** সঞ্জীব চৌধুরী শ্রদ্ধাভাজনেষু ** কৃতজ্ঞতা জানাই **

লিখেছেন লিখেছেন আবু সাইফ ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৪০:১৭ দুপুর

ভূমিকা : দৈনিক আমারদেশ-এ প্রতি সপ্তাহে বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিষ্ট সঞ্জীব চৌধুরীর একটি লেখা প্রকাশিত হয়। গত ২৮মার্চের লেখাটি আমাকে আলোড়িত করেছিল কারা বেশি বিপন্ন

আর আজ ০৫এপ্রিলের লেখাটি আমাকে আবেগ-উদ্বেলিত করেছে

কার দালালি কে করে

তাঁর জন্য দুকলম লেখাটা নিজের জন্যই অপরিহার্য কর্তব্য মনে করলাম। তাঁর উদ্দেশ্যে নিচের কথাগুলো নিবেদিত।

সঞ্জীব চৌধুরী শ্রদ্ধাভাজনেষু,

**********************

শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানবেন। আশা করি ভালো আছেন। আমি পঞ্চাশোর্ধ এক নগন্য পাঠক, অনেকের লেখার সাথে আপনার লেখাও নিয়মিত পড়ি, তবে মন্তব্য বা মেইল করে প্রতিক্রিয়া বা মতামত জানানো হয়না- কদাচিত দু-একাট ব্যতিক্রম ছাড়া। গত সপ্তাহে আপনার লেখাটি পড়ে চোখে পানি এসে গেছিল, আর আজকেরটা পড়ে তো কেঁদেই ফেললাম; আপনাকে একটা মেইল পাঠানো অবশ্য কর্তব্য মনে হলো!!

আমার শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যে অসংখ্য হিন্দু সহপাঠী ও প্রতিবেশী পেয়েছি, সামাজিক সম্প্রীতির যে পরিবেশ দেখেছি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আমলে তা অনেকের কাছেই রূপকথা মনে হতে পারে! আর পেয়েছি এমন কিছু শিক্ষক যাঁদের আদর্-স্নেহের তূলনা শুধু বাবা-মা ছাড়া আর কারো সাথে হতে পারেনা!

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের অধিকার ও সম্মান, প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য, শিক্ষক ও বয়োজেষ্ঠ্যদের প্রতি সুন্দরতম আচরণের যে শিক্ষা শৈশবে পেয়েছি, এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিকতা থেকে তার অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে।

আমার সুস্পষ্ট মনে পড়ে- ধর্মশিক্ষার পিরিয়ডে মুসলিম ও হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের ক্লাশ আলাদাভাবে হতো! কিন্তু মৌলবীস্যার ও পন্ডিতস্যার [আমরা এভাবেই সম্বোধন করতাম, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নাম বলার চর্চা তখন ছিলনা] মাঝে মাঝে সবাইকে নি্যে আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকার বিষয়ক অধ্যায় একসাথে ক্লাশ নিতেন।

আমাদের কিছু পৈতৃক জমি ছিল অনেক দূরে, চাষাবাদ করতেন কিছু অমুসলিম [সাঁওতাল]। তাঁরা যখন ধান নিয়ে আসতেন, ২/৩দিন থাকতেন, জামাই আদরেই সম্মান করতে দেখেছি। আমরা তাঁদেরকে কখনো কাকা-দাদা ছাড়া অন্যভাবে সম্বোধন করার বা নাম বলার সাহসই পেতামনা- আমার দাদা-বাবা আমাদের সে আচরণই শিখিয়েছিলেন! আমাদের পাড়ায় একসময় কিছু খৃষ্টান পরিবার এসে বাস করতে শুরু করেন- প্রথমত নামমাত্র ভাড়াটিয়া হিসেবে, পরে নিজেরাই বাড়ী করেন। তাঁদের সাথে যে সামাজিক সম্পর্ক বিদ্যমান তাতে ধর্মীয় পার্থক্যটা শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেই প্রকাশ পায়, এর বেশী কিছু নয়! ধর্মীয় পরিচয় যথাস্থানে তুলে রেখে সবার সুখে-দুঃখে সবাই সুখী-দুঃখী, এটাই বাংলাদেশের সামাজিক প্রীতিবন্ধনের ইতিহাস! এসবই আপনার জানা!

আসলে বাংলাদেশের এ ভূখন্ডে অমুসলিম-হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির সংকট সাধারণ মানুষে তৈরী করেনি! রাজনৈতিক অসদুদ্দেশ্যেই এর উদ্ভব হয়েছে! এ বিষয়টি আপনার কলমে উঠে আসাতে যতটা শক্তিশালী হয়েছে, একজন মুসলিম লিখলে তা কখনোই হতোনা!! এজন্য আপনাকে হাজার কোটিবার ধন্যবাদ দিলেও তা নগন্য হবে!

আমাদের প্রিয় এ জন্মভূমি আমাদেরই আবাস, আমাদের সন্তান-সন্ততির আবাস, এটাকে সুন্দর শান্তিপূর্ণ ও পারস্পরিক মতের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল থাকার পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদেরই! “আমারদেশ পরিবার” দেশগঠনে যে আপোষহীন ভূমিকা রেখে চলেছে, আর আপনার মত সাহসী মানুষেরা কলমযুদ্ধ করে চলেছেন- স্বপ্নপূরণে সাধারণ মানুষ আপনাদের সাথে আছে, থাকবে! কতিপয় জ্ঞানপাপী সত্য গোপন বা বিকৃত করে আমাদের সুসম্পর্ক নষ্ট করার যে অসত কর্মকান্ডে লিপ্ত তারা ইতিহাসে মন্দরূপেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে!!

আল্লাহতায়ালা আপনাকে সত্যপথে চলার শক্তি-সাহস ও সুস্থ দীর্ঘজীবন দান করুন!!

আবারো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন!!

বিষয়: বিবিধ

১৪৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File