ঈদের স্মৃতিরা উঁকি দেয় মনের অলিতে গলিতে
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৫ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:২৩:৩৬ সন্ধ্যা
ঈদের দিনের কথা মনে হলেই নিজের অজান্তেই স্মৃতিরা উঁকি দেয় মনের অলিতে গলিতে, মনটা হারিয়ে যায় সেই সোনালী দেশে। লুহিত সাগর ডিঙ্গিয়ে এ ধুসর মরুদ্যান পাথরে ঠাসা এই দেশ ছেড়ে মনটা চলে যায় সেই চির চেনা বাংলাদেশে। প্রবাসে বসে দেশের ঈদস্মৃতি কার না মনে পড়ে? এখনো দেশের ঐসব দিনের কথা যখন মনে হয়, তখন অস্থির হয়ে উঠি, অভিভূত হই এত চমৎকার দিনগুলো ছেড়ে প্রবাসে। আসছে সামনে ঈদ! এ ঈদটাকি দেশের মতো হবে? কিন্তু আমি স্মৃতি সম্পদ হিসেবে ওই দিনগুলোকে ধারণ করেছি, মনে গেঁথে রেখেছি। ঈদের অনেক কথাই মনে পড়ে ।
গত ঈদে মা,বাবা ভাই,বোন স্ত্রী,পুত্র পাড়া প্রতিবেশীর সাথে ঈদ করেছি । যেমন ঈদের আগে সবাই আপনজনদের জন্য নতুন জামা-কাপড়, কিনে দিতেন ঈদের কয়েক দিন আগেই। সে ভাবে আমি ও সবার জন্য যার যা প্রয়জন সাধ্যমত কিনে দিয়েছি । তবে আমার সন্তানের কথা ভিন্ন,তার কাজ গুলিই আমাকে নাড়া দিয়ে যায়,সে ঈদের আগের দিন আমার( পুত্র ) চুপি চুপি তার জুতো, পাঞ্জাবী পাজামা ঠিক মতো লাগছে কি না সে একটু পর পর এসে দেখে! আজ আমার তার সেই আনন্দের কথা বারে বারে নাড়া দেয়। মনে হচ্ছে যে আমি তার পছন্দের জিনিসটাই কিনে এনেছি। এবারে ঈদে সে আমার কাছে থাকবেনা। কারন আমি দেশে নেই প্রবাসে। আমার ছেলের জন্য যেমন ভালবাসা আছে আমার। তেমন আমার মা বাবার ও আছে আমাদের প্রতি। ঈদগাহ যাওয়ার আগে বাবা-মাকে সালাম করে ঈদের সেলামি উনাদের হাতে দিয়ে চলে গেলাম ঈদ জামাতে। যাওয়ার পথে ভাগীনা জাফরকে ও সাথে নিয়ে গেলাম।
ঈদের খুতবাটা সুনলাম মন দিয়ে । ঈদের খুতবায় ঈমাম সাহেব তাকওয়ার উপর বিশাল আলোচনা করেন।
ঈমামের এই মূল্যবান খুতবা শুনে উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে সাধারণ মানুষ আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশীদের সালাম, বুকে বুক মিলানো একটা রেওয়াজ আগে থেকেই হয়ে আসছে। ঈদের মাঠ থেকে এসে দাদা-দাদী, চাচা-চাচীদের কবর জিয়ারাত করা । ঈদের দিনে সেমাই খাওয়ার রেওয়াজটা সার্বজনীন, আগে থেকেই ছিল এখনও আছে । বাড়ীর সবাই ডাকা ডাকি আস সেমাইর নাস্তা খেয়ে যাও, কেহ আবার বিভিন্ন রকমের পিঠা নাস্তা বানায় আমাদের ওখানে।
ঈদের জামাতে মাঠে যাওয়ার আগে মা ডান হাতে একটু আতর লাগিয়ে দিলেন আমাকে ও উনার নাতী মানে আমার ছেলে তালহাকে। ( তবে আতরটা আমারি নেওয়া কাতার থেকে) আমার ছেলে তা শুঁকতে শুঁকতে যাচ্ছে আর একটু পর পর বলছে আব্বু দেখ দাদু আমাকেও আতর দিয়েছে। রাস্তাদিয়ে তার হাত ধরে হাটছি আবার কখন ও বুকে নিয়ে। আমার ছেলের ঈদের আগের রাতটা ঘুমানো কঠিন ছিল,সে হাতে মেহেদি লাগিয়ে গভীর রাতে যে ঘুমিয়েছিল তা-ও মনে নেই তার। কখন ভোর হবে সেই অপেক্ষায় আছে। কখন ভোর হবে,সে সবার আগে উঠবে, এটা আমার জানার বাহিরে,সকালে উঠেই বলে আব্বু গোসল করবেননা,নামাজ পড়তে যাবেননা? কি আর করা শুনতেতো হবেই এভাবে যে আমি ও বাবাকে বলেছি। আমাদের ঘরের পাশেই একটা পুকুর তাকে গোসল করিয়ে গোসল সেরে নতুন জামা-কাপড় পরিয়ে দিলাম,তার ঈদের নামাজের আগ্রহ ছিল অধিক।
আমাদের বাড়ীর সামনেই বোন এর শ্বশুরবাড়ী, ওখানে এসে আমার ভাগীনা ভাগ্নীদের সাথে কিছু সময় ঘোরাফেরা, ঠিক ঘোরাফেরা নয়, পাশের আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশী তাদের বাড়িতে যাওয়া, মুরব্বিদের সালাম করা, তাদের কাছ থেকে দোয়া নেয়া। এতে খানাপিনা একটু বেশি হয়েছে। কারও বাড়িতে গেলে না খাইয়ে তো ছাড়ে না , কারন বোনের বাড়ী।
বিকেল বেলা মনে হলো একটু ঘুরে আসব, এভাবেই বাজারের দিকে যাওয়া। ভাবলাম একটু খেলা দেখব, ঠিকই খেলা দেখলাম, মাঠে না একটা জমিতে, কারন মাঠে তখন স্কুলের রড,বালি ভর্তি, তাই সবাই জমিতেই খেলছে ফুটবল, আমদের স্কুলের মাঠটা মস্ত বড় । ওখানে প্রায় বয়ষ্ক যারা এক দিকে, তরুণ যারা অন্যদিকে খেলতো। এভাবেই ঈদের দিন ও খেলা হচ্ছে। প্রান খুলে খেলা দেখলাম।
ঈদের সেমাইটা আমার সারা জীবনের পছন্দ। ঈদের দিন সেমাই না হলে ঈদ হলো কিভাবে? আমার বন্ধু মাহমুদ ভাই কাতারে থাকতে উনিই সব ঈদে সেমাই রান্না করত, শুধু যে দুই ঈদে তা না মাঝে মাঝে ও সেমাইর নাস্তা বানিয়ে খাওয়াতো। যদিও আমি দেশে আমার ঈদের সেমাই না হলে চলে ? আর দুপুরে রোস্ট একটু মিষ্টি দিয়ে গোশত রান্না করে আমার মা জননী ও স্ত্রী। ওদিনের পোলাও কোরমা এখন ও মনে হয় হাতে লেগেই আছে। বেশ লাগলো খেতে।
আমিযে এখন প্রবাসী আপনাদের সবার জানা আছে। তাই প্রবাসে ঈদের আনন্দ হলো দু দিন ছুটি পাওয়া। বন্ধু বান্ধব, বিডিটুডে ব্লগারদের সাথে দেখা করা। এলাকার লোকজনদের সাথে দেখা করা। কিংবা কয়েক বন্ধু মিলে কোথাও ভ্রমনে বের হওয়া এর চেয়ে আর বেশি কিছু নয়। দেশে কিংবা প্রাবসে, যে যেখানেই আছেন সবার ঈদ হোক আনন্দময় ।
বিষয়: বিবিধ
২০৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন