দেশের ঈদ আর প্রবাসের ঈদ।
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ২৯ জুলাই, ২০১৪, ০৩:১৭:৪৫ রাত
দেশের কিংবা প্রবাসের ঈদের আনন্দ সত্যিই অন্যরকম।পরিবারের সবার সাথে ঈদ করার মজাই আলাদা।কিন্তু সেই সুযোগ বা সূবিধা বঞ্চিত প্রবাসীরা। দেশের ঈদ আনন্দ আর প্রবাসের ঈদ অনেকটাই ভিন্ন ধরনের। দেশের ঈদ হচ্ছে আনন্দ ভাগাভাগির, আর প্রবাসের ঈদ হচ্ছে একদিন দু"দিনের ছুটি,ঘুম আর ঘুম। দেশের ঈদ আনন্দ প্রবাসীরা কি রকম মিস করে তা দেশের মানুষ কোন সময়ে অনুভব করতে পারবেনা, বা বুঝতে চায় ও না!
ঈদের দিনে খুবই মনে পড়ে সেই সব সময়ের কথা যা জীবনে আর কখনো ফিরে আসবেনা, গ্রামের ঈদ আনন্দ, আকাশের কোণে বাঁকা চাঁদটা যখন হাসিমাখা মুখ দেখে বাড়ীর দিঘীর পানি কিংবা দুষ্টু ছেলের দল হৈ-হুল্লুড় নিয়ে ব্যস্ত থাকে তখনি বুঝা যায় ঈদের সাজ সাজ রব। ঘড়ির কাটার মতো টিক টিক করতে থাকে অপোর প্রহর। আর কিছুণ পর পর মাথার উপরের মস্তবড় আকাশপানে তাকানো চাঁদ উঠলো নাকি এইতো ঈদের পূর্বমূহুর্ত। এই দৃশ্য দেখে বাচ্চাদের সাথে-সাথে রঙিন মনের মাঝিরাও হারিয়ে যেতে যান সুখের অথৈ সাগরে। আমাদের মা-বোনেরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন পিঠা-পায়েশ নিয়ে।
প্রাথমিক শিক্ষায় বাল্যপাঠ্য বইএ সবাই পড়েছিলাম আজ ঈদ মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ। মদিনার সেই আনন্দ লেগে থাকে প্রতিটি গ্রাম পাড়া-মহল্লায়। লেগে থাকে শহুরে জীবনেও। তবে গ্রামের মতো শহুরে ঈদের এতো আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়না। তাই শহরের লোকেরাও মা-বাবা কিংবা পড়শিদের সাথে ঈদ করতে ছুটে আসেন গ্রামের বাড়িতে। আর গ্রামের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই মেতে ওঠে রাজ্যজয়ের আনন্দে। রাত জেগে চাঁদ দেখা। এঘর-ওঘর বেড়ানো। এটা হয়ে যায় ঈদ পূর্ব আনন্দ।
রাত জেগে ভোরের প্রত্যাশায় কান সজাগ রাখা। কখন যে ভোর হবে আর কার আগে কে ঈদের গোসল করব এ নিয়ে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকত। আগে গোসল করতে পারলেত আর কথাই নেই। সেই সাথে আছে বাড়তি কৌতুহল! কতোবার যে পুকুরে লাফিয়ে পড়ে নিজেই প্রথম হয়েছিলাম।
ঈদের গোসল শেষে খেতে হতো মায়ের হাতের বাহারি ধরণের পিঠা আর সেই সাথে সেমাই পায়েশ। পরিবারের পুরুষ যারা সবাই মিলে ছুটতাম আমাদের ঈদগাহে। ঈদের নামাজ শেষে শুরু হতো কোলাকুলি। নেমে যেতো আনন্দের বন্যা। মনে হতো এমন যেন প্রতিদিন হয়। আমরা সবাই যেন প্রতিদিন খুশিতে মেতে ওঠি। কোলাকুলি পর্বের পর বন্ধুদের নিয়ে ফিরে আসতাম বাড়িতে। কখনো তাদের সাথেও যেতাম তাদের বাড়িতে। দুপুরটা কেটে যেত একান্ত ভাললাগার কিছু নিয়ে। আর বিকাল হলেই আনন্দটা বাড়তি।
আর এখন প্রবাসের ঈদ হচ্ছে কর্মব্যস্ত অন্যন্য দিনের মতই শুরু হবে। ভোর চারটায় গোসলের পর ফজরের নামাজ ও ঈদের নামাজের প্রস্তুতি। আর নামাজের পর'ই শুরু হ্য় প্রবাস জীবনের সবচেয়ে অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘুম, টানা ঘুম চলতে থাকে দুপুর ঘড়িয়ে বিকাল পর্যন্ত,অবশ্য অনেকে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি না দিয়ে ফোনে আপনজনের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য, শুরু হয় ভাব বিনিময়ের এক মহাক্ষন, আলাপ শুরু হলে আর শেষ হয়না, আপন মনে লুকানো দুঃখ/কষ্ট কাউকে বুঝতে না দিয়ে মা, বাবা সহ আপন মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ শেয়ার করে যান হাজারো প্রবাসী। কারন প্রবাসীর কষ্ট প্রবাসী ছাড়া কেউ বুঝবেনা।
ঘরমের কারনে অনেকেই বাসা থেকে বের হননা, তাই বিকাল বেলায় সবাই ছুটে যান বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য, আড্ডা চলতে থাকে মধ্য রাত পর্যন্ত।
কাতারের ন্যাশনাল এলাকায় স্বজনবিহীন বাংলাদেশীর উপস্হিতি দেখলে মনে হয়না আমরা প্রবাসে আছি।
তারপর ও শূন্যতা পূরন হয়না, মন মানেনা, মনতো পড়ে থাকে সেখানে, যেখানে আপন মানুষগুলো একসাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতে ব্যস্ত।
এই উপলব্ধি গুলো আমার একার নয়, যেনো এখানকার সব প্রবাসীদের কথা। এই কষ্ট গুলো দেশের মানুষ বুঝবেনা। দেশের স্বজনদের কাছে প্রবাসী মানেই টাকার গাছ। শুধু স্বজন কেনো আমাদের সরকার ও তো তাই মনে করে। কিন্তু কেউ একাবারও চিন্তা করেনা কেমন আছে এই প্রবাসীরা।
যাইহোক, দেশে কিংবা প্রবাসে যে যেখানে আছেন সকলের ঈদ হোক আনন্দে পরিপূর্ণ। আর সবাইকে এই দূর প্রবাস থেকে যানাচ্ছি ঈদ মোবারক।।
বিষয়: বিবিধ
২২১৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রবাসীর নিরানন্দ ঈদের খুশী !!
মহিমান্বিত বরকতময় এই দিনে গাজাসহ বাংলাদেশ
ও বিশ্বের সকল মুসলিমদের শান্তিও কল্যাণ কামনা করছি ।আপনাকে ঈদ মোবারক!
আর আপনার ভাবী পান্জাবী আর লুংগী কনে রেখেছে। তবে দেশের থেকে এক চাচাত ভাই আসার কথাচিলো আসতে পারে নাই তাই.............।
মহিমান্বিত বরকতময় এই দিনে গাজাসহ বাংলাদেশ
ও বিশ্বের সকল মুসলিমদের শান্তিও কল্যাণ কামনা করছি ।আপনাকে ঈদ মোবারক!
ধন্যবাদ স্মৃতিময় পোস্টটির জন্য্
ও বিশ্বের সকল মুসলিমদের শান্তিও কল্যাণ কামনা করছি ।আপনাকে ও ঈদ মোবারক!
মহিমান্বিত বরকতময় এই দিনে গাজাসহ বাংলাদেশ
ও বিশ্বের সকল মুসলিমদের শান্তিও কল্যাণ কামনা করছি ।আপনাকে ঈদ মোবারক!
ও বিশ্বের সকল মুসলিমদের শান্তিও কল্যাণ কামনা করছি ।আপনাকে ও ঈদ মোবারক!
রইলো ঈদের শুভেচ্ছা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন