একজন শ্রেষ্ঠ নারী বেগম রোকেয়া by শাহ্ আব্দুল হান্নান [কপি-পেস্ট]
লিখেছেন লিখেছেন আবু সাইফ ২৯ মে, ২০১৪, ০৪:১৪:৩৭ বিকাল
লেখাটির গুরুত্ব বিবেচনায় কপি-পেস্ট করা হলো-
***
একজন শ্রেষ্ঠ নারী বেগম রোকেয়া by শাহ্ আব্দুল হান্নান নারী অধিকার
*
বেগম রোকেয়া ছিলেন একজন চিন্তাবিদ। সে সাথে সত্যিকার অর্থেই একজন ইসলামী চিন্তাবিদও ছিলেন। যিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা, গবেষণা ও ব্যাখ্যা করেন তিনিই ইসলামী চিন্তাবিদ। তিনি ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি বা ভুল দূর করেন। কাজেই এসব অর্থে বেগম রোকেয়াকে ইসলামী চিন্তাবিদ বলতে হবে। অবরোধ, নারী স্বাধীনতা, পর্দার প্রশ্নে, অশ্লীলতা, যৌতুক প্রথা, বিধাব বিবাহ, বাল্য বিবাহ, তালাক নিয়ে ভ্রান্তি ও বাড়াবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি ইসলামের সঠিক অবস্থান তুলে ধরেছেন।
রোকেয়াকে নিয়ে যারা বির্তক সৃষ্টি করতে চান, তারা তার সামগ্রিক লেখনী ও জীবনের শিক্ষা বাদ দিয়ে খন্ডিত কিছু উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন। এসব বির্তক ইতোমধ্যেই নানাভাবে অত্যন্ত সার্থকতার সাথেই খন্ডন করা হয়েছে। বেগম রোকেয়ার একটি উদ্ধৃতি দেয়া হয় যাতে তিনি বলেছেন,
‘আমরা প্রথমত যাহা মানি নাই পরে ধর্মের আদেশ ভাবিয়ে শিরোধার্য করিয়াছি। ……আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ ঐ ধর্মগুলোকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করিয়াছেন।’
এখানে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। কিন্তু যদি রোকেয়ার সামগ্রিক সাহিত্যের আলোকে এ মন্তব্য ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে দেখা যাবে এসব হচ্ছে মূলত তার ক্ষোভের কথা। এখানে ধর্মগ্রন্থ বলতে কোনোভাবেই কোরআন বা হাদিসকে বোঝানো হয়নি। বরং সে সময় ধর্মগ্রন্থের নামে কিছু অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তির বই প্রচলিত ছিল যাতে নারীর অধিকারের বিপক্ষে বলা হতো। কোরআনে সামগ্রিকভাবে নারী পুরুষের সাম্যের কথা বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন,
“যদি ঈশ্বর কোনো দূত রমণী-শাসনের নিমিত্তে প্রেরণ করিতেন, তবে সে দূত বোধহয় শুধূ এশিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকিতেন না। দূতগণ ইউরোপে যান নাই কেন? আমেরিকা এবং সুমেরু হইতে কুমেরু পর্যন্ত যাইয়া ‘রমণী জাতিকে নরের অধীনে থাকিতে হইবে’ ঈশ্বরের এ আদেশ শুনান নাই কেন? ঈশ্বর কি কেবল এশিয়ারই ঈশ্বর?”
তার এ কথায় দূত বলতে রাসূল (সা) কে মনে করা সঙ্গত হবে না।
বরং যে সকল পুরুষ অন্যায়ভাবে এ অঞ্চলে নারীকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন তাদেরকেই বোঝানো হয়েছে।
কেননা রোকেয়া তার বিভিন্ন লেখায় হযরত মোহাম্মদ (স) কে বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রাণভরে স্মরণ করেছেন।
তারচেয়েও বড় কথা ‘মতিচূর’ প্রথম খন্ডের দ্বিতীয় প্রবন্ধ ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’ ১৩১১ ভাদ্রের ‘নবনূর’ এ প্রকাশিত হয়েছিল ‘আমাদের অবনতি’ শিরোনামে। এতে মূল প্রবন্ধের ২৩’শ থেকে ২৭’শ পর্যন্ত পাঁচটি পরিচ্ছদ পরিবর্জিত হয়ে নতুন সাতটি অনুচ্ছেদ সংযোজিত হয়েছিল যাতে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ ছিল না।
অথচ আজও রোকেয়ার এ দু’একটি উদ্ধৃতিকে অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে।’ (দ্রষ্টব্য: বেগম রোকেয়া ও ইসলাম, এ. এ. রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দি উইটনেস প্রকাশিত ‘রোকেয়া সন্ধানে’ হতে)।
১৩৩৮ সালের মাসিক মোহাম্মদীতে মুসলমানদের নামের বিকৃতির বিষয়ে কঠোরভাবে দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন। মুসলমানদের নাম আরবি ভাষায় হবে এটিই ট্রাডিশন। এটি তাকে সঠিক পরিচয় দেয়। রোকেয়া এর উপর দৃঢ় থাকতে বলেছিলেন।
অথচ আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে এ থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা চলছে। এখন আমাদের নামের বিকৃতি থেকে সরে আসতে হবে।
তিনি ১৩৩৮ সালের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা মাসিক মোহাম্মাদিতে স্পষ্টভাবে বলেছেন,
“ছেলেবেলায় আমি মার মুখে শুনতাম, ‘কোরআন শরীফ ঢাল হয়ে আমাদের রক্ষা করবে’ এসব কথা অতি সত্য। কোরআন শরীফের সার্বজনীন শিক্ষা আমাদের নানা কুসংস্কারের বিপদ থেকে রক্ষা করবে। কোরআন শরীফের বিধান অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম আমাদের নৈতিক ও সামাজিক অধঃপতন থেকে রক্ষা করবে।”
এত স্পষ্ট বক্তব্যের পরও কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীর মতে রোকেয়া কোনো বিশেষ ধর্মকে বাতিল করেননি, বাতিল করেছেন সর্ব ধর্মকেই- বস্তুত এ ধরনের মন্তব্য চরম মিথ্যাচার ও একাডেমিক ডিজঅনেষ্টি।
অথচ আশ্চর্যের বিষয় এরাই বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবী সেজে বসে আছে।
বেগম রোকেয়া একজন উঁচু মানের সমাজ সংস্কারক ছিলেন। উপমহাদেশের গত হাজার বছরের ইতিহাসে তার মতো এত বড় সমাজ সংস্কারক খুব কম ছিলেন।
শুধু উপমহাদেশে নয় সমগ্র বিশ্বের কয়েকজন সেরা সমাজ সংস্কারকের নাম বললে তার নাম বলতে হয়। এটি সরকার ও আমাদের দায়িত্ব যে এত বড় প্রতিভভাকে সমগ্র বিশ্বে পরিচিত করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, সকল মানুষের রূহ একই সঙ্গে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন (সূরা আরাফ : আয়াত ২৭২)। অত:পর আল্লাহ বলেন, তিনি মানব ও মানবী উভয়কে সর্বোত্তম কাঠামোতে সৃষ্টি করেছেন (সুরা তীন)।
এরপরও যারা বলেন, নারী, পুরুষের চাইতে দুর্বল বা নারীর হৃতপিন্ড ছোট কিংবা মগজ ছোট- তারা কোরআনের বিপরীত কথা বলেন।
সূরা নিসার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, সকল মানব-মানবী হযরত আদম (আ) থেকে সৃষ্ট। অতএব আমাদের মধ্যে অকারন বিভাজন কেন?
যারা প্রকৃতই রোকেয়ার চিন্তাচেতনাকে তুলে ধরতে চান তাদের দায়িত্ব হচ্ছে বেগম রোকেয়া’র অপব্যবহার রোধ করা। বেগম রোকেয়াকে যারা ইসলাম বিরোধীদের দলভুক্ত বলে প্রচারণা চালান তাদের শৃঙ্খল থেকে রোকেয়াকে মুক্ত করে সঠিকভাবে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই। নারী স্বাধীনতা রাসূলের (স) সময় থেকেই শুরু হয়েছে।
বর্তমান শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ আল্লামা আবদুল হালিম আবু শুক্কাহ-র গবেষণার ফসল ছয় খন্ডের বিশাল গন্থ ‘রাসুলের যুগে নারী স্বাধীনতা’ থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে দু:খের বিষয় মুসলমানরা রাসূল (স) এর শিক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি। রাসূল (স) যে দৃষ্টিতে মেয়েদের দেখতেন সে দৃষ্টিতে আমরা দেখি না। প্রাথমিক ইসলামী পৃথিবী ছিল তেমনই এক পৃথিবী, সেখানে পুরুষ ও নারী ছিল একে অপরের বন্ধু ও অভিভাবক। তারা এক সাথে নামাজ পড়তেন, সামাজিক কাজ করতেন, সত কাজের আদেশ ও অসত কাজের নিষেধ করতেন- এমনকি যুদ্ধেও অংশ নিতেন।
বেগম রোকেয়াও সে রকম এক পরিপুর্ণ ইসলামী সমাজে বিশ্বাস করতেন। তারপরও তাকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। তার ব্যাপারে সমাজে বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়।
বলা হয়, তিনি ধর্ম ও পর্দার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন- এটি একবারেই একটি ভুল ধারণা।
বিশ্বের অন্যান্য স্থানের ন্যায় আমাদের উপমহাদেশের নারীরা বহুকাল যাবত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বঞ্চিত ও নির্যাতিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীদের ব্যাপারে সংকীর্ণতা আমাদের সমাজের বৈশিষ্ট্য, যার প্রধান কারণ হলো কুসংস্কার ও বাড়াবাড়ি।
এসবের বিরুদ্ধে যে কন্ঠটি সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে তা হলো বেগম রোকেয়া। তারই প্রচেষ্টায় একশ’ বছর পূর্বের তুলনায় বর্তমানে নারীর অবস্থা কিছুটা উন্নতি লাভ করেছে বলে মনে হয়। বেগম রোকেয়া যে সামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্ধত্ব ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে সে বিবেচনায় তার বলিষ্ঠ ও সাহসিকতা আমাদেরকে অভিভূত করে।
সে সমাজে এমন বিপ্লবী কথা উচ্চারণ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু বেগম রোকেয়া নির্ভীক চিত্তে তার বক্তৃতায়, লেখায় ও কাজে নারী মুক্তির কথা ব্যক্ত করেছেন, এবং সামাজিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহনের কথা বলেছেন।
সেসব দিক থেকে বেগম রোকেয়া যে কোনো বিবেচনায় এ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ কয়েকজন নারীর একজন।
এখান থেকে নেয়া : http://imbdblog.com/?p=2326
বিষয়: বিবিধ
১৩২৭ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কোন মানুষই ১০০% নির্ভূল নয়! সব মানুষেরতাদের ভালোগুলো খুঁজে নিয়ে প্রচার ও উতসাহিত করা এবং মন্দগুলো উপেক্ষা ও বর্জন করা সকল বিবেকবান ও ভালোমানুষের কর্তব্য!!
আর অহেতুক কুটতর্ক কখনো কল্যান বয়ে আনেনা!!
বুঝি না কিচ্ছু বুঝি না !
সব জাগায় শুধু বিতর্ক ।
যদিও বলতে চান তিনি ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে বলেন নাই -তবে এই কথার ব্যাখ্যা কি দিবেন ?
মোহাম্মদীয় আইনে দু'জন নারী সমান একজন পুরুষ ।(অর্ধাঙ্গী)
তাছাড়া যদিও ইসলামের স্বপক্ষে বা বিপক্ষে না লিখে থাকেন তবে এটা সত্য যে তার কিছু লেখাকে বর্তমান সময়ের নারী আন্দোলনের ধারক-বাহকরা ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন।কি ? তাই নয় কি?
১নং মন্তব্যের জবাব দেখতে অনুরোধ করছি
আপনি বলেছেন-
মোহাম্মদীয় আইনে দু'জন নারী সমান একজন পুরুষ ।(অর্ধাঙ্গী)
আসলে কথাটি ঠিক নয়!!
শুধুমাত্র মীরাস বন্টনে ও স্বাক্ষ্যদানের ব্যাপারে এটি প্রযোজ্য- তারও অনেক শর্ত আছে!!
আবার মীরাসেও নারী কখনো সমমানের পুরুষের সমানই পায়
[দেখুন: ইসলামের উত্তরাধিকার আইন, মাসিক পৃথিবী,এপ্রিল ও মে-২০১১ সংখ্যা]
এটাত আমি বলি নাই । বলছে রোকেয়া আপু ।
অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধে ।
Islamic Fiqh is also a MUST for leading a correct Mislime life.
Mass people, even a Doctor or Prof. cant find out dos & donts in everyday life by reading only Qur'aan & Hadith, isn't it??
We should follow al kuran and sohi Hadith that's all.
that's all. is a misused and misguided word.
For example: Just think Rules of Islamic Banking or distribution of "Meeras" which can't be worked out by "that's all"
উপরের জবাবগুলো দেখতে অনুরোধ করছি
উপরের জবাবগুলো দেখতে অনুরোধ করছি
বাংলাদেশের জন্মের পূর্বে তাঁকে রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে থেকেও ইসলামী অনিশাসন ও আধুনিক শিক্ষার সুন্দর সমন্বয়ের মাধ্যমে মহিলাদের উন্নয়নের মডেল হিসেবেই উপস্থাপন করে হতো - স্কুলেও পাঠ্য ছিল!!
যাইহোক, ধন্যবাদ আপনাকে। তবে এটা ঠিকযে, এই একটি মাত্র পোষ্টে বেগম রোকেয়াকে আমরা যতটুকু পক্ষের মত করে কথা বলি, তাকে আর কখনও এ কলমে আনা হবেনা। কারণ আমরা সাহিত্য চর্চাকে অর্থর্ব কাজ মনে করি। মাস ব্যাপি বাংলা সাহিত্যর মেলায় আমাদের লেখা কই। সাহিত্য কই। কবি কৈ? যাক, এসব নিয়ে ভাবনা বা তর্ক নয়, কাজ করতে হবে। ধন্যবাদ। আমি আমাদের না করা কাজের কথাগুলোই বললাম।
যাইহোক, ধন্যবাদ আপনাকে। তবে এটা ঠিকযে, এই একটি মাত্র পোষ্টে বেগম রোকেয়াকে আমরা যতটুকু পক্ষের মত করে কথা বলি, তাকে আর কখনও এ কলমে আনা হবেনা। কারণ আমরা সাহিত্য চর্চাকে অর্থর্ব কাজ মনে করি। মাস ব্যাপি বাংলা সাহিত্যর মেলায় আমাদের লেখা কই। সাহিত্য কই। কবি কৈ? যাক, এসব নিয়ে ভাবনা বা তর্ক নয়, কাজ করতে হবে। ধন্যবাদ। আমি আমাদের না করা কাজের কথাগুলোই বললাম।
লোক জড়ো হয়ে য়াবে ইনশাআল্লাহ
লোক জড়ো হয়ে য়াবে ইনশাআল্লাহ
উইকিতে সার্চ দিলে অনেক কিছু পাবেন
পরস্পরবিরোধী তথ্যগুলো নিজ দায়িত্বে মিলিয়ে/বুঝে নিতে হবে
জ্ঞানীদের কথা সঠিকভাবে বুঝতেও তেমন মাপের জ্ঞান লাগে!!
আজকাল তো রাস্তার ভিক্ষুকও অর্থনীতির সবক দিতে চায়!!
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা লেখককে।
নিন, একটু মিষ্টিমুখ করুন
দেখেই মন ভরে গেলো।
শুভেচ্ছা রইলো।
একটু খেয়াল রাখলে ভালো হয়
মন্তব্য করতে লগইন করুন