"সৌদি আরবের বর্তমান প্রেক্ষিত এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর আহ্বান!" পড়লাম আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলামনা।
লিখেছেন লিখেছেন অচেনা প্রতিবিম্ব ০৪ মে, ২০১৩, ০৬:১৮:৩১ সন্ধ্যা
লেখাটি লিখেছেন প্রবাসী লেখক
মামুনুর রশীদ
সৌদি আরবের বর্তমান প্রেক্ষিত এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর আহ্বান!04 May, 2013 সৌদি আরবের বর্তমান প্রেক্ষিত
১।
সৌদি আরবে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটির উপরে। কিন্তু কোন দেশের প্রবাসীর সংখ্যা কত তার কোন সঠিক হিসেব কারো কাছেই নেই। তবে এই উল্লেখযোগ্য প্রবাসীর মধ্যে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসীর সংখ্যাই বেশী।
বাংলাদেশী প্রবাসীদের সঠিক কোন সংখ্যা কারো জানা না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে বর্তমানে প্রায় ২০-২২ লক্ষ প্রবাসী এখানে রয়েছে। আর এই বিশাল সংখ্যক প্রবাসীর অর্ধেক শ্রমিক কাজ করে কোম্পানির অধীনে (অর্থাৎ যারা কোম্পানির ভিসাতেই এসেছে)। আর বাকী অর্ধেক কাজ করে বাহিরে (অর্থাৎ এরা যার ভিসায় এসেছে তার কাজ না করে অন্য কোথাও কাজ করছে)। এমন শ্রমিকের সংখ্যাই বেশী হবে। এরা ফ্রি ভিসার লোক হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত।
২।
প্রায় ২ বছর পূর্বে সৌদি আরবের শ্রম আইনে কিছু পরিবর্তনের কারণে প্রবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান কিছুটা সঙ্কুল হয়ে এসেছে। যেমন এই নতুন আইনের মধ্যে ছিল প্রত্যেক কোম্পানি ৪০% সৌদি রাখতে বাধ্য থাকবেসহ আরও অনেক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর এই হিসেব অনুযায়ী বিভিন্ন কোম্পানিগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যে কোম্পানি ৪০% সৌদি নাগরিককে চাকুরী দিয়েছে সে কোম্পানি (Green), যে কোম্পানি ৪০% এর চাইতে কম সে কোম্পানি (yellow), যে কোম্পানি মোটেই পারেনি অথবা ২০% দিয়েছে সে কোম্পানি (Red), হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই প্রত্যেক কোম্পানিই এখন ফ্রি ভিসার কোন শ্রমিককে কাজ দিতে অনেক হিসেব করে দিচ্ছে। আর এই ক্যাটাগরির কারণেই Red & Yellow ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর জনশক্তির ইকামা (Work permit) নবায়ন বন্ধ হয়ে যায়।
৩।
উক্ত সমস্যাবলী সমাধান হতে না হতেই মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে ব্যপক ধর পাকড় অভিযান। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন কোম্পানিগুলো অলিখিতভাবে তাদের কোম্পানিতে ছুটি ঘোষণা করে। থমকে যায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে অগ্রসর হতে থাকা কার্যগুলো। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাজের অগ্রগতি নেমে আসে ২০% এর নীচে। বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা চেষ্টা তদবির চালাতে থাকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কোন সমস্যার সমাধান না হলে বিষয়টি গড়ায় সৌদি বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ পর্যন্ত।
৪।
পরিশেষে করে এক সপ্তাহ পর সৌদি বাদশার বরাত দিয়ে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোম্পানি এবং শ্রমিকদের চলতি সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু শর্ত সাপেক্ষে ৩ (জুলাই-০৯-২০১৩ ইং পর্যন্ত) মাসের মধ্যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। যা সৌদি আরবের জাতীয় পত্রিকাগুলো সহকারে বিভিন্ন দেশের পত্রিকাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। এতে সকল কোম্পানিগুলো আবারও ফিরে পায় কর্মচাঞ্ছল্যতা। পূর্বের ন্যায় সবকিছু চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এখানে কিছু শর্ত পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হল।
কোম্পানি পর্যায়ঃ
ক) যে সমস্ত কোম্পানি এখনো (Green) ক্যাটাগরিতে আসতে পারেনি, এই ৩ মাসের মধ্যেই (Green) ক্যাটাগরিতে আসতে হবে।
খ) যে কোম্পানিতে ফ্রি ভিসার জনশক্তি কর্মরত আছে, তাদেরকে ট্র্যান্সফার করিয়ে নিতে হবে।
গ) কোম্পানির ভিতরে যার যে পেশা ইকামা অনুযায়ী আছে, সে পেশা অনুযায়ী তাকে কাজ করতে হবে। অন্যথায় পেশা পরিবর্তন করতে হবে।
ব্যক্তি পর্যায়ঃ
ক) যে সমস্ত প্রবাসীদের বৈধ কাগজপত্র নেই তারা এই ৩ মাসের মধ্যেই দেশে ফিরে যাবে।
খ) যারা ফ্রি ভিসায় আছে কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন, তারা যেন এই ৩ মাসের মধ্যেই যে কোম্পানিতে কাজ করার ইচ্ছা সে কোম্পানিতে ট্র্যান্সফার হয়ে যায়।
গ) যাদের ভিসায় পেশা একরকম অথচ কাজ করছে অন্য পেশায় তারা যেন তাদের কর্ম অনুযায়ী পেশা পরিবর্তন করে নেয়। যেমনঃ ড্রাইভারের ভিসায় এসে কেউ সাধারণ শ্রমিকের কাজ করতে পারবেনা।
এখানে শুধু বড়ধরণের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হল। এছাড়াও আরও অনেকগুলো শর্ত রয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর আহ্বান!!!
১।
এই ৩ মাসের সুযোগ দেয়ার খবরে তোলপাড় শুরু হয় নিউজ মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কিছুদিন পর হঠাৎ করে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জনাব ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন গণমাধ্যমের ব্যক্তিদের মারফতে আহ্বান জানান, সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাসকারীরা যেন এই তিন মাসের ভিতরই বাংলাদেশে ফিরে আসে। সেখানে তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন “আমাদের অনুরোধেই সৌদি সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে”। কথাটি শুনে এখানে অবস্থানরত প্রায় সকল প্রবাসীরাই কিং কর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়ে। কারণ হল এখানকার সকলেরই জানা আছে এই সুযোগটি বাদশাহ আবদুল্লাহ নিজেই দিয়েছেন, এবং সেটা কোন দেশের বা ব্যক্তির বিশেষ কোন অনুরোধে নয়।
২।
মাননীয় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সকল অবৈধ বাংলাদেশী দেশে ফিরে যাবার আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু কিভাবে দেশে ফিরে যেতে হবে সে বিষয়ে কোন দিক নির্দেশনা দেননি। কেননা তিনি খুব ভাল করে জানেন যে, এখান থেকে অবৈধ কোন প্রবাসীকে ফেরত যেতে হলে আউট পাস নেবার প্রয়োজন হয়। আর আউট পাসটি নিতে হয় স্ব স্ব দূতাবাস থেকে। তিনি খুব সম্ভবত এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় যে এখানে বাংলাদেশ দূতাবাসে গেলে আউট পাস পাওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই। যদি কেউ পেয়েও যান তাহলেও সেটা কাজে লাগেনা।
৩।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী কি বুঝে না কি না বুঝেই সবাইকে দেশে ফেরত যাবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সেটা একটু ব্যখ্যা করা দরকার। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে তিনি বিষয়টি না বুঝেই সবাইকে ফিরে যাবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আর যদি তিনি বুঝে এই আহ্বান জানিয়ে থাকেন তাহলে সেটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? কারণ একসময় অবৈধ প্রবাসী বলতে শুধুমাত্র যাদের ইকামা ছিলনা তাদেরকেই বুঝানো হত। কিন্তু বর্তমানে অবৈধ বিষয়টি শুধু ইকামার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইকামার গণ্ডী পেরিয়ে নতুন নতুন অনেক কিছুই যুক্ত হয়েছে এই তালিকায়। যা পূরণ করা বাংলাদেশী প্রবাসীদের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছেনা।
কারনঃ
ক) বর্তমানে বাংলাদেশীদের ট্র্যান্সফার বন্ধ
খ) বাংলাদেশীদের পেশা পরিবর্তন বন্ধ
গ) বাংলাদেশীদের আউট পাস বন্ধ
উপরোক্ত তিনটি সমস্যা ছাড়াও আরও অনেক সমস্যায় বাংলাদেশী প্রবাসীরা জর্জরিত। যাইহোক আপাতত এই তিনটি সমস্যা সমাধান হলেই কিছুটা রক্ষা। অপরদিকে এই তিনটি সমস্যার সমাধান না হলে, যারা অবৈধ আছে তাদের সবাইকে কারাভোগের মাধ্যমে দেশে ফেরত যেতে হবে। আর যারা বৈধ আছে তাদেরকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যেতে হবে। নতুবা অবৈধভাবে এখানে থাকতে হবে।
বিষয়: সাহিত্য
১৭২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন