কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায়, যাকাতের টাকা নিতে এসে ডুকতে পারেনি বাসায়।
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০২ আগস্ট, ২০১৪, ০১:৫৪:৪৪ রাত
প্রতি ঈদ এর মত এবারো ফ্যামিলির সবাই মিলে ঈদ ভ্রমনে বের হয়েছি ।
বরাবরের মতই এবারো আব্বু ড্রারাইভার,আমি পাশের সিটে (হেল্পার) ,মা আর ছোট বোন পিছনে ।
এক আত্মীয়ের ফোন উনিও আমাদের সাথে ঘুরবেন,উনাকে খিলখেত থেকে নিতে হবে । মাঝ পথে ব্রেক,গাড়ি থামল খিলখেত বাস স্টেশনে । যেহেতু আমার আত্মীয় সেহেতু উনি বাঙ্গালী । আর বাঙ্গালীর ৫ মিনিটে আসতেছি মানে ৫*৫=২৫ মিনিটে ঘর থেকে বের হইতাছি।
তো অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না।এই সময়ে আমি ড্রাইভিং এর খুঁটিনাটি শিখতেছিলাম।
হঠাত একটা লোক গারির গ্লাসে নক করলো ।আমি তাকালাম দেখলাম একটা পুরুষ । দেখতে ভাল তবে গরিব তা দেখে ই বুঝা গেল । চেহারা দেখে বুঝলাম খুব ক্লান্ত আর উদ্বিগ্ন ।
গাড়ির গ্লাস নামাতেই "ভাই এখান থেকে নবিনগর কত কি.মি ?"
উত্তর হবে আরো ১৫-২০ কিলো ।
"ভাই মহাখালি থেকে হাইটা এখানে আসতে যে সময় লাগছে,নবিনগর ও কি অতো টুকু লাগবে?"
হুম এমনি হবে।আব্বু নিচে তাকিয়ে চিন্তা করে বল্লো না একটু বেশি লাগবে ।
কিন্তু লোকটা ততোক্ষণে চলে গেছে ।
আমরা দু জনেই অবাক হয়ে সামনে তাকালাম ।লোক টা হেটে এসেছে!!দেখলাম লোকটা চলে যাচ্ছে।রাস্তা পার হবে আর কাঁদছে।
আব্বু লোক টাকে ডাক দিল।সাথে আমিও ডাকলাম।
লোকটা এলো।
আব্বু প্রশ্ন করল কি হয়েছে?কাদছ কেন?
বাড়ি কই?
প্রথমে বলতে চায় নি তারপর বললো,
বাড়ি কুষ্টিয়া। ঢাকায় আসছে ঈদ এর আগের দিন,উদ্দেশ্য যাকাতের টাকা নেওয়া।গন্তব্ব্যস্থল আপন চাচাত ভাই এর বাড়ি মহাখালি।
উদ্দেশ্য ছিল চাচাতো ভাই এর কাছ থেকে যাকাতের টাকা নেওয়া।
তো টাকা নিছেন? আব্বু বলল।
উনি বল্লেন ভাই টাকা তো দুরের কথা ভাবি আমাকে বাসায় ডুকতে দেয় নি।ভাই ও দারোয়ান দিয়ে বের করে দিয়েছে,আমাকে চিনে না।
ভাই কি করে?থাকে কই?নাম কি?
ভাই বিশাল বড়লোক।মহাখালিতে বারি আছে।ক্যামিক্যল এর বেবসা করে। নাম ___।নাম টা বললে অনেকেই চিনবেন।খুব নাম করা ব্যবসায়ী ।
তো টাকা দেয় নাই?
না ভাই দিল না।ভাই রে এতো কইরা বল্লাম রাত টা থাকতে দিতে কিন্তু বাসায় ই ডুকাল না।রাস্তায় ছিলাম গেট এর সামনে।ভাই রাস্তায় ছিলাম দুক্ষ নাই কিন্তু ভাই কালকে এতো বড় একটা ঈদ এর দিন গেল ভাবি আমাকে কিছু খাইতে দিল না।ভাই এক গ্লাস পানি দিলেও দুক্ষ থাকতো না।আরো বলল - আসার সময় বল্লাম আমার যাকাত লাগব না আমাকে শুধু আমার যাওয়ার খরচ তা দেন আমি যাইগা।ভাই আমারে তাও দিল না।অপমান কইরা বের কইরা দিছে।
কথা গুলা বলার সময় আমি লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।উনার মুখে শুধু এক খন্ড ক্রোধ আর মানুষ রূপি জানোয়ার গুলোর উপর এক আকাশ পরিমান ধিক্কার দেখতে পাচ্ছিলাম।
লোকটা এটা বলে ই চলে যাচ্ছিলো।
আবারো ডাক দিলাম।
আব্বু বল্লো তোমার কাছে টাকা নেই?
ভাই ভাড়া দিয়া আইসা ১৫ টাকা ছিল।দুই দিন না খাইয়া ছিলাম তাই ঈদ এর দিন সন্ধায় রুটি আর কলা খাইছি।আর টাকা নাই।
ঈদ এর দিন কথা টা বলতে গিয়ে এবার উনি কেদে ফেল্লেন।
আব্বু সব শুনে আসলেই কষ্ট পেলেন।
আমিও শুনছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম মানুষ কত টুকু বিবেকহীন হতে পারে।কত টুকু মনুষ্যতহীন হতে পারে।ভাবতেই নিজেরো খুব রাগ হচ্ছিল। কখন যে এক ফোটা জল চলে এসেছে নিজেও জানি না।
সবশেষে আব্বু কিছু টাকা দিলেন যদিও উনি নিতে চাচ্ছিলেন না,বলছিলেন আপনাকে চিনি না......
এবং উনার যাওয়ার বেবস্থা করে দিলেন ।
***********************************************
এলেখাটি আমার না, আমার একেবারে নিকটতম আত্মীয়ের ফেসবুক থেকে আপনাদের সামনে নিয়ে আসা।
এখন আপনারা বলুন ! মানুষ এত খারাপ হয় কি করে??
বিষয়: বিবিধ
১৫৮১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাইয়া অনেক অনেক ধন্যবাদ বিবেক নাড়া দেয়া ঘটনাটা শেয়ার করার জন্য ।
আল্লাহ নাকরুন তার সামনের প্লেটের খাবার কোন দিন বন্দ হয়ে যায়...........
আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন