পূরাতন পাতা থেকে- "হুজুরের বউয়ের মনের দু:খ - ১" লিখেছেন "মেধাবিকাশ"
লিখেছেন লিখেছেন আবু সাইফ ১৭ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:১০:৩২ রাত
হুজুরের বউয়ের মনের দু:খ - ১
লিখেছেন মেধাবিকাশ ২৮ নভেম্বর ২০১২
http://www.sonarbangladesh.com/blog/mhrahman/137110
মিষ্টি মিষ্টি কথায় অবশেষে হুজুর জীবনের শেষ প্রেমে সফল হইল। হুজুরের সে কি আনন্দ- মাদ্রাসা পাশ হুজুর একেবারে খাটি আরবদেশে জন্মানো, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে (অনার্স) সারাদেশে ফার্ষ্ট কন্যার নাকে নোলক পরাইবে। হুজুর আনন্দে গুনগুন করে- আর লোকে ভাবে হুজুর বুঝি দোয়া পড়ে। জীবনে হুজুর হইবার ব্যপক সুবিধা, মহিলাদের প্রতি হুজুরের দৃষ্টি পড়িলে বিরক্তির বদলে তাহারা ধন্য হন এই ভেবে যে- আমার প্রতি হুজুরের নেক দৃষ্টি পরিয়াছে।
হুজুর অর্থ কষ্টে চাল ভাজা অথবা স্বপ্নে চালের রুটি মনে করিয়া বিছানার চাদর কিংবা পরনের লুংগি চাবায় আর লোকে ভাবে নবী স: ও তো অর্থ কষ্টে ছিলেন, তাই ইনিই খাটি হুজুর। আবার হুজুরের হাতে যখন অঢেল টাকা, মানুষ তখন বলে সুলায়মান আ: কে তো আল্লাহ বাদশাহী দিয়াছিলেন- উভয় অবস্হাকে সুন্নাতে রুপান্তরের পূর্ব শর্ত হইল- আপনাকে হইতে হইবে হুজুর।
শুধুমাত্র কন্যার মা টের পাইলেন- তাহার কন্যা কোন এক ভন্ড হুজুরের তালে পরিয়াছে। কন্যাকে অনেক বুঝানো হইল ঢাকার সাভারে নিয়া। কন্যা নাছোড় বান্দি, কন্যার মা আরেক কাঠি সরস। কন্যার মা কহিলেন- এই হুজুর ভন্ড হুজুর। কন্যার জেদ এই হুজুরই খাটি হুজুর। কন্যার বাবা উভয়ের যুক্তি শোনার পর কহিল, মারে, তুমি কথায় কথায় খুব বেশি ইনাও আর নাকে চোখে ফেনাও, ইনানো আর ফেনানো বাদ দিয়া তোমার এই হুজুর বিবাহ করার মাজেজা আমারে খুইল্লা কও, তবে মনে রাইখো: আমরা বনি কুতুব বংশের লোকেরা বনি ইসরাইল ছাড়া বাহিরে কারো সাথে আত্মীয়তা করিনা। কন্যার মা ঝামটা দিয়া উঠিয়া সিডিতে রহিম বাদশা রপবান এর গান ছাড়িয় দিল: "শোন তাজেল গো মন না বুইঝা প্রেমে মইজো না"
কন্যা কহিল: হুজুর অবশ্যই বেহেশতে যাইবে আর যাওয়ার সময় নিশ্চয়ই আমাকে ফেলে যাবেনা। তাই শুধুমাত্র বেহেশতের লোভে আমি এই হুজুর প্রেমে দেওয়ানা।
কন্যার বাবা শেষ চেষ্টায়: তোমাকে ঢাকাতে একটা ফ্ল্যাট আর সারা জীবন বসে খাওয়ার মতন ক্যাশ টাকা দিতে পারি কিন্তু শর্ত একটাই কাজী বংশের মান ইজ্জত ডুবাইয়া হুজুর বিয়া কইরো না।
কিন্তু ততোদিনে কন্যা যে প্রেমের মড়া- চির ভাসমান, পাথর চাপায়ও যে আর জলে ডুব্বেনা।
কন্যা রাত্তিরে স্বপ্নে দেখিল: দেওয়ান বাগির কাছে বিবাহিত মহিলারা সন্তানের আশায় যাতায়াত করে আর দেওয়ান বাগিও বিশেষ উপায়ে তাদেরকে সন্তান ধারনে সহযোগিতা করেন। আট রশি আর মাইজ ভান্ডার তো সাক্ষাৎ ম্যাজিক। হুজুরদের কতো ক্ষমতা! স্বপ্নের শেষ পর্যায়ে কন্যা খেয়াল করিল, হুজুর বেহেশত্ পানে চলিয়াছেন আর সাথে ঘোমটা টানে পান্জাবির খুট ধরে ধীরে ধীরে চলছেন হুজুর পত্নী। কন্যা সাক্ষাত দেখিতে পাইল: " এইতো আমি, এইতো আমি , এইতো আমি, হুজুরের সাথে বেহেশতে চলিয়াছি। এই হুজুরকে আমি ছাড়িব না, পাছে নিমিষেই হুজুর হারাইয়া যায়।
পরদিন মা মেয়ে আবারও বৎসা। কন্যা কহিল, বিবাহ পূর্বে আমাদের বনি কুতুব জাতের সকলেই স্বপ্ন প্রাপ্ত হয়, যেমন আমার বাবা স্বপ্নে দেখিয়াছিল: তোমার হাত ধরে আসমানে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে- তাই সকলের অমতে তোমাকে বিবাহ করেছেন, আর আমি দেখলাম হুজুরের ছাতির তলে পান্জাবীর খুট ধরে আমি বেহেশতের পথ যাত্রী। মা আমি এই হুজুর কে ছাড়িতে পারিব না।
কন্যা পিতা মাতায় শেষ সন্ধি হইল এ ভাবে যে, তাহারা হুজুরের ইন্টারভিউ নিবেন। পিতা মাতা থাকিবেন পর্দার অন্তরালে। হুজুর বাসায় তাশরিফ নেয়ার পরই কন্যা মারফত তাৎক্ষনিক প্রশ্নটি করা হবে। প্রশ্নটিও তখনই কন্যার বাবা কন্যাকে জানাইবেন পাছে বিসিএস পরীক্ষার মতন আবার প্রশ্ন লিক হয়ে যায়।
যথাসময়ে হুজুরকে ডাকা হইল। হুজুর আসিলেন এবং খেয়াল করিলেন পর্দার ওপারে দুটি ছায়া মূর্তি কঠোর ভাবে প্রতিক্রিয়াশীল। নির্লোভ হুজুর নির্মোহ মনে সকলই বুঝিল আর আনন্দে গুনগুন করিল- কন্যা ভাবিল, হুজুর বুঝি ভাবি শ্বশুড় শ্বাশুড়ি বসিকরণ দোয়া পড়িতেছে " আব্বু আম্মুর এইবার বুঝি আর উপায় নাই"
কন্যার বাবার ডাকে কন্যা অন্দরে ছুটিল, কন্যার বাবা কন্যাকে প্রশ্নটি শিখাইয়া দিলেন। কন্যা আসিয়া হুজুরকে জিগ্ঞাসা করিল:-
" আমার কাছে বিবাহ করা মানে পাহাড় থেকে লাফিয়ে পরে আত্মহত্যার শামিল"
আপনি আমার এই কথাকে কি ভাবে দেখনে?
হুজুর পাকা বাদাম, দু আংগুলের চাপে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা শুন্যের মাত্রায় সকলই বুঝিল। গলা খাকারি দিয়া ছায়া মূর্ত্তিদ্বয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া হুজুর বলা শুরু করিল।
বিবাহ পাহাড় থেকে লাফিয়ে আত্নহত্যা নয়, বরং পাহাড়ের একদম কোনায় মড়া শিউলি গাছটার গোড়ায় লুকানো যে আঁকা বাঁকা মেঠোপথ আছে সেই পথ ধরে হাতে হাত রেখে হেটে যাওয়া। শুধুমাত্র ধর্মীয় কারনে বিবাহ করা প্রেমিক যুগলই সে পথের সন্ধান পায়। সে পথ ধরে একটু আগালেই শ্বেৎচন্দনের প্যাচানো প্যাচানো সিঁড়ি সাথে বেলি ফুলের সুবাস আর মাধবী লতার আড়াল, চাঁদ তারারা সেই সিড়ির খুটি। সিড়ি নেমে গ্যাছে পাথরের দেশে, যার নীচে ঝর্ণা প্রবাহমান। পাহাড় থেকে পাথরে সরাসরি পড়লে তো মারা পরতেই হবে, কিন্তু আমার হাত ধরে সেই সিড়ি দিয়ে নামলে- পাহাড়ের নীচে বিশাল এক গুলিস্হান।
কন্যা ঢোক গিলিয়া কহিল: পাথরে গুলিস্হান?
হুজুর কহিল: তুমি চাহিলে পাথরে কেন, সাগরেও গুলিস্হান বানাবো, তুমি যাবে আমার সাথে সেই পাহাড়ের পাদদেশে?
এই উত্তরে কন্যা কাইত। কন্যার মা প্রমাদ গুনিলেন আর কন্যার বৈষয়িক বাবা বুঝিতে পারিলেন:
তাহার পেলে পুষে বড় করা বুট মুষুরী খাওয়ানো আদরের কইতরি বেগম এইবার নিজের পাখায় উড়াল দিবে।
১৯৯৮ সালের ১০ ই অক্টোবর হুজুরের বিবাহ হইয়া গেল।
চলিবে------
হুজুরকে পূজি করিয়া বেহেশতে যাইবার এই অভিলাশ বা আবেগের মুল্য বৈষয়িক পৃথিবীতে শুন্যের মাত্রায় হইলেও কন্যা ইহাকেই গুরুত্ব দিয়া পিতা মাতাকে রাজী হইতে একপ্রকার বাধ্য করিল।
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : বিবাহ
বিষয়: বিবিধ
৪৫৪৭ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
এই কন্যা অনেকেরই পরিচিত, আমাদের গর্ব!
আপনিও নামে চিনবেন!
হুজুর
[url
হুজুরের বৌ
href="http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/bloglist/3047/rehnuma" target="_blank"]হুজুরের বৌ[/url]
অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো! সেই প্রিয় ব্লগ এবং মানুষগুলো!
লিখাটা আগেও পড়েছিলাম আবারো পড়লাম! শুকরিয়া শেয়ার করার জন্য!
কিন্তু "হুজুর" আর আমাদের কথা মনে রাখলেননা!
আর সেই "একেবারে খাটি আরবদেশে জন্মানো, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে (অনার্স) সারাদেশে ফার্ষ্ট" কন্যাও সংসার নিয়ে বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বোধ হয়!
লেখায় ধরে রাখার চুম্বকী ক্ষমতা আছ্ব!
অনেক অনেক মুগ্ধময় ভাল লাগা জানালাম!
মানুষটাই তো চুম্বকের মত-
দেখলেন না- কেমন করে "কন্যাজয়" করলেন!!
আল্লাহতায়ালা তাঁহাদের উছিলায় দুনিয়াবাসীকেও জান্নাত নির্মানের তৌফিক দিন
শেষ পর্যন্ত পড়ার অপেক্ষায় রইলাম.........
আর কোথায় পাবেন!!!
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হুজুর এবং হুজুরের বউ দুইজনই এখন ব্লগ থেকে অবসর নিয়া দুনিয়াতে বেহেশত নির্মানের চেষ্টায় লিপ্ত আছেন!!
ধন্যবাদ আপনাকে
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হুজুর এবং হুজুরের বউ দুইজনই এখন ব্লগ থেকে অবসর নিয়া দুনিয়াতে বেহেশত নির্মানের চেষ্টায় লিপ্ত আছেন!!
হুজুর
[url
হুজুরের বৌ
href="http://www.bdfirst.net/blog/blogdetail/bloglist/3047/rehnuma" target="_blank"]হুজুরের বৌ[/url]
আমিও তো কিছুই বুঝলামনা যে
কিছুই বুঝলেন না কেন
১৯৯৮ সালের ১০ ই অক্টোবর হুজুরের বিবাহ হইয়া গেল।
বুঝলাম হুজুর শুধু ভন্ড ই নয় ,
চালাক এবং প্রেমিক ও বটে .
আল্লাহতায়ালা তাঁদের কবুল করুন!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন