এয়ারপোর্ট চলে আসলাম, ইমিগ্রিশনের লাইনে দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি সবার স্বজনী অশ্রুসিক্ত নয়নে গ্লাসের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে। শেষমেশ হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাতে হয়।ইমিগ্রিশান পার হয়ে বোর্ডিং পাশের জন্য অপেক্ষা প্রহর গুনছি, আশেপাশে তাকিয়ে হ্নদয়ের হাহাকার আরো বেড়েছে সবাই অশ্রুসিক্ত। কারো মুখে হাসি নেই।আমারও স্বপ্নের জাল বুনা শুরু মায়ের কথা বার বার মনে পড়ে। ভাবতেই দু চোখ বেয়ে নেমে আসল কান্নার স্রোত। নিজকে সামলাতে চায় । তবুও হয়ে উঠে না। শৈশব, কৈশোরের স্মৃতিগুলো মনে দোলা দিচ্ছে। সবার বড় হওয়াতে আমার প্রতি ভালোবাসা ছিল একটু বেশি। যেমনি আদর, সোহাগ ভালোবাসা ছিল তেমনি মায়ের শাসনের কমতি ছিল না। আজ আমি ছেড়ে জাচ্ছি মাকে দূর বহু দুরে।

বিমানের দরজায় দাড়িয়ে বিমানবালা মিষ্টি হেসে আমাদের স্বাগত জানালেন।বোর্ডিং পাশ দেখে যার যার সীট নাম্বার দেখিয়ে দিচ্ছেন বিমানবালা। আমার সীট পড়লো জানালার সাথে, নির্ধারিত সীটে বসে পড়লাম। বিমানে বসার পর বুকের মধ্যে বিরহের কষ্টের আগুন জ্বলতে শুরু করলো। আল্লাহর দরবারে বলেছি ” ইয়া আল্লাহ আমি কোথায় যাচ্ছি, আমার ঠিকানা কোথায়, আমার জানা নেই, তুমিই পারো আমাকে পৌঁছে দিতে সঠিক গন্তব্যে।” কত কি জল্পনা কল্পনা মনের মধ্যে পীড়া দিচ্ছিল!

এমন জল্পনা কল্পনার মাঝেই চলে আসলো বিমান বালা। প্রথমে টিস্যু দিল মুখ মুছার, কিছুক্ষণ পরেই খানা পরিবেশন করলো। খাওয়ার পরে যাহারা 7up পান করতে চায় তাদেরকে 7up এবং আরো হরেক রকমের ঠান্ডা পানিয় ছিল। আমার সাথে বসা ছিল এক ভদ্রলোক সে বললো কফী দিতে। কফীর চিনি, ধুদ আলাদা, এগুলা মিশিয়ে কফি বানাতে হয়। সে তা জানেনা। সে চিনি না মিশিয়ে পান করা শুরু করে, হা হা হা হা। এখন তার চিন্তা হলো এটা ফেলাও সম্ভব না, কি করা যায়! চারদিকে তাকিয়ে নাকে টিপ দিয়ে ধরে খেয়ে সাবার করল। আমি বললাম কি হল! সে বললো, না এমন এমন করেছি। তার সেই দৃশ্যটি এখন ও আমার মনে পড়ে।

খাওয়া দাওয়া সেরে যখন অনেকেই নিদ্রায় বিভোর । তখন আমি মনকে প্রশ্ন করলাম আমিতো একা নই অগণিত বনি আদম প্রবাসে যাচ্ছে । তারাও তো আমার মত দশটি পরিবারের, বেঁচে থাকার এবং ভালো থাকার জন্য, পরিবার পরিজন নিয়ে এক চিলতে হাসি ভাগাভাগি করে একই ছাদের নিচে হাতে হাত রেখে সুখে দিন যাপনের স্বপ্ন দেখছে। আমিও তাদের একজন!!

চলবে……………….

কাতার প্রবাসী .................

বিষয়: বিবিধ

১৭৯১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344694
০৬ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো চলতে থাকুক। তবে ভাই আমরা কেন এখন নিজের বাড়ির জন্য এমন চিন্তা করি বুঝিনা? কালকে বাংলার ইসলাম প্রচারক সুফি দের নিয়ে লিখা বই পড়লাম। এরা শুধু ইসলাম এর জন্য সুদুর আরব,তুর্কি থেকে এখানে প্রবাসি হয়েছিলেন। তাদের সাথে অন্য মানুষরাও এসেছিলেন। ইবনে বতুতা তৎকালিন মুসলিম গ্রানাডায় ভারতিয় মানুষের সাথে পরিচিত হন যার ভাই এর সাথে তার ভারতে এসে পরিচয় হয়।
০৮ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:০১
286274
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ভাইজান, আপনার মন্তব্যে সাথে দ্বিমত করার সুযোগ নেই।
তবে আমরা যাহারা প্রবাসে পাড়ি দিয়েছি তারা পরিবারের ভরণ পোষণকারী হিসেবে। সাথে অনেকেই যথাসাধ্য চেষ্টা করি দ্বীনের উপর টিকে থেকে দ্বীনের দাওয়াতি কাজ করতে।
দুয়ার প্রত্যাশায় থাকলাম।
344716
০৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:০০
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : সংগ্রামী জীবন ব্লগে লিখা শুরু করেছেন ভালই হলো ,,ধন্যবাদ
০৮ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:০২
286275
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আশাকরি সাথেই থাকবেন।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
344720
০৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:০৬
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ।

চলুক......
০৮ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:০৪
286276
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম,শ্রদ্ধেয়া আপুজি।
আশাকরি সাথেই থাকবেন।
344732
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৫:০৬
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : সাথে আছি।
০৮ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
286279
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ধন্যবাদ প্রিয়ভাজন। আশাকরি সাথেই থাকবেন।
344958
০৮ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৫:৫১
শেখের পোলা লিখেছেন : প্রবাস হল জেল খানার মত। চলুক৷সাথে আছি৷
০৮ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:০৭
286282
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ।
জ্বি শ্রদ্ধেয় ভাইজান, দেয়াল বিহিন জেলখানা।আসাকরি সাথেই থাকবেন।
345148
০৯ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:৩৭
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : প্রবাসের কষ্টময় অনুভূতি গুলো শেয়ার করতে যাচ্ছেন- সাথে থাকছি, ইনশাআল্লাহ্।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File