Rose Good Luck সুযোগ পেলেই স্মৃতির মধ্যে ডুব দেই। Rose Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ১১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৪৪:১৮ রাত



কাতারে প্রবাস জীবন পার করলাম ১২টি বৎসর। এর মাঝে হারিয়েছি অনেক। পেয়েছি অনেক না পাওয়া কিছু।এত চমৎকার দিনগুলো ছেড়ে প্রবাসে। ছবির মত সুন্দর বলতে যা বোঝায় ঠিক সে রকম একটি গ্রামে আমার ছেলেবেলাটা কেটেছে। গাঁয়ের ধুলো মাটি মেখে বড় হয়ে ওঠা। গ্রামের দক্ষিণ দিকে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদী, ছোট নদীটা সাপের মতো এঁকেবেঁকে গ্রামের দক্ষিণ দিয়ে বয়ে গেছে। জোৎস্না রাতে নদীর পানিতে যখন চাঁদের আলো পড়ত, অদ্ভুত মায়াময় এক পরিবেশ তৈরি হত। মনে পড়ে দেশে থাকতে সকালবেলায় ঘুম ভেঙ্গে মায়ের মুখ দেখে চোখ খোলা। ভোর বিহনে কাক কুকিল চড়ুই কবুতরের ছন্দের সাথে আহ্বান। সূর্য্যিমামার সাথে সাথে নিজের শিতের পিঠা খাবারের প্রস্তুতি।বিকালে বাসায় মা বাবা ভাই বোন ছোট ছোট বাচ্ছাদেরকে নিয়ে ঝাল মুড়ির আয়োজন। কখন ও বাজারে গিয়ে ইস্কুলের মাঠে খেলা করা। বৃষ্টিতে ভেজা ছিল দৈনন্দিন ব্যাপার, ঘরের চালে টুপ টাপ আম পড়লেই হল, দে ছুট ! এক ছূটে আমতলায়, বন্ধুদের সাথে কাড়াকাড়ি করে কখনো ভাগাভাগি করে খাওয়ার আনন্দটা আজও মনে ভাসে।



একদিন আজান দেয়ার সময় শামনেই পরলো ফাকা আম ইয়া বড় লোভ শামলাতে পারলামনা, আজানরত আবস্তাই তুলে নিলাম, আমটা ছিলো আমার মুজিবুর চাচার গাছের, আমার চাচিজান এখনো বলে এবং হাসে আমাকে নিয়ে। শীতের সময় খেজুরের রস ছিল অন্যতম আকর্ষণ। শহর থেকে আত্মীয় স্বজন মৌসমি পাখির মতো আসা শুরু করত গ্রামের বাড়িতে। আমাদের রাস্তার পাড়ে সাড়ি সাড়ি খেজুর গাছে ঝুলে থাকা হাঁড়ি থেকে খেজুরের টাটকা রস খাওয়া কিংবা রাতে খেজুরের রসের পায়েশের স্বাদ কতকাল পাইনা । আমাদের ছাড়া বাড়ীতে পিকনিক (ছোটোকালে যেটাকে বলতাম জোলাভাতি) ছিল আমাদের প্রতি বছরের বিনোদন। আজ ক্ষণে ক্ষণে মন চলে যায় সেই ছোট বেলার খেলায় ।সাদা সাদা বকের ঝাঁক আর বালি হাঁসদের নিত্য আনাগোনা। আমাদের বাড়ির সামনে খেজুর গাছগুলা আজ আর নেই, ওই গাছগুলাকে ঘিরে আমার কত স্মৃতি !



বর্ষায় গাঁয়ের চারিদিক পানিতে থৈ থৈ করত। রাস্তার পাশদিয়ে মাছ দেখা যেত, ফসলি জমি সব তলিয়ে যেত, চারিদিকে শাপলা শালুকের মেলা বসতো। বন্ধুরা মিলে কলা গাছের ভেলা বানিয়ে চলে যেতাম দূরে, বহু দূরে। শাপলা তোলার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতাম। আমার চাচাতো ভাই ঈমাম হোসেন, জাহাঈির, মানিক,নুরুল আমিন, ছাইফুদ্দিন, মোহসিন, মুনির হোসেন, আমির হোসেন , হারুন, হাফেজ মাসুদ ভাই তারা মিলে । আহা! কি চমৎকার দিন ছিল সে সব ! গাঁয়ের মধ্যে রয়ে গেছে আমার কত স্মৃতি কাহীনি। অনেক কিছু আজো আমাকে কাঁদায়। ভাবায় আমি কি আর হৈ-হুল্লুড় করতে পারবো বাড়ির পাশে জমে ওঠা বন্দুদের আড্ডায় । আজ শুধু অপেক্ষা করে থাকি কবে পাইব ছুটি কখন দেখবো আমার গাঁয়ের সেই হাসি মুখ। আবার কখন আড্ডা জমবে পুকুর পাড়ে বাঁশের ছায়ায়।



সত্যি যে সময়ের ব্যবধানে মানুষ কত কিছু দুরে রেখে চলে আসে। পরিবারের সকলের সুখের জন্য চলে যায় বহু দুর নিজ বাসস্থান ছেড়ে। আল্লাহ এই এক অপরুপ সৃষ্টি পৃথিবীতে আমরা আছি প্রশ্ন করি নিজেকে দেশে গেলে কি পারবো আগের মতো পিকনিক খেলতে! কলার ভেলা বানিয়ে ঘুরতে। এখন কি আর সেই সময় আসবে যে আবারো শাপলা তোলার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতে ! আমি এখনো খুঁজে বেড়াই আমার কিশোর বেলার হারিয়ে যাওয়া এক টুকরা নীল আকাশ। কোন উদাস ক্ষণে সুযোগ পেলেই স্মৃতির মধ্যে ডুব দেই। কি নেই সেখানে! কচি ধানের শীষে কিংবা ঝিঙে মাচায় ফড়িঙের ওড়াওড়ি, উদাসি কুকিলর শুর, মনের সুখে ছোট্ট পাখি টুনটুনি’র এ গাছ থেকে ও গাছে লাফালাফি ! ভোরের সবুজ ঘাসের বুকে স্বচ্ছ শিশির বিন্দুর উপর নরম রোদ পড়ে চিকচিক করে ওঠা । এখন সেই বন্ধুরা সবাই যে যার মত ব্যস্ত! চাকরি-ব্যবসা, সংসার-ছেলে-মেয়ে প্রবাস জীবন নিয়ে! আজ আমাদের সময়ের বড় অভাব! তাই স্মৃতি হাতড়ে আতিপাতি করে খুঁজে বেড়াই সেই মুহুর্তগুলোকে ! ভাবতে ভাল লাগে, ঘোর কেটে যায়, আমি ফিরে আসি বাস্তবে।



লেখকঃ কাতার প্রবাসী

বিষয়: সাহিত্য

২৩৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File