মদ ও শুয়োর - দেহযন্ত্র ও সামাজিকভাবে কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ?
লিখেছেন লিখেছেন রউফ ০৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৫২:৩২ দুপুর
চিকিৎসা বিজ্ঞানীগন বলেন বর্তমানে শুয়োর খাওয়ার কারনে মানুষের ৭০ ধরনের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে-
যার মধ্যে ফিতাকৃমি,গোল কৃমি,হুক কৃমি যার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়, এর মধ্যে-
১.Taenia Solium নামে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ফিতাকৃমি আছে যারা মানুষের পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে পৌছে যায়। এর ডিম রক্তের সাথে মিশে গিয়ে শরীরের প্রায় সর্বস্থানে জমা হয় এমন কি এটা মস্তিষ্কে পৌছে তার প্রভুত ক্ষতি সাধন করতে পারে ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতি হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়।।
২.এটা যদি লিভারে প্রবেশ করে লিভারের প্রচন্ড ক্ষতিসাধন করে। হৃৎপিন্ডের ক্ষতি করে। এই কৃমি দেহের যেকোন অন্ত্রের ক্ষতিসাধনে সক্ষম।
৩.শুয়োরের গোশত শরীরকে খুব সহজে মোটা করতে পারে যা উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে এজন্যই আমেরিকার ৫০% মানুষই এই রোগে ভোগে।
৪.শুয়োর পৃথিবীর অন্যতম অপরিষ্কার প্রানী সবসময় এর মুখমন্ডল ও শরীর ময়লা থাকে। একে মানুষের পায়খানার আশেপাশে দেখতে পাওয়া যায়। অনেক গ্রামবাসীদের খোলা স্থানে মুত্র ত্যাগ করার অভ্যাস থাকার দরুন তাদের পায়খানা শুয়োর দ্বারাই পরিষ্কার হয়।
৫. প্রানী গবেষকগন বলেন শুয়োর পৃথিবীর প্রানীদের মধ্যে সবচাইতে লজ্জাহীন প্রানী। কারন এটি তার বন্ধু বান্ধবদের নিমন্ত্রন করে তার স্ত্রীর সাথে অশ্লীলকর্ম করার জন্য। যা ইউরোপিয়ানদের মানসিকতার সাথে অদ্ভুতপূর্ন মিল।
দৈহিক , সামাজিক সমস্যার সাথে সাথে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে-
পবিত্র কুরআনের চার স্থানে শুয়োর খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে সুরা বাকারা: ২,আয়াত-১৭৩/সুরা মায়েদা: ৫,আয়াত-৩/সুরা আনাম: ৬, আয়াত-১৪৫ এবং সুরা নাহল: ১৬-আয়াত-১১৫
“তিনি তোমাদের নিষেধ করেছেন কেবল যা নিজে মারা গেছে আর রক্ত আর শুয়োরের মাংস আর যার উপরে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য নাম উচ্চারিত হয়েছে।”
আল্লাহর এই নিষেধবানী মুসলমানদের জন্য যথেষ্ট। খ্রীষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে শুয়োর নিষিদ্ধ করা আছে [Leviticus 11:7-8]-
“তাদের গোশত তুমি খাবেনা, মৃতদেহ স্পর্শ করবেনা তারা অপবিত্র”
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে আছে-[Deuteronomy 14:8]-
“শুয়োর তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তাদের বিভক্ত খুর তারা তোমাদের জন্য অপবিত্র তাদের মৃতদেহ ছোবেঁনা।”
এবার আসা যাক অ্যালকোহল বা মদ সম্পর্কে-
মদকে কেন সামাজিক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
মানব সমাজে মদের প্রবেশ অনেক আগে হতেই। সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম মূল কারন হলো মদ বা নেশা। মদের নেশায় রঙ্গিন হয়ে বর্তমান সমাজের বেশিরভাই অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। মানুষের কন্ট্রোলরুম হল তার মস্তিষ্ক যা তাকে হালাল বা হারামের পার্থক্যটা বেঝায়। যেমন আপনি রাস্তার মধ্যখানে কাপড় খুলে টয়লেট করতে পারবেননা আপনার মস্তিষ্ক বাধা দেবে। যখন একজন মানুষ মদ বা নেশা জাতিয় জিনিষ পান করে বা খায় তার কন্ট্রোলরুম (মস্তিষ্ক) প্রায় অচল হয়ে পড়ে। নেশার রাজ্যে রকমারি অপকর্ম করতে সে এতোই ব্যস্ত থাকে যে তান সাথে জাগ্রত মন- মেজাজের যোগাযোগ থাকেনা। ফলে ঠিক বা বেঠিকের পার্থক্য গোচরীভুত হয়না। এই সময়টার জন্য শয়তানের অপেক্ষা করে, তখন শয়তান তাকে দিয়ে যা ইচ্ছা করিয়ে নিতে পারে যেমন-
-সে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে
-নিজের কাপড়ে প্রশ্রাব করে দেয়।
-নিজের মা-বাবাকেও গালিগালাজ করে।
-আমেরিকায় বিচার বিভাগ অপরাধীদের একটি জরিপে দেখেছে প্রতিদিন আমেরিকাতে ২৭১৩ টি ধর্ষন সংগঠিত হয় যার কূকর্মর বেশিরভাগ ব্যক্তিই মাতাল।
-অনেক ছোট মেয়ে তার পিতা দ্বারা ধষির্ত হয়েছে ,কারন মাতাল পিতার কাছে মেয়ে বা পতিতার পাথর্ক্য ছিলনা। -এইডস ছড়ানোর অন্যতম কারন হলো নেশা।
অনেকে বলেন তারা সামাজিকতা হিসেবে সামান্য মদ্যপান করেন। অনেকে নিজেকে ’সামাজিক মদ্যপায়ীর খোলসে’ মদপান করেন, আর প্রতিটি অপরাধের শুরু হয় এভাবেই, ক্ষুদ্র হতে সেটা বৃহত্তর পর্যায়ে ফ্রাঙ্কেনষ্টাইনের অবয়ব ধারন করে। পৃথিবীতে এমন কোন মদ্যপায়ী নেই যে জীবনে একবার হুশ হারিয়ে ফেলেননি। আর হুশ হারিয়ে ফেলার পর যে কর্মটি সে করবে তার প্রায়শ্চিত্ব হয়তো তাকে সারাজীবন দিতে হতে পারে সে হয়তো খুন করতে পারে, ধর্ষন করতে পারে। উদাহরন স্বরুপ যত বাব তার আপন মেয়েকে ধর্ষন করেছে তাদের একটাই বক্তব্য ছিল- ”আমার হুশ ছিলনা”.. ইন্ডিয়াতে এইতো কিছুদিন আগে বাসে লোকজন লাইন দিয়ে ধর্ষন করেছে ২৩ বছরের মেডিকেল তরুনিকে, বেশ কয়েকদিন ধরে অসহ্য যন্ত্রনার পর তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়, তদন্তের ১০০০ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বলা হয়েছে তারা (ধষর্করা) মাতাল ছিল।
আল্লাহ বলেন সুরা মায়েদা-৫, আয়াত-৯০-
“নিঃসন্দেহে মাদকদ্রব্য ও জুয়া আর প্রস্তরবেদী বসানো ও তীরের লটারী খেলা-নিশ্চই হচ্ছে অপবিত্র শয়তানের কাজের অন্তর্ভূক্ত..”
বাইবেলে বলা Proverbs 20:1--
“মদ একটি শক্তিশালী পানিয়, যে এর দ্বারা প্রতারিত হয়েছে সে মূর্খ।”
হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে মনুসমৃতি-৯, শ্লোকা-২৩৫-
“যে ব্যক্তি ব্রাহ্মনকে হত্যা করে, যে মদ্যপায়ী, গুরুর বিছানায় রাত্রিযাপন করে, এবং যে চুরি করে প্রত্যেকেই বড় পাপী।”
হাদীস সুন্নাহ ইবনে মাজা-৩৩৭১/৩৩৮০/৩৩৯২-তে রাসুল(সাঃ) নেশাকে সম্পূর্ন হারাম ঘোষনা করেছেন। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা রয়েছে মদের নিষিদ্ধকরনের ব্যাপারে তার কয়েকটি বর্ননা করছি-
১) লিভার নষ্ট হতে পারে
২) দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হতে পারে
৩) ওয়েসোপাগিটিস, গস্খাসটরাইটিস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি ক্যন্সার হতে পারে
৪) বেরিবেরি ,বুকের প্রদাহ অ্যাজমা ইত্যাদি হাজারো রোগ।
মেডিকেরের ডাক্তাররা এই সিন্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে এটি নেশা নয় এটি রোগ যা-
১) বোতলে বিক্রি হয়
২) পান করার জন্য রেডিও পত্রিকা টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।
৩) এর লাইসেন্স আছে
৪) সরকারি অনুমোদন আছে
৫) রাস্তায় ভয়ঙ্কর র্দূঘটনার জন্য এই নেশা দায়ী
৬) পরিবার ধ্বংস করে ও অপরাধের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।
আল্লাহ আমাদের এই ক্ষতিকারক দুটি বস্তু হতে রক্ষা করুন।
বিষয়: বিবিধ
৩১৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন