[u][b] সেকুলারিজমের প্রকৃত তাতপর্য : (কপি-পেস্ট)[/b][/u]
লিখেছেন লিখেছেন আবু সাইফ ০৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:০৫:৩৯ বিকাল
সেকুলারিজমের প্রকৃত তাতপর্য
বাংলাদেশে সেকুলারিজমের অনুবাদ করা হয় ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’। কিন্তু এ অনুবাদ সঠিক নয়। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কথাটি সেকুলারিজমের প্রকৃত তাতপর্য প্রকাশ করে না। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং জনগণ প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পারে না।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রকৃত তাতপর্য হলো, রাষ্ট্র ও শিক্ষাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা। সেকুলারিজমের উদ্ভব হয়েছিল এনলাইটেনমেন্ট আন্দোলন বা ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের মাধ্যমে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এ আন্দোলন শুরু হয় ফ্রান্সে এবং ইউরোপের আরো কিছু দেশে। এটা ছিল ধর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন। তাদের মূল কথা ছিল দু’টি।
প্রথমত, ন্যাচারালিজম (Naturalism)। অর্থাত সৃষ্টি প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে। এখানে ‘স্রষ্টা’ বলে কোনো সত্তার ভূমিকা নেই। অর্থাত এটি স্রষ্টাকে অস্বীকার করারই শামিল।
দ্বিতীয়ত, রেশনালিজম (Rationalism) বা যুক্তিবাদ। অর্থাত মানুষ জীবনে চলার ক্ষেত্রে যুক্তির ভিত্তিতে চলবে, স্রষ্টা বা ওহি বা ধর্মগ্রন্থের নির্দেশের ভিত্তিতে নয়। এটাও নাস্তিকতারই নামান্তর। এ দু’টি ছিল এনলাইটেনমেন্ট মুভমেন্টের মূল কথা। এ চিন্তাধারারই প্রায়োগিক বিস্তার ঘটেছে সেকুলারিজমের নামে। কোথাও এর প্রয়োগ নাস্তিকতার রূপ নিয়েছে; যেমন- রাশিয়া, চীন ও কমিউনিস্ট দেশগুলোয়। অন্যান্য দেশে এটা রাষ্ট্র ও শিক্ষাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে রূপায়িত হয়েছে; যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি। এসব দেশে সরকারি কিংবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা দেয়া হয় না। তবে প্রত্যেক ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিজের অর্থে নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তা করাও হয়। ভারতের শিক্ষাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরকারি কোনো স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ নেই। তবে বেসরকারি স্কুল ধর্মশিক্ষা দিতে পারে। তবে তারা সরকারি সাহায্য নিতে পারবে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ ধরনের ব্যবস্থার সাথে ইসলাম বা কোনো ধর্মেরই কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ধর্মই এ ধরনের ব্যবস্থা সমর্থন করে না। ইসলামের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, রাসূলুল্লাহ সা: নিজেই মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার আইন ছিল ইসলামি শরিয়াহ।
খেলাফতে রাশেদার সময়ও রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল ইসলাম ও ইসলামি আইন। একই কথা সত্য উমাইয়া, আব্বাসি ও উসমানি খিলাফতের ব্যাপারে এবং মোগল রাষ্ট্রের মতো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও। আল্লাহ হচ্ছেন মালিকিন নাস (মানুষের শাসক, সূরা নাস) এবং মালিকাল মুলক (রাষ্ট্রের মালিক, সূরা আলে ইমরান)। কোনো মুসলিমই আল্লাহর চূড়ান্ত ক্ষমতা অস্বীকার করতে পারে না।
সেকুলার ব্যবস্থা বিশ্বে কম-বেশি দুই শ’ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত আছে। এতে তেমন কোনো কল্যাণ হয়নি। সেকুলারিজমের গর্ভ থেকে কমিউনিজম ও ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হয়েছে। এসব মতবাদ মানুষের কোনো কাজেই লাগেনি। সেকুলারিজমের কারণেই উগ্র পুঁজিবাদের জন্ম হয়েছে, যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের সম্পদ লুট করে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেকুলার শাসকেরাই বিশ্বে দেশে দেশে উপনিবেশ বানিয়েছে। সারা বিশ্বকে দাস বানিয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসব উপনিবেশ মুক্ত হয়েছে। সেকুলার শাসকদের কারণেই বিশ্বে প্রথম মহাযুদ্ধ ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ হয়েছে। ভিয়েতনাম ও আলজেরিয়াসহ বহু দেশে রক্তপাত হয়েছে।
সেকুলারিজমের প্রকৃত অর্থ না জানার কারণেই অনেক লোক নামাজ পড়ে, আবার সেকুলার হিসেবে পরিচয় দেয়। সেকুলারিজমের অর্থ বুঝলে এ বিভ্রান্তি দূর হবে। এখন ইসলামি মন বা ধার্মিক মন এবং সেকুলার মনের পার্থক্য তুলে ধরেছি। ইসলামি মন হলো সেই মন, যা কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান খোঁজে কুরআন ও সুন্নাহতে, পরে অন্যান্য দিকে। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে তাদের ধর্মের মধ্যে সমাধান খোঁজে, পরে অন্য দিকে। কিন্তু সেকুলার মন সমাধান খোঁজে বিভিন্ন পণ্ডিতের মতামতে; যুক্তরাষ্ট্র কী করে, রাশিয়া কী করে, চীন কী করে- এসব দিকে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামিমনাদের দায়িত্ব সেকুলারমনাদেরকে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনা। এ জন্য তাদেরকে ইসলামের মৌলিক কিছু বই পড়াতে হবে। আশা করি, এতে ভালো ফল হবে।
লেখক : শাহ আবদুল হান্নান
সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
(নয়া দিগন্ত, ০১/০৪/২০১৪)
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৪ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
হয়তো অনেকেই এখনো পড়েন নি-
এমন ভাবনা থেকেই এখানে শেয়ার করা!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
হয়তো অনেকেই এখনো পড়েন নি-
এমন ভাবনা থেকেই এখানে শেয়ার করা!
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রকৃত তাতপর্য হলো, রাষ্ট্র ও শিক্ষাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা।
ইসলামের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, রাসূলুল্লাহ সা: নিজেই মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার আইন ছিল ইসলামি শরিয়াহ।
ইসলামি মন হলো সেই মন, যা কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান খোঁজে কুরআন ও সুন্নাহতে, পরে অন্যান্য দিকে। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে তাদের ধর্মের মধ্যে সমাধান খোঁজে, পরে অন্য দিকে। কিন্তু সেকুলার মন সমাধান খোঁজে বিভিন্ন পণ্ডিতের মতামতে; যুক্তরাষ্ট্র কী করে, রাশিয়া কী করে, চীন কী করে- এসব দিকে।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
ইসলামি মন হলো সেই মন, যা কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান খোঁজে কুরআন ও সুন্নাহতে, পরে অন্যান্য দিকে।
যথার্থই বলেছেন-
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
হয়তো অনেকেই এখনো পড়েন নি-
এমন ভাবনা থেকেই এখানে শেয়ার করা!
কেন সেকুলার থাকলে কি ইসলাম মানতে পারে না?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
আপনার প্রশ্নের জবাব কিন্তু আপনার উদ্ধৃতির মধ্যেই নিহিত
["সেকুলার" থেকে যে "ইসলাম" মানা যায়না-
এটা বুঝতেই তো "সেকুলারিজম" ও "ইসলাম" পড়া দরকার]
আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিবেন!!
ওয়া ইইয়াকুম
=====================
২।আল্লাহ যদি মালিকিন নাস এবং মালিকাল মুলক হয়ে থাকেন তাহলে প্রচলিত সংবিধান যেখানে মানুষকে প্রকৃত শাসক এবং রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে দেওয়া আছে সেখানে সেই সংবিধান রক্ষার শপথ কোন ইসলামি শরীয়াহর আলোকে?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
১। সেকুলারিজম= ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নয়> "ধর্মহীনতা"
তাই সকল মানুষের ধর্মের স্বাধিনতা অস্বীকার করা হয়।
সকল মানুষের ধর্মের স্বাধীনতা >> এটা ইসলামের নীতি
:
২। এ বিষয়ে আপনি আমার চেয়ে বেশী জানেন বলা আমার ধারণা -
"মানুষ দুনিয়াতে আল্লাহর খলিফা" এবং
"খলিফার ত্রিমাত্রিক ক্ষমতা/মর্যাদা"
এ ব্যাখ্যাগুলো আপনার প্রশ্নের জবাব অনুধাবনে সহায়ক হবে মনে করি!
আমি বলতে চাচ্ছি, সেকুলার শব্দটিকে আমি ধর্মের স্বাধিনতা হিসেবে ব্যবহার করবো, সমস্যা কোথায়? ওরা (অমুসলিমরা) একে ধর্মহীনতা হিসেবে ব্যবহার করবে করুক কিন্তু আমরা মুসলিমরা একে ধর্মের স্বাধিনতা হিসেবে ব্যবহার করবো, এতে তো সমস্যা থাকার কথা নয়। তাই নয় কি?
প্রমিত সংগা(standard definition) বলে একটা কথা আছে, সার্বজনীন স্তরে সেটাই কার্যকর ও অগ্রগণ্য হয়!
:
সে কারণেই 'সেকুলার' শব্দটিকে কেন 'ধর্মের স্বাধীনতা' অর্থে ব্যবহার করা যাবে না।
এমনটা করতে চাইলে শেষ পর্যন্ত সেটা তার জন্মকালীন অর্থে গিয়ে ঠেকবেই!
প্রসংগক্রমে বলি-
গণতন্ত্রের উতসমূল কথা 'সকলের সমান অধিকার' যার সাথে ইসলামের খুবই ঘণিষ্ট সম্পর্ক!
তা সত্বেও এ শব্দটির ব্যবহার/প্রয়োগ নিয়ে কত বিতর্ক!!
:
আর যদি ওটার অন্য কোন প্রমিত অর্থ থাকতো যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক তবে সেটার ব্যবহারও বর্জনীয় হয়ে যেতো!
জাযাকাল্লাহ..
বিভিন্ন অভিধান সেক্যুলারিজমের যে সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দিয়ে থাকে তাতে সেক্যুলারিজমের সঠিক অর্থ প্রকাশ পায় না ।
আমাদের দেশের বোদ্ধা পন্ডিতদের "ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ” (বা "নৈতিকতা ও শিক্ষা ধর্মকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়, এই মতবাদ; ইহজাগতিকতাবাদ, ইহবাদ - বাংলা একাডেমীর ইংলিশ-বেঙ্গলী অভিধান অনুসারে) যেমন ভুল অনুবাদ তেমনি ইসলামপন্থীদের "ধর্মহীনতা” অনুবাদ-ও বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ । কেননা, সেক্যুলারিজম মতবাদধারী কোনো দেশ-ই রাষ্ট্র প্রশাসন থেকে ধর্মীয় প্রভাবকে পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারেনি কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে ঠিক-ই যার ইচ্ছা সে ধর্ম পালন করে - এমনকি কোনো কোনো সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। যেমন, খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে গুড ফ্রাই ডে, ইষ্টার ও ক্রিসমাস ডে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, বাইবেল ছুঁয়ে রাষ্ট্রপ্রধানদের শপথ গ্রহণ, পাদ্রীদের ভাতা প্রধান, আয়করমুক্তি, রাষ্ট্রপ্রধানদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে রোববারে গীর্জায় গমন, ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখ-ভাল করার জন্য মন্ত্রণালয়, ইত্যাদি ।
একমাত্র ঐতিহাসিক পটভূমির ভিত্তিতে-ই সঠিক অর্থ নিরূপণ করা সম্ভব এবং সেটা করলে সেক্যুলারিজমের একটা লম্বাটে ধরণের অর্থ করা যায় -- আমি যেটাকে করেছি - “রাষ্ট্র-ধর্মপ্রভাবমুক্তবাদ” অর্থাৎ সকল রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান (অর্থাৎ জাতীয় জীবন) ধর্মীয় প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার মতবাদ যেখানে ব্যক্তিগত জীবন ধর্মীয় প্রভাবযুক্ত হওয়াকে স্বীকৃতি দেয়া হয় ।
জাযাকাল্লাহ..
“রাষ্ট্র-ধর্মপ্রভাবমুক্তবাদ” অর্থাত সকল রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান (অর্থাত জাতীয় জীবন) ধর্মীয় প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার মতবাদ যেখানে ব্যক্তিগত জীবন ধর্মীয় প্রভাবযুক্ত হওয়াকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
কিন্তু বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডে তো সেটুকুও স্বীকৃত নয়-যদি সে দলের কেউ না হয়!!
(তবে পৌত্তলিকতায় আপত্তি দেখা যায়না!!)
আপনার এ সংগাটিও সংস্কারের সময় হয়েছে মনে হয়!!
অনেক কিছু ক্লীয়ার হল আজ এই লেখাটি পড়ে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন