জামাত শিবিরের অর্থনীতি- ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও......
লিখেছেন লিখেছেন জুলিয়া ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:০৩:২১ দুপুর
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আশির দশকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধাপরাধীদের আবার পুনর্বাসন করা হয়। তারা বুঝতে পেরছিল, বাংলাদেশে টিকে থাকতে হলে, এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের অংশ করতে হলে তাদের শক্ত রাজনৈতিক, এবং অর্থনৈতিক ভীত তৈরি করতে হবে।
তাই সময়ের প্রয়োজনের মুক্তিযোদ্ধাদের ছত্র ছায়ায় তারা তাদের অর্থনৈতিক জাল বিস্তৃত করতে শুরু করল। এর জন্য তারা হাতে নিল দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা! দেশের ধর্মপ্রাণ তরুণদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর জন্য ইসলামী ছাত্র শিবিরের নামে দেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে তফসিরের আয়জন করতে লাগল। এই তরুণদের থেকে best mind গুলোকে বাছাই করার জন্য গড়ে তুলল “রেটিনা, ফোকাস, কনক্রিট” এর মত কোচিং সেন্টার। এই best mind গুলোকে কৃতজ্ঞতার ফাঁসে আটকের রাখার জন্য তারা তাদের কর্মসংস্থানও দিল। এই কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং সেই সাথে দেশের মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তারা গড়ে তুলল “ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাঁসপাতাল, ইবনে সিনা হাঁসপাতাল, বিডি ফুডস লিঃ, ইসলামী ইনস্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স” এর মত বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
তাদের চিন্তা ভাবনা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, এবং দেশে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির জন্য তারা নিজেদের মিডিয়া পর্যন্ত সৃষ্টি করল! “দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক আমার দেশ, পাক্ষিক কিশরকন্ঠ” ইত্যাদি পত্রিকা, এবং “দিগন্ত টেলিভিশনের” মত স্যটেলাইট টিভি চ্যানেল। তাদের এই মিডিয়ার প্রকৃত রূপ অবশ্য প্রকাশিত হয়ে গেছে।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে তারা তিলে তিলে কিভাবে এক বিশাল অর্থনৈতিক সম্রাজ্য সৃষ্টি করেছে। আর এই সম্রাজ্য থেকে আয় হওয়া অর্থের অনেক বড় অংশই পরোক্ষ ভাবে জঙ্গিবাদের পিছনেও নিঃসন্দেহে বায় হচ্ছে!
তাই জামাত শিবিরকে দেশ থেকে চিরতরে দূর করে দিতে হলে তাদের এই অর্থনৈতিক সম্রাজ্য আগে ধ্বংস করতে হবে। এই জন্য আওয়ামীলীগ সরকারে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা যাবে না। কারন বিএনপির নির্বাচনী ইস্যু হল ভারত বিদ্বেষ, আর আওয়ামীলীগের ইস্যু হল জামাত শিবির বিদ্বেষ। এই ইস্যু তারা এত সহজে নষ্ট করবে না। তাই যা করার জনগণেরই করতে হবে।
অনেকেই বলেন, এদের প্রতিষ্ঠান গুলো যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতি থমকে যাবে। তাদের সাথে আমি খুব একটা দ্বিমত নই। তাই তারা যেভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এই সম্রাজ্য গড়ে তুলেছে, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমেই, একটা একটা ইট সরিয়ে এই সম্রাজ্যকে ধ্বংস করতে হবে।
আমরা যদি ইসলামী ব্যাংকের সাথে লেনদেন বন্ধ করি, তাহলেই এই সম্রাজ্যের উপর বিরাট আঘাত করা হবে। কাজটি কিন্তু যত কঠিন মনে হয় তত কঠিন না। তবে কাজটি হবে দীর্ঘমেয়াদি। ইসলামী ব্যাংক বা সমমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গুলতে যাদের account আছে, তারা অর্থ উত্তোলন করে ফেলুন। জামাত শিবিরের শেয়ার, ডিবেঞ্চার যারা ক্রয় করেছেন তা বিক্রি করে দিন, এবং নতুন শেয়ার, ডিবেঞ্চার কেনা থেকে বিরত থাকুন। জামতিদের পণ্য ক্রয় করা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে।
সব চেয়ে ভাল হবে যদি কোন ব্যাংক জামাতিদের এসব ব্যাংকের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ব্যবসা করার প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। কিন্তু ব্যবসায়ের সামাজিক কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আমি জানি অনেক ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাই ব্লগ পরেন। তারা অন্ত্যত একবার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন। আমি নিশ্চিত একটি ব্যাংক এই রকম একটি সাহসী পদক্ষেপ নিলে অন্য ব্যাংক গুলোও ক্রমে এইরকম উদ্যগ নিবে।
তাদের মিডিয়া গুলোকে বর্জন করা কিন্তু এত কঠিন না। না দেখলাম আমরা দিগন্ত টিভি, না পড়লাম সংগ্রাম, নয়া দিগন্তের মত পত্রিকা।
রেটিনা, ফোকাস, কনক্রিটের মত কোচিং বর্জন করলে কোন ক্ষতিই আমাদের হবে না। দেশে কোচিং সেন্টারের অভাব নেই। আর কম বেশি সবাই জানেন এই প্রতিষ্ঠান গুলি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাস করে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তা তাদের সমমনা ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়। ফলে দেশের প্রকৃত মেধাবীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
আমরা যদি ধীরে ধীরে জাতীয় জীবনে এই উদ্যগ গুলো বাস্তবায়িত করি, তাহলে জামাত শিবির এই বিরাট লোকসান বহন করতে না পেরে, এই প্রতিষ্ঠান গুলোকে স্বাধীনতার পক্ষের অর্থনীতিক শক্তির কাছে হস্তান্তর করবে। তখন সত্যিই আমরা এই সম্রাজের সুফল ভোগ করব। এবং একমাত্র তখনই জামাত শিবিরের মত অপশক্তি আমাদের মাতৃভূমি থেকে দূর হবে। কিন্তু যত দিন এই সম্রাজ্য তাদের হাতে থাকবে, তত দিন আমরা যত যাই করি, এদের নিঃচিহ্ন করতে পারব না।
বিষয়: বিবিধ
২৮৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন