Rose Roseনিষ্ঠুর জীবন প্রবাসীদের অভিজ্ঞতার গল্প। । পর্ব-২ Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাহের মিয়াজী ০৫ জুন, ২০১৩, ০৪:২০:৫২ বিকাল



প্রথম পর্ব

ভিসাটি পেয়ে বন্ধু কাশিমের সাথে দেখা করলাম, তারটার খবর নিতে! বললো তারটা ও এসেছে। অফিসের সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখলাম, ভাইয়ার মনটা একটু খারাপ, বুঝতে পেরে ভাইয়াকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললাম।ভাইয়ার চাকরি হলো সাতটি গার্মেন্টস এর একাউন্টেন্ট। ভাইয়া বললেন বাড়ীতেগিয়ে দেখা করে আসো।

বাড়ী গিয়ে মা বাবাকে বললাম ঘটনা, আমার ভিসা এসেছে। সবাই বললো কোথা থেকে সত্যি নাকি! হ্যাঁ দেখেন এইযে ভিসার "ফটো কপি" ! আব্বা দেখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। মনে মনে চিন্তা করতে থকলেন আমার ছেলেতো মিথ্যা বলেনা। তবে তার সাথে ট্রাভেল্স এজেন্সি প্রতারণা করে নাইতো! এ চিন্তা মাথায় রেখে আব্বা বললো ঠিক আছে আমার কাছে দাও একটু দেখতে হবে।

আমাদের গ্রামের এক আদম ব্যাপারিকে দেখিয়ে কনফার্ম হলেন, ঠিক আছে।আব্বা টাকা যোগাড় করে দিলেন, চলে আসলাম ঢাকায়।

ভাইয়াকে সাথে নিয়ে টাকা জমা করে তারিখ ঠিক করেই বাড়ীতে আসলাম। এখন আর ভালো লাগেনা । মনের মাঝে নানান প্রশ্ন জাগতে শুরু করল । এত চমৎকার দিনগুলো ছেড়ে প্রবাসে যেতে হবে! ছবির মত সুন্দর বলতে যা বোঝায় ঠিক সে রকম একটি গ্রামে ছেলে বেলাটা কেটেছি। গাঁয়ের ধুলো মাটি মেখে বড় হয়ে ওঠেছি। আজ আমাকে সেই জায়গা সেই দেশ ছেড়ে যেতে হবে! এমন প্রশ্ন বার বার নাড়া দিতে থাকে মনের গহীনে।

আসারদিন আত্মিয় স্বজনরা অনেকেই আসলেন দেখা করতে। অনেকেই গিফট দিলেন সান্তনা ও দিলেন ।আসার সময় সবার ঘরে ঘরে গিয়ে বলে আসলাম, এত খারাপ লাগে নাই । যখন মাকে বলছিলাম "মা" চলে যাচ্ছি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। মাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলাম .................মা আচল দিয়ে মুখটা মুছে দিয়ে আল্লাহর দরবারে সফর্দ করে দিলেন। অস্রু সিক্ত হয়ে বিদায় নিতে হলো।

বিমানে বসার পর বুকের মধ্যে বিরহের কষ্টের আগুন জ্বলতে শুরু করলো। আল্লাহর দরবারে বলেছি " ইয়া আল্লাহ আমি কোথায় যাচ্ছি, আমার ঠিকানা কোথায়, আমার জানা নেই, তুমিই পারো আমাকে পৌঁছে দিতে সঠিক গন্তব্যে।" কত কি জল্পনা কল্পনা মনের মধ্যে পীড়া দিচ্ছিল!

এমন জল্পনা কল্পনার মাঝেই চলে আসলো বিমান বালা। প্রথমে টিস্যু দিল মুখ মুছার, কিছুক্ষণ পরেই খানা পরিবেশন করলো। খাওয়ার পরে যাহারা 7up পান করতে চায় তাদেরকে 7up এবং আরো হরেক রকমের ঠান্ডা পানিয় ছিল। আমার সাথে বসা ছিল এক ভদ্রলোক সে বললো কফী দিতে। কফীর চিনি, ধুদ আলাদা, এগুলা মিশিয়ে কফি বানাতে হয়। সে তা জানেনা। সে চিনি না মিশিয়ে পান করা শুরু করে, হা হা হা হা। এখন তার চিন্তা হলো এটা ফেলাও সম্ভব না, কি করা যায়! চারদিকে তাকিয়ে নাকে টিপ দিয়ে ধরে খেয়ে সাবার করল। আমি বললাম কি হল! সে বললো, না এমন এমন করেছি। তার সেই দৃশ্যটি এখন ও আমার মনে পড়ে।

খাওয়া দাওয়া সেরে যখন অনেকেই নিদ্রায় বিভোর । তখন আমি মনকে প্রশ্ন করলাম আমিতো একা নই অগণিত বনি আদম প্রবাসে যাচ্ছে । তারাও তো আমার মত দশটি পরিবারের, বেঁচে থাকার এবং ভালো থাকার জন্য, পরিবার পরিজন নিয়ে এক চিলতে হাসি ভাগাভাগি করে একই ছাদের নিচে হাতে হাত রেখে সুখে দিন যাপনের স্বপ্ন দেখছে। আমিও তাদের একজন!!

চলবে...................।

বিষয়: Contest_mother

২৮১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File