দু"জনকেই সমান দেখাবে।- বিয়ে-
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:১৮:৪৫ দুপুর
কয়েকদিন বসেছিলাম বিয়ের গল্প লিখতে । খালি ব্যর্থ মনে হল। কিভাবে লিখব খুঁজে পাইনা। তার পরও 'দু'কলম এক প্রবাসীকে নিয়ে লিখা। এক প্রবাসী সকালে ঘুম থেকে উঠে এসে বরাবরের মতই বন্ধু/সহকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করে ডিউটিতে যোগদান । খানিক পরেই চা নাস্তা সেরে যখন ব্যাস্ত সময় পার হচ্ছিল এমন সময় মুনিব ভাই এসে হাজির, হাতে চিঠি নিয়ে। চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখে প্রবাসীর মায়ের লেখা । সবার সামনেই খুলে পড়ে নিলো । চিঠিতে লেখা ছিল, ওকে দেশে যেতে হবে। যাবার সময় স্বর্ণ অলংকার নিয়ে যেতে হবে। ওকে নাকি বিয়ের পীড়িতে বসতে হবে। ।
যা'হোক, চিঠি পেয়ে দুশ্চিন্তার ঝড় বইতে শুরু করলো প্রবাসীর । কারন কনে দেখা, বিয়ের জাকজমক অনুষ্ঠান, বিয়ের কেনাকাটার জন্য হাতে র্পযাপ্ত টাকা নেই। রাত জেগে চার রাকাত নামাজ পড়ে সিদ্বান্তে পৌছলো , ওর মাকে বলবে এখন গরম কাল। দেশে কারেন্ট থাকেনা এ বলে আরো পাঁচ "ছ" মাস পরে আসবে দেশে। ওর মাকে রাজী করানো গেল। আর ভাবতে শুরু করলো শীতের দিনে গেলে ভালো হবে। শীতের দিনে বিয়ের অনুষ্ঠানটা করলে মনের মধ্যে অন্য রকম আমেজ তৈরি হবে। আর তাছাড়া শীতকালে শশুর বাড়ীর ভারী খাবার খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা যাবে মনের মত।
তার মাকে বলে দিলো মা আমার জন্য এমন পাত্রী দেখবেন, যার মধ্যে পাবেন আমাদের পরিবারের সবার মনের মতো, সবাইকে আপন করে নিতে পারবে। মা আমি এক জন দ্বীনদার জীবন স্বাথীকে পেতে চাই। প্রবাসীর অনুমতি পেয়ে তার বাবার ছোখে ঘুম নেই, শুরু হল কনে দেখা। ঘরের বড় ছেলেকে বিয়ে করাবে। আসতে থাকলো ঘটক চাচারা । অনেক যায়গায় দেখা - দেখি হচ্ছে । প্রবাসী জানিয়ে দিলো আপনারা দেখে শুনে ৪/৫ যায়গায় সিলেক্ট করে রাখবেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হলো মা গিয়ে দেখবেন অবশ্যই মা'র পছন্দ হতে হবে।
প্রবাসী২০০৫ সালে দেশে চলে আসলো । নতুন সংসার শুরু করবে বলে এ স্বপ্ন নিয়ে। কয়েক জায়গায় কনে দেখা হলো, কোথাও পছন্দ হয়না। একদিন এক ঘটক তার বাবাকে নিয়ে গেল অন্য একখানে। ওখান থেকে আসার পর প্রবাসীর আম্মু জিজ্ঞেস করল ওখানে পছন্দ হয়েছে কিনা? প্রবাসীর বাবা বললো সকবিছুই ভালো লেগেছে তবে পাত্রি লম্বা ! প্রবাসীর মা উত্তরে বলল সমস্যা কোথায় সবই যদি পছন্দ হলো, বিয়ের পর বউকে বলব রাস্তার নিচে দিয়ে হাটতে, আর আমার ছেলেকে বলব রাস্তা দিয়ে হাটতে ।দু"জনকেই সমান দেখাবে । এ কথাটি সারাজীবন মনে থাকবে।
এবার প্রবাসীর বিয়ে ঠিক । বিয়ে নাকি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিয়ে জীবনে একবারই নাকি হয়। আর এই বিশেষ অনুষ্ঠানটিকে ধুমধাম করে পালন করতে চায় সবাই! বিয়ে নিয়ে নাকি দুই পরিবারই আত্মীয়-বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী সবাই উন্মুখ হয়ে থাকেন নবদম্পতিকে শুভকামনা জানাতে। কিন্তু সবাই কি এমনিতেই চলে আসবে, তাদেরতো দাওয়াত পাঠাতে হবে।তাই প্রবাসীর ছোট ভাইদের দৌড়ঝাপ শুরু । কেহ র্কাড ছাপাবে আর কেহ র্কাড নিয়ে যাবে। যাতে বিয়ের দিন আত্মীয় সজনদের মধ্যে কেউ যেন বাদ না পড়ে।
প্রবাসী কাদা মাটি ঘেরা গ্রামের হওয়ার সুবাদে কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান করতে হয়নি। ঘরের সামনের আংগীনাতেই ডেকরেটরের স্টেজেই গায়ে হলুদ হয়েছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা গিত কৌতুক হই হুল্লুড়, চিৎকার , অনেক মজার অনুষ্ঠান চলছে। আর প্রবাসীর হাতে মেহেদীতে স্বপ্নে বিভোর হয়ে বলছে আজ আকাশ ভরা তারার মেলা ঊষার কোলে আলোর উজ্বালা । আহা! কি অপরূপা জীবন।
বিয়ের দিন সবাই হাজির, বরকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে হই হুল্লুড় চলছে। কেহএসে কানে কানে পিষ পিষ করে কি যেনো বলছিলো। এরা সবাই প্রবাসীর কাছের বন্ধু। সাজ-গোজ শেষ । এবার প্রবাসীর মাকে বলা হলো মুকুট পরিয়ে দিতে। তার মা মুকুট পরিয়ে খুশিতে অস্রু সিক্ত হয়ে পড়লো।পরে প্রবাসীর মা-বাবা দোয়া করে দিলেন। চলে গেলেন বিয়ের পীড়িতে বসতে।
প্রবাসীদের ওখানে কিছু রেওয়াজ আছে : যেমন-বরের ভাবী ও অন্য যুবতী মেয়েরা বরকে সমস্ত শরীরে হলুদ মাখিয়ে গোসল করিয়ে দেওয়া ,বর ও কনেকে হলুদ বা গোসল করতে নিয়ে যাওয়ার সময় মাথার উপর বড় চাদর এর চার কোনা চার জনের ধরা , বিবাহ করতে যাওয়ার সময় বরকে পিড়িতে বসিয়ে বা দাড় করিয়ে দুধ-ভাত খাওয়ান ।প্রবাসী আগেই বলে দেয়ার কারনে এই নির্লজ্জ কাজ গুলি থেকে আল্লাহ ওকে রক্ষা করেছেন ।
এভাবে চলেগেলো প্রবাসীর বিয়ের প্রায় ৯ বছর।এখন তার ঘরে আল্লাহ দুটি ছেলে সন্তান দান করেন। সকলে তাদের জন্য দোআ করবেন।
বিষয়: বিয়ের গল্প
৩৯৮৯ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মু-নূরনবী ভাইদের জন্য বউ ঠিক করার কথাছিলো। তার খবর কি,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
লেখা এবং বিয়া দুইটাই।
ধন্যবাদ আপনাকে আমার বাড়ী আসায়।
জ্বি গিয়েছি ।
অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে মূল্যবান পোস্টি করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইজান।
আচ্ছা এবার বলেন কেমন আছেণ।
আর আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও মুবারকবাদ। ভালো থাকবেন অবিরত সেই কামনাই করি রবের দরবারে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন