নিষ্ঠুর জীবন প্রবাসীদের অভিজ্ঞতার গল্প।*** শেষ পর্ব*****
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৫ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৪৫:১৩ রাত
চেষ্টা করেছি বিগত পর্ব গুলিতে আমার যন্ত্রণা গুলো সবার সাথে ভাগাভাগী করে নিতে, এই ক্ষুদ্র প্রবাস জীবনে কি পেলাম আজকে আমি সেই হিসেব নিকেশ নিয়ে লিখব। জানি সম্ভব নয় তবুও চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি।
প্রবাস জীবনকে বলা হয়ে থাকে নিরস জীবন। এই জীবনে কেবল কাজ আর কাজ। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, হোটেল- রেস্তরায় আড্ডা দেয়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা থেকে শুরু করে নিজের অর্জিত টাকা - কড়ি অযথা খরছ করা। ব্যস্ততার জীবন। ব্যস্ততার মাঝে যেন অন্য কিছু করার সুযোগ নেই।
সেই ব্যস্ততা থেকে কিছু সময় বের করা দুর্লভ একটি কাজ। আর সেই দুর্লভ সময়কে কাজে লাগিয়ে সাহিত্য চর্চা সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ অর্থাৎ দুরূহ একটি কাজ। আর সেই অসাধারণকে সাধন করেছেন বন্ধুর ভূমিকায় বাংলাদেশ কুরআন সুন্নাহ পরিষদ আমার পেঁছনে।
প্রবাস জীবনের এই আনন্দ আর বেদনার মধ্যে একজন ভাল বন্ধু খুঁজে বেড়ায় সকলেই, কিন্তু সবার ভাগ্যে কি আর ভাল বন্দু ঝুটে? না সবার ভাগ্যে ভাল বন্ধু জুটেনা। বন্ধুর খপপড়ে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে এমন অনেকেই এর বহু প্রমাণ আছে। তবে কে সেই ভাল বন্ধু, যে আমাকে সত্যিকারের পথ দেখাবে? সেইতো আমার আসল বন্ধু , যে আমার ইহকালীন কল্যান ও পরকালীন মুক্তি চায় , সেইতো আমার বন্দু ,যে আমাকে শিখিয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে, যে আমাকে শিখিয়েছে আল্লাহর দাসত্ব ও রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্য করতে হবে, সেইতো আমার বন্দু, যে আমাকে শিখিয়েছে ইসলামের অনুসরণ করতে হবে, সমাজের সেবা ও মানব সেবা করতে হবে এবং ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিস্ঠিত করার লক্ষ্যে সারক্ষণ কাজ করতে হবে, সেইতো আমার প্রকৃত বন্ধু।
হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা) বলেছেন, নিশ্চয়ই সৎ সঙ্গ ও অসৎ সঙ্গের উদাহরণ হলো সুগন্ধিদ্রব্য বিক্রেতা ও হাপর প্রজ্বলনকারী (কামারের) মতো। অতঃপর সুগন্ধিদ্রব্য বিক্রেতা হয়তো তোমাকে কিছু সুগন্ধিদ্রব্য দান করবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে ক্রয় করবে অথবা কিছু সুঘ্রাণ এমনিতেই পাবে। পক্ষান্তরে যদি কামারের সাথে বন্ধুত্ব হয় তবে তার সাথে থাকলে তার হাপরের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়তো তোমার কাপড়কে পুড়িয়ে দেবে অথবা তার কাছ থেকে পচা দুর্গন্ধ পাবে।
(সহীহ বুখারী ৫৫৩৫, সহীহ মুসলিম ১৪৬)
হযরত আবু মুসা আশআরী (রা) বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা) ভাললেন বন্ধু নির্বাচন করার গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন, তাহলো ভালো বন্ধু আতর সুগন্ধিদ্রব্য বিক্রেতার মতো আর খারাপ বন্ধু কামার বা হাপরে অগ্নিপ্রজ্বলন করে লৌহজাত বস্তু তৈরিকারীর মতো। যে ভালো বন্ধু সে ছোট, বড়, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রে তার বন্ধুর জন্য উপকারী, যে রকম আতর বিক্রেতা তার সাথে থাকা মানুষগুলোর জন্য উপকারী। হয়তো বিক্রেতা তাকে কিছু আতর উপহারস্বরূপ প্রদান করবে। যদি সে প্রদান না-ও করে তবু সে কিছু আতর তার কাছ থেকে ক্রয় করে নিতে পারে। আতর বিক্রেতা যদি এতটুকু উদার না হয় যে সে উপহারস্বরূপ প্রদান করবে বা সঙ্গী ক্রেতার যদি ক্রয় করার সামর্থ্য না-ও থাকে তবু আতরের ছড়িয়ে পড়া মন মাতানো সুগন্ধি থেকে সে উপকৃত হয়। পক্ষান্তরে অসৎ সঙ্গী গ্রহণকারী ব্যক্তি তার বন্ধুর কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াই স্বাভাবিক, যে রকম কামারের সঙ্গীর হয়। সে যদি তার পাশে বসে তবে হাপরের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তার কাপড় বা শরীর পুড়িয়ে ক্ষতি করতে পারে। আর যদি সে রকম ক্ষতি না-ও করে তবে গরম, দুর্গন্ধ ইত্যাদি অবশ্যই তার জন্য বরাদ্দ থাকবে। অসৎ বন্ধু তার মধ্যে থাকা অসৎ গুণাবলি ও অভ্যাস বন্ধুকে শিখাতে পারে বা বন্ধু তার থেকে শিখতে পারে যা সারা জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তাই বলব, আমরা যে যেখানেই থাকিনা কেন, দেশে কি প্রবাসে আমরা আমাদের মহামূল্যবান জীবনকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা-সংস্কৃতিতে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে, সর্বাবস্থায় ভালো বন্ধুদের বেছে নিয়ে উপকৃত হব এবং সুন্দর জীবন র্নিমান করতে যেন ভূল নাকরি।
বিষয়: বিবিধ
২৬৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন