নিষ্ঠুর জীবন প্রবাসীদের অভিজ্ঞতার গল্প। । পর্ব-(৩)
লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৮ জুন, ২০১৩, ০৩:৩৯:২৮ দুপুর
পর্ব-২ঢকা থেকে যখন কাতার এয়ারওইজ ফ্লাইটটি কাতার ইয়ারপোর্ট ল্যান্ড করল, সবাই যার যার লাগেজ হাতেনিয়ে লাইন ধরল। আমি ও তাদের সাথে নামার জন্য প্রস্তুত। যেই গেইটে আসলাম মনে হলো যেন আগুনের লাভা এসে চোখে মুখে লাগছে। দাঁড়িয়েই দেখি খাঁ খাঁ রোদ্র দু'চোখ খোলা যাচ্ছেনা । এমন প্রচন্ড গরম লাগছিল তখন। দ্রুত নিচে এসে এসি বাসে দাঁড়ালাম , বাসটি অনেক দুর ঘুরে নিয়ে এসে ইমিগ্রেশনের গেইটে নামিয়ে দিল।
পুরো যাত্রাটায় যে জিনিসটা নিয়ে খানিকটা টেনশনে ছিলাম সেটা হচ্ছে ইমিগ্রেশন অফিস। যদিও আমার সবুজ পাসপোর্ট, চকচকা একটা ভিসা আছে, অনেকের কাছে শুনেছি ইমিগ্রেশন আমার কাগজপত্র দেখে সন্তুষ্ট না হলে অনুমতি না দিয়েই ভাগিয়ে দিতে পারে এবং এমন ঘটনা অনেকের ঘটেছে ,বাস্তব কিন্তু ভিন্ন ইমিগ্রেশনের মহিলা যথেষ্ঠ আন্তরিকতার সাথে দুই এক কথা বলেই সীল দিয়ে মিষ্টি হাসি দিল “ওয়েলকাম টূ কাতার, আমি মুগ্ধ ...ইমিগ্রেশন পার হয়ে ।
ইমিগ্রশন পার হয়ে সামনে এসে দেখি সারি সারি কোম্পানির নামের নেমপ্লেট হাতে নিয়ে বহু লোক দাঁড়িয়ে আছে। একজনের হাতে আমার কোম্পানির নামটা দেখেই তার কাছে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ, ঠিক জায়গায় পৌঁচেছি।
এবার গাড়িটি যখন দোহা সিটি পাড়ি দিয়ে পাথর ঠাশা মুরুভূমির দিকে জাচ্ছিল। মুরুভূমিটা দেখে চমকে উঠি, গাড়িটা চলছেতো চলছেই, আমাদের দেশের বাতাসগুলো ঘুম পাড়ায় আর মরুভূমির তপ্ত বাতাসগুলো ঘুম তাড়ায়। এমন গরম বাতাস গায়ে মেখে পৌছে গেলাম গন্তব্যে।
ওখানে যাওয়ার সাথে সাথেই পিএম এসে হাজির, রিসিভ করেই আমাদের কাছ থেকে পাসর্পোটটি নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফর্মে সাইন দিতে বললো। আমিত অবাক দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকলাম! তখনই ভাবতে থাকলাম কি আছে কপালে!
কিছুক্ষণ পরে বললো তোমরা কেন্টিন থেকে খেয়ে আসো । খাওয়া সেরে জখনই আসলাম বললো এবার ডিউটি শুরু কর।একি অবস্তা! আমি বললাম আমরা কাল থেকে ডিউটি করব! একথা শুনেই সে এমন মুড নিলো.........।কিআর করা!
আমাকে নিয়ে গেলো এক লাইনের কাজ দেখার জন্য। আর আমার বন্ধু কাশেমকে অন্য লাইন এ দিল।
ঘন্টাখানিক পরেই পিএম এসে বললো, আমাদের ক্যাম্পে যায়গা নেই আপাতত তোমাদেরকে ষ্টোর রুমেই থাকতে হবে ৩-৪দিনের জন্য। ভাবলাম কি-বা করার আছে।
ডিউটি সেরে যখন আমাদেরকে নিয়ে গেল ষ্টোর রুমে, প্রচন্ড গরমের জন্য দাঁড়ান অসাধ্য। সিকিউরিটি দুইটা ফ্যান এনে দিলো তাতে কি কাজ হয়?
রাত জেগে মনকে প্রশ্ন করা শুরু করলাম,কেন আপন দেশ/সমাজ ছেড়ে এই কঠিন দেশে আমি! কেন আমি পরিবারকে দূরে ঠেলে দূর প্রবাসকে বেছে নিলাম! ভালবাসা মমতা আজ কোথায় ঠাঁয় পেয়েছে ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে সারা রাত না ঘুমিয়ে কেটে দিতে হল নানান কল্পনা আর স্বপ্ননিয়ে ।
দেশে থাকতে মনে করতাম প্রবাস জীবন কতো না সুখের! কতো না মধুর! কিন্তু বিদেশের মাটিতে পা দেয়ার পরপরই শুরু হল অন্যরকম সংগ্রাম।
চলবে.............
বিষয়: Contest_mother
৩২২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন