আমরা ১৫কোটি মুসলিম, কিন্তু এমন কেন হলো?
লিখেছেন লিখেছেন আবু সাইফ ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৬:৩৪:৫৭ সন্ধ্যা
জাতির চরম দুরবস্থা চলছে, যাঁরা রাজনীতি করেন আর যাঁরা করেননা, সর্বশ্রেণীর মানুষ আজ দুর্গতির শিকার!
চরম নিরাপত্তাহীনতা, প্রাণহানি ও সম্পদের ধ্বংস, সকল কিছুতে অনিশ্চয়তা, ইয়াতীম ও স্বজনহারা দুর্গত মানুষের আহাজারি ... বিবেকবান মানুষমাত্রেই চরম ব্যথিত ও উতকণ্ঠিত অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন!
কিন্তু এমন কেন হলো???
কিন্তু এমন কেন হলো???
কিন্তু এমন কেন হলো???
আসুন একটু কারণটা খুঁজে দেখি-
মূল কারণটি দূর না হওয়া পর্যন্ত এসব দুর্গতি ফুরাবেনা! হয়তো একটা রূপ বিদায় নেবে এবং অন্যরূপে আবার আসবে!
কারণটা দেখুন-
“যদি তোমাদের পিতারা, তোমাদের পুত্ররা, তোমাদের ভাইরা, তোমাদের স্ত্রীরা, তোমাদের আর ঐসব সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছো আর ঐ ব্যবসায় যাতে তোমরা মন্দা পড়ার আশংকা করছো অথবা ঐ গৃহসমুহ যেখানে অতি আনন্দে বসবাস করছো, (এসব কিছু যদি) আল্লাহ ও তার রাসুলের চেয়ে এবং তার পথে সংগ্রাম করার চেয়ে তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয় তবে অপেক্ষা কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ তার (শাস্তির) নির্দেশ পাথিয়ে দেন”। (সুরা তাওবা-২৪)
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমরা শুনিনি-
আমাদের জাতীয় পন্ডিতেরা নিজেরা শোনেননি, মানেননি, জাতিকেও শোনাননি, মানতে দেননি-
এর ফলাফল কী হবে তা-ও কি আল্লাহতায়ালা বলে দেননি?-
(আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার) সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ পরিত্যাগ করা আল্লাহর লানত, গজব ও ঘৃণার কারণ এবং এ কারণেই দুনিয়া ও পরকালে কঠিন শাস্তি নেমে আসবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন : –
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ ﴿78﴾ كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ﴿79﴾.(المائدة:78-79)
অর্থাৎ বনী ঈসরাইলের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে দাউদ ও মরিয়ম তনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এ কারণে যে তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমালঙ্ঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না যা তারা করত। তারা যা করত অবশ্যই মন্দ ছিল। (সূরা মায়েদা : ৭৮-৭৯)
তবে যারা নিষেধ করবে তারা আখেরাতে বেঁচে যাবে- দুনিয়াতে নয়-
সূরা আ'রাফের ১৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا اللَّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا قَالُوا مَعْذِرَةً إِلَى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ (164)
"আর যখন তাদের মধ্যে থেকে এক দল লোক অন্য দলকে বলল, কেন তারা ওই সব লোকদের সদুপদেশ দিচ্ছেন, যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন অথবা কঠোর শাস্তি দেবেন? তারা এর জবাবে বললঃ আমরা এ জন্য এটা করছি যাতে তোমাদের পালনকর্তার সামনে কৈফিয়ত দিতে পারি এবং তারা যেন তাকে (অর্থাত আল্লাহকে) ভয় করে।" (৭:১৬৪)
আরো দেখুন-
"যে উপদেশ তাদের দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হয়ে গেল। তখন আমি সে সব লোকদের মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম গুনাহ্গার জালিমদেরকে নিকৃষ্ট আজাবের মাধ্যমে তাদের নাফরমানির ফলস্বরূপ। (সূরা আরাফ : ১৬৫)
এখন যাকিছু বিপর্যয় সবই তো আমাদের নিজ হাতের কামাই- যারা মন্দ করেছে, আর যারা মন্দ করতে দিয়েছে- ঠেকায়নি! সুতরাং ...
আমাদের কর্তব্য কাজ করে যাওয়া এবং আল্লাহ’র পথে দা’ওয়াত দিয়ে যাওয়া; বিপদ-বাধা এলে ধৈর্য্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জন করা, সর্বাবস্থায় তাওয়াককাল ও সবর করা!
কিন্তু তাওয়াককাল ও সবর মানে কখনোই আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য থেকে সরে যাওয়া নয় বা ইসলামের কাজ বন্ধ রাখাও নয়।
সবরকারীদের মর্যাদা আল্লাহ’র নিকট অত্যন্ত উঁচুতে। সবরকারীদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (র) বলেনঃ
কিয়ামতের দিন একজন আহ্বানকারী ডাক দিয়ে বলবেন- ধৈর্য্যশীলগণ কোথায়? আপনারা উঠুন এবং বিনা হিসেবে বেহেস্তে প্রবেশ করুন।
একথা শুনে কিছু লোক দাঁড়িয়ে যাবেন এবং বেহেস্তের দিকে অগ্রসর হবেন, ফেরেশতাগণ তাদের দেখে জিজ্ঞেস করবেন কোথায় যাচ্ছেন?
তাঁরা বলবেন, ‘বেহেস্তে’।
ফেরেশতাগণ বলবেন, এখনো তো হিসেব দেয়াই হয়নি।
তাঁরা বলবেন, ‘হা, হিসেব দেয়ার পূর্বেই’।
ফেরেশতারা বলবেন , আপনারা কিরকম লোক?
তাঁরা বলবেন আমরা ধৈর্য্যশীল লোক, আমরা সর্বদা আল্লাহ’র নির্দেশ পালনে লেগে ছিলাম, তাঁর অবাধ্যতা এবং বিরুদ্ধাচরণ হতে বেঁচে থাকতাম, মৃত্যু পর্যন্ত আমরা তাঁর উপর ধৈর্য্যধারণ করেছি এবং অটল থেকেছি।
তখন ফেরেশতাগণ বলবেন, বেশ, ঠিক আছে। আপনাদের প্রতিদান অবশ্যই এটাই এবং আপনারা এর যোগ্য। যান, বেহেশতে গিয়ে আনন্দ উপভোগ করুন।
হযরত আবু ইয়াহইয়া সুহাইর ইবনে সিনান(রা) বর্ণনা করেন, রাসূল(সা) বলেছেনঃ
“মুমিনদের ব্যাপারটা খুবই বিস্ময়কর। (কেননা) তার সকল কাজই কল্যাণপ্রদ। মুমিন ছাড়া অন্যের ব্যাপারগুলি এরকম নয়।
মুমিনদের আনন্দের কিছু ঘটলে সে আল্লাহ’র শোকরগুজারী করে, তাতে তার মঙ্গল সাধিত হয়। পক্ষান্তরে ক্ষতিকর কিছু ঘটলে সে ধৈর্য্য অবলম্বন করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকরই প্রমাণিত হয়”। (মুসলিম)
ইন্নাল্লাজীনা ক্বলু রব্বুনাল্লাহু ছুম্মাস্তাক্বীমু....
ইয়া রব, আমাদের ঐদলে রাখুন (আমীন)
বিষয়: বিবিধ
১২৪২ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রথম মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
ইসলামে ঐগুলো সবই আত্মীকৃত, অস্বীকৃত নয়- যতক্ষণ পৃথক মর্যাদা দাবী না করে!
তবে "বাঁশের চেয়ে কঞ্চি মোটা" হওয়া ইসলাম কখনো অনুমোদন করেনা!
দুঃখিত, আপনার সাথে একমত হতে পারছিনা, ইসলাম কখনো কোনো কুফরি আদর্শকে আত্মিকরণ করেনি। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ প্যাকেজ, এর বাহিরে ভাববার কোন অবকাশ ইসলামে নেই।
ঐ প্যাকেজের ভেতরেই সব- বাইরে হলেই বাতিল!
সুরা হুজুরাত-১৩নং আয়াতে আমি এমনটাই বুঝি!
আমাদের কর্তব্য কাজ করে যাওয়া এবং আল্লাহ’র পথে দা’ওয়াত দিয়ে যাওয়া; বিপদ-বাধা এলে ধৈর্য্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জন করা, সর্বাবস্থায় তাওয়াককাল ও সবর করা!
কিন্তু তাওয়াককাল ও সবর মানে কখনোই আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য থেকে সরে যাওয়া নয় বা ইসলামের কাজ বন্ধ রাখাও নয়।
সহমত।
জাযাকুমুল্লাহ.
কবি বলেন "মন তো নয় আর আয়না.."
কিন্তু রাসুলﷺ বলেন "মুমিন মুমিনের আয়না"
আপনার মনের আয়নাটা ভালো বলেই ভালো লেগেছে-
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ.
হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমন এর সময় বাগদাদের মুসলিম জনতা নাকি লিপ্ত ছিল পাগড়ির দৈর্ঘের সুন্নত এর বিতর্কে!
কোন জাতি যদি ডুবতে চায় তাকে কেউ কি বাচাতে পারে??
"ও্য়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগুল মুবীন"
আমল-আখলাকের চেয়েও বড় সংকট হয়েছে আমাদের চিন্তার জগতে- টেনে নেয়ার বদলে ছুঁড়ে ফেলা পছন্দ করছে!
সেখানে পরিবর্তন না হলে দুর্ভোগ কাটবে বলে মনে হয়না!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ.
রুটি-রুজির কারণ ছাড়াও দ্বীনের মূল বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব হতে পারে!
(বাহ্যতঃ তাই মনে হয়)
পঠন ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
নাম আর পৈত্রিক-মায়ের সূত্রে মুসলিম আজ সমাজের বৃহতাংশ!
মুসলিম নামের অমুসলিম সমাজের সামগ্রিক কর্মকান্ডের ফলাফল বর্তমান এই সামাজিক-রাষ্ট্রীয় অস্হিরতা!
ততকালীন মক্কার "মিল্লাতে ইব্রাহীম"এর মত- যারা তাওয়াফ হাজ্জ কুরবানী ও হাজীদাএ খেদমত করতো!
পঠন ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..
ততকালীন মক্কার "মিল্লাতে ইব্রাহীম"এর মত- যারা তাওয়াফ হাজ্জ কুরবানী ও হাজীদের খেদমত করতো!
পঠন ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আপনাদের দাওয়াতী কাজ বরকতময় হোক.।
জাযাকুমুল্লাহ . .
দ্বিমত করতেই পারেন, আমি তাতেও খুশী!
এ বিষয়ে আপনার সাথে মনে হয় মৌলিক কোন মতপার্থক্য নেই! তবে বর্তমানে ঐ শব্দটি বিকৃত অর্থে ব্যাপক ব্যবহৃত হওয়ায় আমি সন্দেহ এড়াতে চেয়েছি!
কিন্তু একটা কথা বলতেই হয়-
"জিহাদ" এর তরজমায় বাংলা "সংগ্রাম" শব্দটি যথার্থ মনে করি,
কারণ "সংগ্রাম" এর মাঝে "জিহাদ"এর সকল উপকরণ বিদ্যমান!
আর যদি কেউ মনে করেন, ইসলামী শব্দগুলো স্থানীয় বোধগম্য শব্দ/ভাষায় তরজমা করা অনুচিত- তবে তাঁর সাথে বিতর্কের কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আপনার প্রত্যাশা পূরণ হোক
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মানুষ তো আপনাআপনি শিক্ষাগ্রহন করেনা- শিক্ষণীয় বিষয় মানুষের কাছে বোধগম্য উপায়ে পরিবেশন করতে হয়-
আল্লামা সাঈদী সাহেবের জনপ্রিয়তার মূল রহস্যটি ওখানেই
জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন