নিষ্ঠুর জীবন প্রবাসীদের অভিজ্ঞতার গল্প। । পর্ব-(৫)
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ১১ জুন, ২০১৩, ১০:০১:২২ রাত
পর্ব ৪Click this linkকুরআন সুন্নাহ আফিসে চাচাকে না পেয়ে মুরুব্বী (বাহার চাচা) বললো আমার সাথে চলেন। উনি বাসায় নিয়ে চা বিস্কেট, ফ্রুট কেটে খাইয়ে বললে আপনারা দেশে গিয়ে কি করবেন, আমি দেখি চেষ্টা করে কোন কাজের সন্ধান পাই কিনা! আমরা চলে যাবার সময় একটা মোবাইল নাম্বার দিয়ে বললেন চার পাঁচ দিনের মধ্যে ফোন করে খবর নিবেন।
পাঁচ দিনের কি আর ধৈর্য আছে! চার দিনের মধ্যেই ফোন করলাম। চাচাও ফোন রিসিভ করেই বলে দিলেন আপনারা আজকেই চলে আসেন। আমি এক ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। আর এক মূহর্ত ও দেরি না করে টেক্সি যোগে চলে আসলাম।
আসার পরেই নিয়ে গেলেন ঐ যে লোকের সাথে কথা বলেছেন তাঁর বাসায়। কথা হলো এবং বলেছে আমাদেরকে সকাল আটটায় রেডি থাকতে। ঠিক সময় মত হাজির হলেন আমাদেরকে নিয়ে যেতে। আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার সময় একজন লোকের সাথে কথা বলছিলেন খুব মাদুর্যতার সাথে । কথা বার্তা শুনে বুঝলাম খুব ভাল এবং সুন্দর মনের একজ মানুষ। উনি আর কেহনা , টুডে ব্লগের ব্লগার স্বনামধন্য আপনাদের সুপরিচিত জানাব আধা শিক্ষিত ভাই। উনি ও যানলেন আমাদের সম্পর্কে। সালাম দিয়ে বিদায় নিয়ে গেলেন এক কাতারির কাছে।
ওখানে গিয়ে কাতারির সাথে কথা হলো। আমাদের স্যালারি ৭-৫০রিয়েল আর প্রতিদিন খানার বাবদ ১৩রিয়েল , বললাম ঠিক আছে মনে মনে বললাম আপাতত করি তার পরে দেখা যাবে। কাজে জয়েন্ট করলাম ৯তারিখে । মাসের শেষে স্যালারি দিলো আমাকে এক হাজার ধরে আর প্রতিদিন ১৫রিয়েল খানার। আমি বললাম এতটাকা আমাকে কেন দিবে। ম্যানেজার বললো তোমাকে এত টাকাই দিতে বলেছে কফিলে।আলহামদুলিললাহ পড়লাম। আর আমার সাথে যে ছিলো তার স্যালারি আগের টাই।
যে নাকি আমাদেরকে চাকরি দিলেন । উনার দেশের বাড়ী সিলেট কানাইঘাট। নাম আব্দুর রহীম মাশুক। উনার ভালবাসার কথা আর কি লিখব, প্রায় চার বছর উনিই রান্না কাপড় ধোলাই থেকে শুরু করে সব উনিই করতেন, ঈদ আসলেতো কথাই নেই চাঁদ রাতে ফোনে জানিয়ে দিতেন , তাহের তোমার ডিউটি শেষ করে ন্যাশনাল চলে আসবা (ন্যাশনাল কাতার এর বাংগালীদের শুক্রবারের মিলন মেলা, সবাই চলে আসে এখানে বৃহষ্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আড্ডা শপিং ইত্যাদির মিলন মেলা, পরবর্তিতে নেপালীরাও আসা শুরু করল আর এখন আর নেই, কাতার পুরোনের সব ভেংগে আবার নতুন করে সব কিছু করছে তায় ন্যাশনাল এর সরগরম শেষ) আমার পছন্দের পেন্ট, শার্ট, গেন্জি সবই কিনে দিতেন। ওনার একটা অভ্যাস ছিলো প্রতিদিন ফজরের পরে রুমে এসে কোরআনের তাফসির পড়তেন। একদিন বললাম ভাই এই সময় আমরা ঘুমাব আপনি ৭-৮টার পরে পড়বেন। উনি বললেন তাহের কিছুদিন পরে তুমিও পড়বা। ঠিক এই আমি যখন বুঝতে পারলাম কুরআন সকালেই পড়তে হয়। সত্যি সত্যি আমিও পড়া শুর করলাম, এখন আমিও পড়ছি প্রায় প্রিতিদিন। তখন ওনাকে দেখলাম মুচকি মুচকি হাসছেন। যখনই কোন সমষ্যায় পড়তাম ওনি বুঝে ফেলতেন। আজ মাশুক ভাই নেই এখানে । চলে গেছেন দেশে প্রায় ছয় বৎসর। কাতারে এখন ওনার তিনটি দোকান চলছে। ওনার ভাইয়ারা দেখাশুনা করেন ।
এবার আসা যাক , আধা শিক্ষি মানুষের কথায়। ওনার সাথে পরিচয় ২০০২সাল থেকেই। যখন ডিউটিতে যেতাম ওনাকে আসা যাওয়ার পথেই পেতাম । কারন উনার কর্মস্থল আমার আসা যাওয়ার মধ্যেই পড়ত। ওনিও সব সময় হাসি মুখে কথা বলতেন। খোজ খবর নিতেন আমার বাড়ির মা বাবার । খুব আপন করেই দেখতেন আমাকে। ওনার সাথে দীর্ঘদিন একই বাসায় থেকেছি। আসলে কোন, মানুষ কেমন তাদের সাথে না থাকলে, লেনদেন না করলে বুঝা যায়না।
একদিন দুপুরে প্রচন্ড গরমে আমি রান্না করছিলাম। রুমের এসি টি অন করেই। আমি যানি উনি আসবেন তায় অন করে রেখেছিলাম আর আমি ছিলাম কিচেনে। ঠিক সময় মতই এসেছেন। এসেই রুমের এসি অফ করে দিলেন। আমি গিয়ে আবার চালু করে দিলাম। ওনি ও আবার অফ করে দিলেন। বললাম অনেক গরম আপনি থাকবেন কি করে। পরে ওনি আমাকে একটা গল্প শুনালেন।
আপনারা সে গল্পটি শুনবেন ?
তা হলে শুনুন। এক লোক রান্না ঘরের চালা দিচ্ছিল খড়খুটা দি্যে। প্রচুর গরম তখন। তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল। তার মা তাকে বার বার বলছিল তুমি নিচে নেমে আস। পরে ঠান্ডা পড়লে কাজ করবা। ছেলে বলছে মা একটু পরেই নেমে আসব। মা যত বারই বলে ছেলের একই জবাব। এদিকে মা এর সহ্য হচ্ছেনা, তার ১-২বছরের সন্তানটিকে (নাতি/নাতনি) বাহিরে এনে রেখে দিলো। সন্তানটিকে দেখে অতি দ্রুত নেমে আসল বাবা। মা তখন বললেন আমার কাছে ও এমনই লাগছিল। এ উদাহরণ টি আমাকে বার বার নাড়া দেয়।
চলবে..........ইনশা আললাহ
বিষয়: বিবিধ
১৬২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন