; “আবেগ” নিয়ে কথা !
লিখেছেন লিখেছেন আবু সাইফ ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৩১:০৬ সন্ধ্যা
; ^^ ) ? ]
টু্ডেব্লগে অতিপরিচিত আমাদের অতি আপনজন অভিভাবক পর্যায়ের বোনের অসুস্থতায় ব্যথিত হয়ে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলাম যে, অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণতা তাঁর অসুস্থতার মাত্রাবৃদ্ধির অন্যতম কারণ! তিনি তাতক্ষণিকভাবে আমার কাছে আমার কথার যথার্থতার ব্যাখ্যা দাবী করে বসলেন- ভাইএর কাছে বড়বোনের এ এমন এক দাবী যা অগ্রাহ্য করা অসম্ভব! অথচ জবাব দেয়া সহজসাধ্য নয়! উপায়ান্তর না দেখে সময় প্রার্থনা করলাম, তিনিও আদরমাখা শাসনের সুরে সময় মঞ্জুর করলেন, আজ তার শেষ দিন! হাজারো সীমাবদ্ধতা সত্বেও প্রতিশ্রুত জবাব হিসেবেই আজকের এ পোস্ট- সম্পূর্ণ জবাব কয়েকটি পর্বে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ!
তাঁর অনুযোগের আলোকে কয়েকটি প্রশ্ন এমন হতে পারে-
>“আবেগ” কি, “আবেগ” কাকে বলে, কত রকমের আবেগ হতে পারে ইত্যাদি
>কিভাবে বুঝবো আমি “আবেগ”তাড়িত হচ্ছি/হয়েছি
>আমার কোন্ কোন্ কাজগুলো “আবেগ”-এর কারণে করা হয়েছে/হচ্ছে
>“কোমল” মানসিকতার কারণে মেয়েদের “আবেগ”তাড়িত বা যাচ্ছেতাই বলা হয়- এটা কি ঠিক
>আখেরাতের জবাবদিহিতার ভয়ে কর্মব্যস্ততা কি “আবেগ”তাড়িত
>দায়িত্বপালনে প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে নিজের অসুবিধা ও কষ্টগুলো উপেক্ষা করাটা কি “আবেগ”
>সংসারের সদস্যদের প্রতি কর্তব্যপালনের কারণে নিজের সুখ-সুবিধা কুরবানী করাটা “আবেগ” নাকি দায়িত্ববোধ
এবং আরো আরো....
আজ শুধু প্রথমটি আলোচনা করবো-
আসামী হয়ে আমাকে বাধ্য হয়ে লিখতে হচ্ছে বটে, কিন্তু প্রসংগতঃ বলার লোভ সামলাতে পারছিনা যে-
টুডেব্লগের হীরকমালার অন্যতম হীরকখন্ড রেহনুমা বিনতে আনিস বা আফরোজা হাসান এ বিষয়ে লেখার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি! বিষয়টিতে যেমন তাঁরা বিশেষজ্ঞ, তেমনি লেখনীতেও কাঁচকাটা হীরার ধার, তাঁরা যদি এ বিষয়ে লিখতেন তবে আমরা অনেক কিছু শিখতে সুযোগ পেতাম! আশা করছি আমাদের প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকবেনা!
এবারে আমার কথা শুরু-
“আবেগ” কি, “আবেগ” কাকে বলে
“আবেগ”-কে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। অনেকে আবেগকে অনুভূতির সমার্থক ধরে নেয়। যদিও অনুভূতি শারিরীক/মানসিক দুইই হতে পারে, আবেগ মূলতঃ মানসিক। এটা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উদ্ভূত হয়, সচেতন উদ্যম থেকে নয়। এর সাথে মাঝে মাঝে শারীরিক পরিবর্তনও প্রকাশ পায়। সেক্ষেত্রে আবেগকে বলা যায় অনুভুতির উৎস। আবার শারীরিক ভাবে বলতে গেলে মসৃন পেশী এবং বিভিন্ন গ্রন্থির কারনে শরীরের অন্তর্নিহিত পরিবর্তনই হল আবেগ ৷ সামগ্রিকভাবে, চেতনার যে অংশ অনুভূতি বা সংবেদনশীলতার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত তাকে আবেগ বলা যায়। আবেগের একটি বিকল্প সংজ্ঞা এমন "শারীরবৃত্তীয় বিশেষ কার্যকলাপের মাধ্যমে অর্জিত ইতিবাচক বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার স্বয়ংক্রিয় মানসিক সংবেদন বা প্রতিক্রিয়া"
দেহে বা মনে সংবেদন সৃষ্টি হওয়াকে বলা হয় অনুভূতি। অনুভূতি শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের হয়। স্পর্শের দ্বারা ঠাণ্ডা, গরম কিংবা ব্যাথা, আরামের অনুভব করা শারীরিক অনুভূতির মধ্যে পড়ে। মনের আনন্দ, ব্যাথা-বেদনা, হতাশা, ভালোবাসা ইত্যাদি মানসিক অনুভূতির উদাহরণ। মানসিক অনুভূতি তীব্রতাভেদে অনেক সময় শারিরীক অনুভুতির উৎস হয়ে থাকে এবং এর বিপরীতটাও। আবেগ ও অনুভূতি দর্শনশাস্ত্রে ও মনোবিজ্ঞানে অন্যতম বিতর্কিত প্রসংগ হিসেবে দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের মাঝে আলোচিত হয়ে আসছে। চিকিতসাবিজ্ঞানও বিষযটি নিয়ে খুব একটা স্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছতে পারেনি আজো!
আবেগসমূহের পরিচিতিমুলক অসংখ্য শব্দ রয়েছে, এর কোনটা যেমন মৌলিকত্বের দাবীদার তেমনি কোনটা আবার কয়েকটি আবেগের সম্মিলিত রূপ আলাদা একটি নামে পরিচিতিলাভ করে! মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে আবেগের শ্রেণাবিন্যাস করেছেন, প্রাথমিক বা মৌলিক, মধ্যবর্তী যৌগিক এবং জটিল-যৌগিক! এসবের কয়েকটির নাম এমন-
রাগ, অনুরাগ, বিরাগ, স্নেহ, উদাসীনতা, উত্তেজনা, সম্ভ্রম, একঘেয়েমি, আত্মবিশ্বাস, উদ্বেগ, যন্ত্রণা, বিরক্তি, উতকণ্ঠা, বিতৃষ্ণা, অবিশ্বাস, বিমূঢ়তা, খলতা, অবমাননার তৃপ্তি, সাহস, কৌতূহল, হতাশা, কৃতজ্ঞতা, বিষাদ, অপরাধবোধ, ভয়, হুজুগ, সুখ, ঘৃণা, আশা, আতংক, শত্রুতা, আঘাত, অযত্ন, ঈর্ষা, জয়, ঘৃণা, নিঃসঙ্গতা, প্রেম, অত্যাচার, দুঃখ, সন্ত্রাস, আস্থা, বিস্ময়, চিন্তা, রূচি, আগ্রহ, পরের দুর্দশায় আনন্দ, অনাস্থা, লজ্জা, ত্রাণ, অনুতাপ, বিষণ্ণতা, সন্তুষ্টি, গর্ব, গর্জন, খেদ..... আরো আরো অনেক কিছু!
প্রাথমিকভাবে আবেগকে অভিনয় মনে করে একে এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ঘটনা ও বিশেষ অবস্থার ব্যাখ্যা চিন্তা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ! উদাহরণস্বরূপ, সাধারণত ভয়ের অভিজ্ঞতায় একটি আতংকের প্রতিক্রিয়া হয় (যেমন দ্রুত হৃত্স্পন্দন ও শ্বাস, ঘাম, পেশী টান) যা স্নায়ুতন্ত্রের চেতনা-পরবর্তী উত্তেজনার মাধ্যমে বিপদ এর একটি মানসিক অবস্থার প্রকাশ ঘটায় এবং পরবর্তী অবস্থা বিবেচনার জন্য এটি একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান! এছাড়াও আচরণগত প্রবণতা আবেগের সাথে যুক্ত হয়! অন্তর্মুখী মানুষ সামাজিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখে এবং তাদের আবেগ গোপন রাখার প্রবণতা বেশিরভাগ সময় জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরী করে! পক্ষান্তরে বহির্মুখী ব্যক্তি নানাবিধ সামাজিক কাজে নিজেকে সংশ্লিষ্ট রাখে এবং যথাসম্ভব তাদের আবেগ প্রকাশ করে দিয়ে ভারমুক্তির চেষ্টা করে!
আবেগের অবদান মনোবিজ্ঞান ছাড়়াও স্নায়ুবিজ্ঞান, এন্ডোক্রিনলজি, ঔষধ, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান এবং এমনকি কম্পিউটার বিজ্ঞান সহ অনেক কিছুর গবেষণাতে গত দুই দশক ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে! আবেগের উৎপত্তি, নিউরোবায়োলজি, অভিজ্ঞতা এবং প্রভাব ব্যাখ্যা সংক্রান্ত অনেক তত্ত্ব এই বিষয়ে আরো গভীর গবেষণার গুরুত্ব প্রমান করে! আবেগ উদ্দীপক ও প্রকাশক উপাদানগুলোর বিস্তৃত ক্ষেত্রসমূহ এবং এসবের উন্নয়নকে গবেষণার বর্তমান ধারণায় আওতাভুক্ত করা হয়েছে ও হচ্ছে, পাশাপাশি PET স্ক্যান এবং fMRI স্ক্যান মস্তিষ্কের আবেগ প্রক্রিয়া অধ্যয়নে সাহায্য করছে!
আবেগ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা এতটাই জটিল এবং এত বেশী বিভিন্ন কারণ জড়িত যে, এক আবেগ থেকে অন্য এক আবেগকে রেখা টেনে পৃথক করা পানিতে দাগ টানার মতই কঠিন- কারণ এমন এক স্থান নির্ধারণ করা দুঃসাধ্য যেখানে এক আবেগ শেষ বা অন্যটা শুরু হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে! এমনকি যখন আমরা "সুখ" বা "রাগ"এর মত একটি সাধারন আবেগ বিশ্লেষণ করি, আমরা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, এই আবেগ বিভিন্ন মাত্রা, গুণাবলী এবং তীব্রতা নিয়ে আসে! উপরন্তু, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, একই সময়ে একাধিক আবেগ গঠিত হয় যা প্রায়শঃই আমাদের মানসিক জটিলতায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করে,. এই প্রভেদ কঠিন হওয়া সত্ত্বেও, মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাগে আমাদের আবেগকে শ্রেণীভুক্ত করার অনেক চেষ্টা করেছেন
১৯৭২ সালে মনোবিজ্ঞানী Ekman বিভিন্ন সংস্কৃতির উপর গবেষণা করে ছয়টি মৌলিক আবেগ চিহ্নিত করেছেন:
Anger রাগ, Disgust বিতৃষ্ণা, Fear ভয়, Happiness সুখ, Sadness বিষণ্ণতা ও Surprise বিস্ময়!
পরবর্তীকালে চেহারার অভিব্যক্তি গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে ১৯৯০ সালে তিনি ঐ তালিকায় আরো যোগ করেছেন:
Amusement পরিতৃপ্তি, Contempt অবমাননা, Contentment তৃপ্তি, Embarrassment বিমূঢ়তা, Excitement হুজুগ, Guilt অপরাধবোধ, Pride in achievement কৃতিত্বগৌরব, Relief অব্যাহতি বা মুক্তি, Satisfaction সন্তুষ্টি, Sensory pleasure আনন্দানুভূতি, Shame লজ্জা !
দর্শন, মনোবিজ্ঞান ও চিকিতসাবিজ্ঞানে আবেগের বহুরূপতা প্রকাশক এমন অনেক শব্দ ব্যবহ়্ত হয়েছে যার উপযুক্ত বাংলা প্রতিশব্দ মেলানো দুস্কর! তথাপি "আমাদের কত প্রকার আবেগ আছে?" এ প্রশ্নের দিতে তাঁরা এখনো সম্পূর্ণরূপে অক্ষম!
^^
((অসমাপ্ত) (চলবে))
বিষয়: বিবিধ
৩২৪০ বার পঠিত, ৪০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুষ্টু পোলার দুষ্টুমি বেজায় মিষ্টি
পোস্টে প্রথম মন্তব্যের জন্য মোবারকবাদ
সবেগ, ভাবাবেগ এবং গতিবেগ
মাত্র তিনটা? ? ?
আপনার হাতেই অন্ততঃ দু-তিন ডজন থাকার কথা
অ(তি)সাধারণ পোস্ট বলেছেল তো!
বানান ভুল হয়েছে নিশ্চয় ! !
জি না জনাব, ভুল হয়নি।
মাত্র তিনটা? ? ?
আপনার হাতেই অন্ততঃ দু-তিন ডজন থাকার কথা
আপনার না বুঝলেও চলবে-
রোজাপু আছেন না!!
সত্যিই কি তাই?
আবেগ নিয়ে এরকম অসাধারন একটা পোষ্ট পড়তে পারব ভাবিনি। শুকরান
আরো অনেক বিস্ময় অপেক্ষা করছে
জাযাকাল্লাহ..
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
শুধু মারাত্মকই নয়-
রীতিমত প্রাণসংহারকও বটে..
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকিল্লাহ..
আরো কিছু বিষয় আসছে-
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
ঠিক ধরেছেন- প্রায় ছয় সপ্তাহ....
না, আবেগের কারণে ময়-
জীবনের বেগ সামলাতে হয়রাণ..
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
আসার পরিমাণটা কমিয়ে দিয়েছেন অনেক!
কোন আবেগ দায়ী নয়তো?
ভাল লাগল উপস্হাপনা!
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান!
না, ইচ্ছে করে কমাইনি-
সাধ ও সাধ্যের দুকুলের সংযোগসেতু ভেংগে পড়লে যা হয় আর কি!!
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
আবেগ অতি বেশি প্রবল,
তাই মনে হচ্ছে আমার
মন্তব্য লিখার ভাষা একেবারেই
হয়ে গেল অচল ।
এমন হাদিয়া.!!
আমার খুব খুশী লাগছে..
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকিল্লাহ..
আপনার আবেগ যেন নিয়ন্ত্রিত ও কল্যানকর হয়
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
আমি যে ভাই কত বিষয়ে বিশেষ+অজ্ঞ তা আমি নিজেও জানিনা..
(আল্লাহুম্মা সুবহানাকা লা ইলমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা..)
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
আবু সাইফ লিখেন কম। মন্তব্য করেন বেশী। আমাদের দাবী হল - লেখাটা যেন একটু বাড়ান।
একমত হলে আওয়াজ তুলুন।
লেখককে মোবারকবাদ।
আরেকটি কথা -
প্রতিটি পর্ব - ফেবুতে দেয়া। লিংক নয় - সরাসরি।
উপকৃত হবে সবাই।
লেখাটা শেষ হলে ফেবুতে সরাসরি দেবার ইচ্ছে আছে, ইনশাআল্লাহ
পঠন ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন