প্রকৃত বন্ধু কে?

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:৪৩:৪৭ দুপুর

আবুধাবী প্রবাসী আমার এক বন্ধু, ফরিদ চৌধুরী। বয়সে যথেষ্ট সিনিয়র হলেও বন্ধূবাৎসল, আতিথেয়তা পরায়ন এবং খোশগল্প প্রিয় হওয়াতে তাঁর সাথে আমার বেশ জমতো। তাঁর যৌথ পরিবারের সকল সদস্যই ছিল প্রাকটিসিং মুসলিম। কিন্তু বড় ছেলেটিই একমাত্র দূঃখের কারণ। মেধাবী, চৌকষ এবং আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী ছেলে বেলাল চৌধুরী কম্যুনিস্টদের খপ্পরে পড়েছেন। এক পর্যায়ে বেলাল চৌধুরী একটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের জেলা পর্যায়ের নেতৃত্বে সমাসিন হন। এদেশে বামপন্থীরা গণধিকৃত হওয়াতে আমজনতার মধ্যে তাদের আদর্শ বিস্তার করা সম্ভব হয়না (নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া তার বড় প্রমাণ) বিধায় তারা আম দাওয়াতের চেয়ে এরকম চৌকষ এবং মেধাবীদেরকে টার্গেট নিয়ে কাজ করে থাকে।

একটি প্রাকটিসিং মুসলিম পরিবারের সন্তান এভাবে বিগড়ে যাওয়া এবং সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান নেয়া কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। তাই ওদিকের মোহ ভঙ্গের চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি চৌধুরী পরিবার। কিন্তু ফল হলো উল্টো। যে গতিতে বাধা দেয়া হয় তাঁর ওদিকের এক্টিবন্যাস তারছে বেশী গতিতে বড়ে যায়।

বাবার ব্যবসায় বানিজ্য দেখাশোনার কথা বলে এক সময় বেলাল চৌধুরীকে নিয়ে আসা হয় আবুধাবীতে। ফরিদ চৌধুরী আবুধাবী ইসলামী কালচারল সেন্টার নামক আবুধাবী সরকার অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত, যে প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হচ্ছে- অমুসলিমদের নিকট ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়া এবং নামকে ওয়াস্তে মুসলিমদেরকে প্রাক্টিসিং মুসলিম বানাতে সহায়তা করা। ফরিদ চৌধুরী ভেবেছিলেন ছেলে এখানে এসে কালচারাল সেন্টারের লোকজনের সংস্পর্শে এসে নিজেকে সংশোধন করে নেবে হয়ত। কিন্তু না, বরং ফল উল্টোই হতে লাগলো। কেউ তার সাথে যেঁচে কথা বলতে চাইলে বা তাঁর সংস্পর্ষে আসতে চাইলে তিনি ভাবতেন তাঁকে মগজ ধোলাইয়ের জন্য টার্গেট নেয়া হয়েছে এবং সে কারণে দূরত্ব বজায় রাখতেন সবসময়।

এবার দোয়ার পালা। ফরিদ চৌধুরী ছেলের জন্য সকলের নিকট দোয়া চাইতে লাগলেন, যেন সে ইসলামের দিকে ফিরে আসে। নিজেও দোয়া করতে লাগলেন যেন তার ছেলেটি তার নিকট ফিরে আসে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন পবিত্র কানায়ে কা’বায় ওমরাহ পালন করে আল্লাহর ঘরে ধর্ণা দিয়ে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাবেন যেন তাঁর ছেলেটি ফিরে আসে। তিনি তাই করলেন। এদিকে আল্লাহর ঘরে গিয়ে সরাসরি প্রার্থনার প্রভাব যেন পড়তে শুরু করেছে। বেলাল চৌধুরী আস্তে আস্তে ফিরতে শুরু করলেন। এক সময় তার মোহ ভঙ্গ হলো। তিনি ফিরে আসলেন ইসলামের পথে। ফিরে আসলেন বল্লে কম বলা হবে। এমন ভাবে ফিরলেন, নিজেকে উজাড় করে দিলেন ইসলামের পক্ষে। ইসলামী কালচারাল সেন্টারের নেতৃত্বের পর্যায়ে উপনীত হয়ে ইসলামী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক বিপ্লব আনয়ন করলেন। ছেলেকে ইসলামের পথে পেয়ে ফরিদ চৌধুরী অত্যন্ত আনন্দিত। আজকাল আমরা দেখি দুনিয়ার বিভিন্ন লোভ লালসার বসে পিতা-মাতা সন্তানদেরকে নানা রকম অপসংস্কৃতির প্রতি উৎসাহী করে তুলছেন। এসব পিতা-মাতা সন্তানের প্রকৃত বন্ধু নয়। যেসব পিতা-মাতা সন্তানের দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া করেন এবং সঠিক পথে চালানোর চেষ্টা করেন তারাই সন্তানের প্রকৃত বন্ধু।

বিষয়: বিবিধ

১৬৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File