Rose Roseনিষ্ঠুর জীবন প্রবাসীদের অভিজ্ঞতার গল্প। । পর্ব---৬ Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ১৬ জুন, ২০১৩, ০৩:৫১:৩১ দুপুর



এভাবেই চলতে চলতে প্রবাস জীবন থেকে কেটে গেলো পাঁচ বৎসর। একদিন মায়ের হাতের একটি চিঠি পেলাম। দেশে যেতে হবে। যাবার সময় স্বর্ণ অলংকার নিয়ে যেতে হবে। আমাকে নাকি বিয়ের পীড়িতে বসতে হবে। । কারন দর্শালেন মা দিনের বেলা একা থাকেন। ভাই বোন সবাই মাদ্রাসা কলেজে চলে যায়। মা একা থাকতে পারেননা। কখন কি হয় বলা যায়না। বার বার বলেও মা বাবা কে ফিরাতে পারলামনা। একটায় কথা, মা বলেছেন আমরা কন্যা দেখছি তুমি বাড়ী চলে আসো।

কি করব মা বাবার শান্তির জন্য প্রবাসে, সে মা বাবার কথাতো শুনতে হবেই। বলে দিলাম মা আমার জন্য এমন পাত্রী দেখবেন, যার মধ্যে পাবেন আমাদের পরিবারের সবার মনের মতো, সবাইকে আপন করে নিতে পারবে। মা আমি এক জন দ্বীনদার জীবন স্বাথীকে পেতে চাই। আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হলো মা গিয়ে দেখবেন অবশ্যই মা'র পছন্দ হতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছিও তাই।

২০০৫ সালে দেশে গিয়ে নতুন সংসার শুরু করি। প্রবাসের স্বপ্ন দেখে আমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছি সেই মানুষটিকে যে তার জন্মদাতা মা-বাবাকে ফেলে সারাজীবনের জন্য চলে এসেছে আমার বাড়িতে। আমি তাকে বঞ্চিত করেছি তার প্রাপ্য অধিকার থেকে।

২০০৯ সালের জুলাই মাসে আমার প্রথম সন্তান দূনিয়ার আলো দেখে। জন্মের প্রথম থেকেই আমার ছেলে বাবার শুন্যতা অনুভব করলো যা আমি করিনি কোনোদিন। শিশু জন্মের পর সবার আগে যার সান্নিধ্য পায় সে তার বাবা। কিন্তু আমি অভাগা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি আমার ছেলেকে। একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যখন একটু বুঝতে শেখে তখন তাকে নানা বিষয়ে বুঝাতে হয়, চেনাতে হয় এবং শেখাতে হয়। কিন্তু মা-বাবাকে কখনো নতুন করে চেনাতে হয় না। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী সে বুঝে নেয় তার আশ্রয়স্থল ও নির্ভরতার জায়গাটি। পরিবারে মায়ের যেমন ভূমিকা থাকে, বাবার ভূমিকাও কিন্তু কোনো দিক দিয়ে কম নয়। বাবাই পরিবারের অন্যতম কর্তা।

প্রথম যখন দেখলাম সন্তানকে , কত যে পুলকিত হলাম তা ভাষায় প্রকাস করা কষ্টকর। যখনি বাজারে যেতাম, বলে দিত আব্বু চকলেট আনবা,একটু সামনে যেতেই পেছন থেকে আব্বু গাড়ী আনবা। এভাবে ৫/৭বারের বেশি ডাক পড়ত। কি করব দাঁড়িয়ে যেতাম। সন্তানের আব্বু ডাকটি কতই মধুর।

আসব কখন বাজার থকে, অপেক্ষা করত রাত জেগে, ঘুমাতোনা শুধু আব্বুর কিনে আনা খাবারের আসায়। আমি বুঝতাম আব্বুর সাথে খেলা করার জন্য, কিছু পাবার আসায়, আমার এই ছোট্ট ছেলেটি অবুঝ মন নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।তাই কিছু না নিয়ে বাড়ী ফেরা যায়না।

আজ এই প্রবাস জীবনের কারনে সন্তানের সব ইচ্ছার গুরুত্ব দিতে পারিনি।আমি এমন একজন বাবা হয়েছি যে কিনা নিজের সন্তানের চাহিদা অনুযায়ী তাকে সংগ দিতে পারছিনা। সে ও পারছেনা বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর দিতে। আমি পারছিনা তাকে কুলে নিয়ে, হাতে ধরে বাড়ীর আঙ্গিনায় ঘুরে বেড়াতে। আমি পারছিনা তার সাথে খেলা করতে। আমি পারছিনা তাকে আদরকরে খাওয়াতে। আমি পারছিনা তাকে সুন্দর করে সিক্ষা দিতে। আমিতো কখনো আমার বাবার শুন্যতা পাইনি তাহলে কেনো আমার ছেলে ভুগছে বাবা শুন্যতায়। বাবা হতে চেয়েছিলাম সেটা চাঁদ তারার মতো সত্য কিন্তু এমন বাবা আমি কখনো হতে চাইনি। আমি এমন বাবা হবো তা স্বপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন।

আর এমন একজন মা এর সন্তান আমি। যে গর্ভে ধারণ করে ।মৃত্যুসম কষ্ট সহ্য করে প্রসব করে ছিলেন। নিজের শরীরের রক্ত গোশত গলানো বুকের অমৃত পান করিয়ে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখানো থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা, এমনকি প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত প্রতি পদে পদে সান্তনা, সাহস, উৎসাহ ও ভরসা দিয়ে ছিলেন।

যখনই মায়ের সেই কস্টের কথা গুলি মনে পড়ে। তখনি দূর প্রবাসে বসে 'দু'চোখ বেয়ে অস্রু বেয়ে পড়ে। আর যখনি শুনি মা অসুস্থ মনকে স্থির রাখতে পারিনা। কিন্তু কি করবো ফোনে কথা বালা ছাড়া আর কি'বা আছে। যার আদর পেয়েছি সোহাগ পেয়েছি, ছায়া পেয়েছি সারাক্ষণ। সেইতো আমার মা জননী।

আমার মায়ের ঋণ শোধ করা যাবে না কখনোই। যিনি কোনো শর্ত ছাড়াই আমাদেরকে ভালোবাসেন এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করেন। সদা করি তার জন্য দোয়া। আল্লাহ যেন তাঁকে দীর্ঘজীবি করেন, সুখে রাখেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, 'রাবি্বর হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা।' অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মা-বাবাকে রহমত করুন। যেমনি শৈশবে তাঁরা আমাদের লালন-পালন করেছিলেন।' (সুরা বনিইসরাইল, আয়াত ২৩-২৪)।

আজ অর্থ নামক নরপিশাচ আমাদের বাপ ছেলের ভালোবাসা মা-বাবা,স্ত্রী ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্দু-বান্দব সকলের ভালোবাসা দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে ভাবতেই গাঁ শিউরে উঠে।

চলবে...............ইনশাআল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

২৫৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File