"/> টুডে ব্লগঃ :-@ওয়াহাবী মতবাদের বিকৃতিঃ "কেবল আমিই ঠিক পথে আছি" 8->

Chatterboxওয়াহাবী মতবাদের বিকৃতিঃ "কেবল আমিই ঠিক পথে আছি" Day Dreaming

লিখেছেন লিখেছেন আবু সাইফ ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:০৪:৫১ রাত



নযদের ওয়াহাবের ইতিহাস হচ্ছে একটি ধর্মীয় ভাবধারার ইতিহাস, যে-ভাবধারা প্রথমে উদ্দীপনা ও প্রত্যাশার ডানায় ভর করে উঠেছিলো আকাশে এবং পরে লুটিয়ে পড়েছে ‘কেবল আমিই ঠিক পথে আছি’ এই অহমিকা বোধের নিম্নভূমিতে;


স্বতন্ত্র পড়শী জাতিগুলির মধ্যে জাতিগত অপরিচয় যে দুশমনি সৃষ্টি করতে পারে, প্রায়ই দেখা যায়, নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত গোত্রগুলির মধ্যেও জীবনের আভ্যন্তরীণ ছন্দে-তালে সামান্য একটু পার্থক তার চেয়ে বেশি দুশমনি পয়দা করতে পারে।

রাজনৈতিক প্রতিদ্বিন্দ্বিতা ছাড়াও আরো একটি ব্যাপারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে আরবের উত্তর এবং দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যকার আবেগাত্মক বৈপরীত্যের ক্ষেত্রে।

নযদের দক্ষিণেই, রিয়াদের নযদিকে প্রায় দু’শো বছর আগে আবির্ভূত হয়েছিলেন পিউরিটান সংস্করক মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব; এবং বিভিন্ন গোত্রকে- যারা নামে মাত্র মুসলমান ছিলো সে সময়ে- উদ্দীপিত করেছিলেন ধর্মীয় এক নতুন আবেগে। তখনকার দিনের অখ্যাত ইবনে সাউদের খান্দানে- যার ছিলো ছোট্ট শহর দাবিয়া’র সরদার- এই সংস্কার পেয়েছিলেন সেই লৌহ বাহু, যারা তাঁর প্রেরণাগর্ভ বাণীকে দেয় কর্মে শক্তি এবং কয়েক যুগের মধ্যেই আরব উপদ্বীপের এক বিশাল অংশকে সেই জ্বলন্ত আপোসহীন বিশ্বাসের আন্দোলনৈর আওতায় করে ঐক্যবদ্ধ- বিশ্বে যা পরিচিত ‘ওয়াহাবী মতবাদ’ নামে।

গত দেড়শো বছরের সবকটি ওয়াহাবী যুদ্ধ এবং বিজয়ের ক্ষেত্রেই দক্ষিণের এই লোকেরা হামেশা উচ্চে তুলে ধরেছে পিউরিটানিজমের ঝাণ্ডা, আর উত্তরের লোকেরা কেবল আধমনাভাবে থেকেছে ওদের সাথে, কারণ তন্ত্রের দিক দিয়ে শাম্মার কবিলা ওয়াহাবী মযহাবের সাথে একমত হলেও দক্ষিণের জ্বলন্ত অনমনীয় ধর্মীয় প্রেরনা থেকে ওদের হৃদয় সবসময়ই অবস্থান করেছে বহুদূরে।

সীমান্ত দেশ সিরিয়া এবং ইরোকের কাছাকাছি বাস করায় এবং সবসময়ই ওদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক থাকায় শাম্মার কবিলা বহু যুগের ধারায় তাদের দৃষ্টিভংগিতে লাভ করেছে একটি কোমল উদাসীনতা আর আপোসের জন্য মানসিক প্রস্তুতি, যা অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন দক্ষিণের মানুষদের কাছে অজ্ঞাত।

দক্ষিণের লোকেরা কেবল চরমের সাথেই পরিচিত, এবং গত দেড়শো বছরে ওরা জিহাদের খোয়াব দেখা ছাড়া আর কিচুই ভাবেনি। গর্বিত উদ্ধত এসব লোকেরা মনে করে, কেবল ওরা নিজেরাই হচ্ছে ইসলামের খাঁটি প্রতিনিধি এবং আর সকল মুসলিম জাতিই হচ্ছে খারেজী।

এসব সত্ত্বেও ওয়াহাবীরা কোন আলাদা ফেরকা মোটেই নয়

‘ফেরকা’র কথা উঠলেই বুঝতে হবে কতকগুলি আলাদা আলাদা মতের অস্তিত্ব রয়েছে- যা একটি ফেরকার অনুসারীদেরকে একই ধর্মের আর সকল অনুসারী থেকে আলাদা করে দিয়েছে, ওয়াহাবী মতবাদে কোন পৃথক বিশ্বাস নেই;

পক্ষান্তরে এ আন্দোলন, ইসলামের মৌলিক শিক্ষার চারপাশে বহু শতাব্দীর পরিক্রমায় যেসব আস্তর পড়েছে এবং যেসব নীতি ও বিশ্বাস ইসলামের উপর আরোপিত হয়েছে সেগুলি দূর করে রাসূলুল্লাহর মৌলিক শিক্ষায় ফিরে যেতে চেয়েছে। আপোসহীন স্পষ্টতার দিক দিয়ে এ আন্দোলনে নিশ্চয়ই এমন একটা উদ্যোগ ছিলো, যা ইসলামের শিক্ষাকে যেসব কুসংস্কার আচ্ছান্ন করে রেখেছে সেগুলি থেকে ইসলামকে মুক্ত করতে পারতো কালক্রমে।

বলাবাহুল্য, আধুনিককালের ইসলামের সবকটি রেনেসাঁ আন্দোলনেরই- ভারতের ‘আহলে হাদীস’ আন্দোলন, উত্তর আফ্রিকার সেনুসী আন্দোলন, জামালউদ্দীন আফগানী এবং মিসরের মুহাম্মদ আবদুহুর প্রচেষ্টা সব কিছুরই- উৎস সোজা খুঁজে পাওয়া যাবে আঠারো শতকে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব যে আধ্যাত্মিক গতিবেগের সূচনা করেছিলেন তারই মধ্যে।

কিন্তু নযদে তাঁর শিক্ষার যে পরিণতি ঘটেছে তার দু’টি ক্রটি রয়েছে, যে কারণেও এ আন্দোলন আত্মিক বিকাশের একটি শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি।

এর একটি ক্রটি হচ্ছে সেই সংকীর্ণতা যার দ্বারা এ আন্দোলন প্রায় সকল ধর্মীয় প্রচেষ্টাকেই আক্ষরিক অর্থে ধর্মীয় আদেশ- নিষেধ পালনের মধ্যে সীমিত করার চেষ্টা করে, বাইরের আবরণ ভেদ করে তার আধ্যাত্মিক মর্মকেন্দ্র প্রবেশের প্রায়োজনকে অবহেলা করে।

অপর ক্রটিটি খোদ আরব চরিত্রের মধ্যেই নিহিত- কেবল আমরাই সৎ পথ প্রাপ্ত- সেই অত্যুৎসাহী ধার্মিকন্মন্য অনুভূতির মধ্যে- যা কাউকে ভিন্ন মত পোষণ করার অধিকার দিতে রাজী নয়

এ মনোভংগী সত্যিকার সিমাইটের এক বৈশিষ্ট্য যেমন আরেকটি বৈশিষ্ট এর ঠিক বিপরীত- ধর্মীয় ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীনতা।।

আরবদের এ একটি দুঃজনক গুণ যে, ওদেরকে সব সময়ই দোল খেতে হবে দু’টি মেরুর মধ্যে এবং ওরা কখনো একটা মধ্য পন্হা খুঁজে বের করতে সক্ষম নয়।

একদা, প্রায় দু’শো বছর আগে নযদের আরবেরা ছিলো হৃদয়ের দিক দিয়ে মুসলিম জাহানের আর যে- কোন জনগোষ্ঠী ইসলাম থেকে অনেক দূরে; অথচ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের পর থেকে ওরা যে নিজেদেরকে কেবল দীনের যোদ্ধাই মনে করছে তা নয়, বরং দীনের প্রায় একমাত্র মালিক-মুখতার বলেও গণ্য করে আসছে

মুসলিম সমাজের আন্তর্জাগতিক পুনরুজ্জীবনের প্রয়াস ওয়াহাবী মতবাদের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। কিন্তু এ তাৎপর্য ঠিক সেই মুহূর্তেই বিকৃত হয়ে পড়লো যখন এ মতবাদের বাহ্যিক লক্ষ্য- সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা অর্জন পূর্ণ হলো আঠারো শতকের শেষের দিকে, সউদী রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে আরবের বৃহত্তর অংশে সেই রাজ্যের সম্প্রসারণে।

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের অনুসারীরা ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই তাঁর চিন্তাধারা পরিণত হলো সযত্নে রক্ষিত মমিতে, কারণ আত্মা ক্ষমতার গোলাম হতে পারে না এবং ক্ষমতাও চায় না আত্মার গোলাম হতে।

নযদের ওয়াহাবের ইতিহাস হচ্ছে একটি ধর্মীয় ভাবধারার ইতিহাস, যে-ভাবধারা প্রথমে উদ্দীপনা ও প্রত্যাশার ডানায় ভর করে উঠেছিলো আকাশে এবং পরে লুটিয়ে পড়েছে ‘কেবল আমিই ঠিক পথে আছি’ এই অহমিকা বোধের নিম্নভূমিতে; কারণ সমস্ত সদগুণই আপনা-আপনি ধ্বংস হয়ে যায়, যখন তাতে থাকে না প্রত্যাশা আর বিনয়-নম্রতা!!

*******************

উতস্ঃ

মক্কার পথ- (The Road To Mecca) মুহম্মদ আসাদ

অনুবাদঃ শাহেদ আলী

******************

বিষয়: বিবিধ

১৪০৬ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

342236
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১৩
নাবিক লিখেছেন : ভালো লাগলো
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৫৬
283642
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ,
342241
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৩৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ শেয়ার এর জন্য। মুহাম্মদ আসাদ এ্রর এই ব্যাখ্যা ও আশংকা এখন প্রমানিত। সেীদি সালাফিজম থেকে সেনুসী বা মিসলের ইখওয়ান সফল হয়েছে ।
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৫৯
283643
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

ওয়ালটাকুম মিনকুম উম্মাত.... আয়াতটির আরো গভীর একটি ব্যাখ্যা পেলাম নিচের এ বাক্যটির মধ্যে-
আরবদের এ একটি দুঃজনক গুণ যে, ওদেরকে সব সময়ই দোল খেতে হবে দু’টি মেরুর মধ্যে এবং ওরা কখনো একটা মধ্য পন্হা খুঁজে বের করতে সক্ষম নয়।



আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ,
342254
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম।

বইটির উপর থিসিস হয়ে যাচ্ছে! এভাবে ছোট পর্ব করে পড়াতে এর গভীর তাৎপর্য আরো স্পস্ট ভাবে হৃদয়াংগম করা যাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ!

শুকরিয়া Good Luck
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৪৭
283655
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

ঠিক বলেছেন

আমি যখন প্রথমবার পড়েছিলাম তখন তেমন ভালো করে বুঝিনি!
কিন্তু এবার যেন অনেক কিছুই নতুন লাগছে!

হয়তো বাস্তবে দেশটাকে ও মানুষগুলোকে কাছে থেকে দেখেছি, তাই..

জাযাকিল্লাহ..
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৫৬
283658
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আমিও যখন বইটি পড়েছিলাম খুব অল্প সময়ে শেষ করে ফেলেছিলাম! আপনার দেয়া পোস্টের উদ্ধৃতি গুলো পড়তে গিয়ে এমন কিছু বিষয় নজরে আসছে যা একেবারে নতুন লাগছে!
বিজ্ঞ জনেরা এজন্যই বোধকরি বলেছেন পড়া বই বার বার পড়তে! ওয়া ইয়্যাকি! Praying
342264
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৪৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : অনেক কিছু জানলাম, শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:১৭
283664
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ,
342272
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:১৯
কাহাফ লিখেছেন :
যে মহান উদ্দেশ্যে সূচনা হয়েছিল ওয়াহবী আন্দোলন তা আত্ম অহমিকতায় ইসলামের ক্ষতিকারক হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে দিন দিন!
তথ্য সমৃদ্ধ উপস্হাপনা ভাল লাগল!
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪২
283899
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
342281
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:১১
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আগেই বলেছি,নিশ্চয় বইটা পড়া হয়ে যাচ্ছে এভাবে। শুকরিয়া।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩২
283896
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আল্লামা মোহাম্মদ আসাদের দৃষ্টির গভীরতা ও বিশ্লেষণে বিমোহিত হই!!
342293
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৭:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : এই অহমিকাই পতনের মূলও হতে পারে৷
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪০
283897
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

রাষ্ট্রক্ষমতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা ভাল উদ্যোগও নিজেকে বিকৃতি থেকে বাঁচাতে পারেনা- যখন রাষ্ট্রক্ষমতার সাথে মতপার্থক্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, এঁদের অবস্থাও তা-ই!


অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
342478
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৪৯
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : বইটার link চাই, ভাইজান ।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪১
283898
আবু সাইফ লিখেছেন :
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..



http://www.icsbook.info/2033/shibir


অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:০৪
283948
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : Thank you very much
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫৮
284047
আবু সাইফ লিখেছেন : ঠ্যাং ধরে খায়-
ওটা কি ইলিশ মাছ, নাকি পুঁটিমাছ??Rolling on the Floor Rolling on the Floor

জাযাকাল্লাহ খাইর
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬
284130
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : ইলিশ মাছ ই হবে । আমার প্রিয় মাছ বলে কথা, যার আইষও খাওয়া যায়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File