সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা... ঈদ মোবারক- আসসালাম.....
লিখেছেন লিখেছেন আবু সাইফ ১৫ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:২৮:২৫ সন্ধ্যা
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা... ঈদ মোবারক- আসসালাম.....
রাত পোহালেই আগামীকাল কুরবানী! যারা পশু কিনেছেন বা কিনবেন- সবাজ মাঝেই উতকন্ঠা আগামীকালের কাজ নিয়ে!
এখন অধিকাংশ পরিবারেই ঈদের আগের কয়েকদিনে পশু কিনে কুরবানীর আয়োজন করা হয়! আমাদের শৈশবে, বিশেষতঃ মফস্বলে এমনটা ছিলনা!
আগেকার দিনে অধিকাংশ পরিবারেই কুরবানীর পশু- গরু-খাসি যেটাই হোক, অ-নে-ক আগে থেকে খুব আদর-যত্ন করে পালা হতো! এলাকার মানুষ জানতো যে এটা অমুকের কুরবানীর খাসি বা গরু! এ পশুগুলো অনেক সময় সবজীবাগান ও মাঠের ফসল নষ্ট করতো- কিন্তু কুরবানীর পশুর পরিচিতি থাকায় সাতখুন মাফ পেয়ে যেতো!
এসব পশুকে যে মাত্রায় আদর-যত্ন করা হতো তাতে আমাদেরও কখনো কখনো হিংসা হতো! আর ওরাও তাদের মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকতো!
যে খাবার অন্য গরু-ছাগলে আগ্রহভরে খেতো তাতেও তাদের আপত্তি বা অনীহা দেখা যেতো! বিশেষ আদরে বিশেষ খানা পেতেই তারা এমনটা করতো!
এভাবে কুরবানীর পশুটি পরিবারের একজন মানব-সদস্যের মর্যাদায় অভিষিক্ত হতো, যেমন আদর-যত্নে, তেমনি ভালবাসায়! আর এ পশুটিকে যখন কুরবানীর উদ্দেশ্যে জবাই করা হতো তখন পরিবারের সবাই কম-বেশী কষ্ট অনুভব করতো! এতে প্রিয়বস্তু কুরবানী করার বিষয়টি প্রকাশ পেতো! কেউ কেউ লো কষ্টের কারণে গোস্তই খেতে পারতোনা!
আগেরদিন বা ঈদেরদিন সকালে কুরবানীর পশুকে পুকুরে বা নদীতে অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় গোসল করানো হতো- কখনো সেটাও হয়ে যেতো এক হুলস্থুল ব্যাপার- যদি পশুটা ছুটে পালানোর সুযোগ পেতো!
সাধারণতঃ ছাগল-ভেড়া প্রত্যেকের নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় জবাই করা হতো যেন পরিবারের সব সদস্য জবাইএর দৃশ্য দেখতে পায়- এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত!
আমাদের শৈশবে আমার দাদা ছোটবড় পুরষ-মহিলা সবাইকে- এমনকি রান্নাঘরের কাজ বন্ধ রেখে জবাই দেখতে তাগিদ দিতেন! আর এটা সবার জানাই ছিল যে জবাই দেখতে হবে- তাই রান্নাঘরের কাজও সেভাবে গুছিয়ে নেয়া হতো!
সাধারণ মানুষের পশুগুলো এলাকার মসজিদের ঈমাম বা তাঁর প্রতিনিধি জবাই করতেন! শরয়ী নিয়মকানুন জানা পরিবারের মান্য-গণ্য বিশিষ্টজনেরাও সাগ্রহে জবাই করতেন! কে কয়টা জবাই করেছেল- এমন প্রতিযোগিতাও করতেন কেউ কেউ!
এলাকায় আমাদের পরিবারটি ছিল এ কাজে সামনের কাতারের একটি! তাই আমারও পশু জবাইএর হাতে-খড়ি হয়েছিল স্কুল পেরুনোর পরপরই! সেই থেকে ঈদ-কুরবানী ছাড়াও কত পশু যে জবাই করতে হয়েছে তার হিসাব নেই!
আমাদের শহুরে ছেলেরা এখন হাঁস-মুরগি জবাই করতেও দক্ষ নয়- আগ্রহীও নয়, যদিও খাবার আগ্রহে কমতি নেই! আর খাসি-গরু জবাই করার কথা ভাবতেও হাঁটু কাঁপে- অবশ্যই সবার নয়!
কুরবানীর দিনগুলোতে পশুজবাই করে রক্ত প্রবাহিত করা আল্লাহতায়ালার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ! এ কাজে আন্তরিকতার সাথে আগ্রহী হওয়া ও প্রতিযোগিতা করা নিঃসন্দেহে খুবই ভালো কাজ- যদি তাতে "লোকদেখানো" ভাব কিম্বা অহংকার না থাকে এবং সেটা শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়!
নিজ হাতে পশু জবাই করার সাথেসাথে নিজের ভেতরের পশুটাকেও জবাই করার অনুশীলন এভাবে চলতে থাকলে ব্যক্তিচরিত্রেও এর ছাপ পড়া খুবই স্বাভাবিক!
দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো শৈশবেই মনের মধ্যে গেঁথে দিতে পারাটা অভিভাবকের জন্য একদিকে যেমন কর্তব্য, অপরদিকে এর প্রভাবও কার্যকর থাকে আজীবন!
আসুন আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো শৈশবেই অভ্যস্থ করে তুলে- এরাই তো আমাদের ভবিষ্যতের সম্পদ, পরকালের পূঁজি!
সবার কুরবানী ও ঈদ সুফলদায়ক হোক, আল্লাহতায়ালা যেন কবুল করেন!
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন