আশরাফের দুঃখীনি মা (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০১:১৪:৪৩ দুপুর
আশরাফ ছদ্ম নামের আমার এক প্রবাসী বন্ধু। আশির দশকের শেষ দিকে প্রবাসী হয়েছিলাম দু’জন একই দিনে। ঢাকা টু আবুধাবীর বিজি ০২৮ ফ্লাইটের পাশাপাশি আসন পড়েছিল দু’জনের। জানালার পাশে বসে বাহিরের দৃশ্য অবলোকনে আমার খুব আগ্রহের কথা জানতে পেরে সে এক প্রকার জোর করেই তার জানালার পাশের আসনে আমাকে বসিয়েছিল। তারপর থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত, যা এখনো বলবৎ রয়েছে।
এ অন্তরঙ্গ বন্ধুটির সাথে নিজের জীবনের অনেক সুখ-দুঃখের ঘটনা যেমন শেয়ার করেছি তেমনি সেও তার জীবনের অনেক ঘটনাবলী শেয়ার করেছে আমার সাথে। তার জীবনের ঘনটাবলীর মধ্যে তার মায়ের ঘটনাটি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। সেই হৃদয় ছোঁয়া ঘটনাটি গল্পাকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি সম্মানীত পাঠকদের উদ্দেশ্যে।
হালদা পাড়ের নজীব সারেং এর কনিষ্ঠা কন্যা সালেহার বিয়ে হয় একই গ্রামের হামেদ সিকদারের একমাত্র ছেলে আসাদ সিকদারের সাথে। আসাদও স্টিমারে চাকুরী করেন, প্রমোশন হয়ে সারেং হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। একই লাইনে চাকুরীর সুবাদে নজীব সারেং খুব ভাল করেই জানতেন চৌকস-কর্মট আসাদ সিকদারকে। তাই কোন ধরণের জটিলাতা ছাড়াই সম্পন্ন হয় এ বিয়ে।
বিয়ের প্রায় এক বছরের মাথায় আসাদ- সালেহা দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় আশরাফ। মা-দাদা-দাদীর বুকে হেসে খেলে পঞ্চম মাসে পড়েছে আশরাফ। এরই মধ্যে একরাতে নানী ওর মামাকে পাঠিয়েছে ওর মাকে নাইয়র নেয়ার জন্য। (সে কালে পর্দার খেলাপ না হওয়ার জন্য সাধারণত মেয়েরা রাতেই বের হতেন, যারা পায়ে হাঁটা দূরত্বে যেতেন। আর দুর দুরান্তে যেতে হলে পালকী অথবা গরুর গাড়ীর চথুর্দিকে কাপড় জড়িয়ে পর্দা রক্ষা করা হতো।) আশরাফের জন্ম হয়েছিল দাদা দাদীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওর নানা বাড়ীতে। একারণে দাদা ওর নানীর উপর এমনিতেই অসন্তুষ্ট, তারউপর লোক পাঠিয়েছেন ঠান্ডার রাতে নাতি সহ বৌ নাইয়র নিতে? ওর নানীকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার মওকা পেয়ে গেলেন যেন দাদা হামেদ সিকদার। ওর মামাকে মুখের উপর বলে দিলেন এখন নাইয়র দেয়া যাবে না। সংবাদটি শুনে নানী হাজেরা খাতুন খুবই অপমান বোধ করে নিজেই আসলেন মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। নানীর অগ্নিমূর্তি দেখে এত রাতে ঝগড়া আর বাদ বিতন্ডা করা উচিৎ হবে না মনে করে দাদা বললেন, ঠিক আছে আপনার মেয়ে যদি যেতে চায় ওকে নিয়ে যান। কিন্তু আমার নাতিকে কোন অবস্থাতেই এই শীতের রাতে অন্ধকারের মধ্যে নিতে দেবো না। নানীর অগ্নিশর্মার কাছে ওর মা অসহায় প্রায়। তিনি জানেন মায়ের মেজাজের অবস্থা। তারপরও অনেক চেষ্টা করেছেন ওনাকে বুঝাতে। কিন্তু না, ওনার এক কথা- যাবি কি যাবি না বল? সালেহা ভেবেছেন, আশরাফ তো প্রায় ওর দাদা দাদীর সাথে থাকতে অভ্যস্থ, আর এক রাতের জন্য হয়ত খুব একটা সমস্যা হবেনা। তাই মা’র সাথে যেতে রাজী হয়ে যান। হতভাগীনি সালেহা কি জানতেন এটিই হবে তার পাঁচ মাস বয়সের আদরের সন্তানের নিকট থেকে বিচ্ছেদের মুহুর্ত? (সেকালে এদেশের বিশেষ করে গ্রামের মেয়েরা মা-শাশুড়ী হয়ে বয়স্কা হলেই কেবল তাদের কথা ও ইচ্ছার প্রতিফলন এবং ভাল-মন্দ সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার প্রাপ্ত হতেন। এর আগ পর্যন্ত মা-বাবা ও মুরুব্বীদের ইচ্ছা আর সিদ্ধান্তের উপরই তাদেরকে চলতে হতো। এটি যেন অনেকটা অলিখিত নিয়ম ছিল। শুধু কি মেয়েরা? ছেলেরাও পরিবারের কর্তার সিদ্ধান্তের উপর কিছু করার আর বলার সাহস ও অধিকার পেত না, যতদিন না তারাও পরিবারের কর্তার আসন পেয়েছে। কোন যুক্তি দেখানো মানে ছিল- 'মুরুব্বীর সাথে বেয়াদবী'। পাত্র-পাত্রী পছন্ধের ব্যাপারেও সেই মুরুব্বীদের দেখা, পছন্দ ও ইচ্ছার উপর একমত হওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর থাকতো না।)
পরের দিন ফিরিয়ে আনা হবে, এই প্রত্যাশায় আদরের সোনামনিকে আদর ও শ্বশুর শাশুড়ীর নিকট থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের সাথে বাপের বাড়ী আসলেন সালেহা । পরের দিন দুপুর গড়িয়ে রাত হলো কিন্তু ওকে নেওয়ার জন্য শ্বশুর বাড়ী থেকে কেউ আসার নাম গন্ধও নেই। ( তখন আরেকটা প্রথা ছিল- বউ নাইয়র গেলে ফিরিয়ে আনার জন্য শ্বশুর বাড়ী থেকে স্বামী, শ্বশুর বা দেবর/ভাসুর যে কেউ গিয়েই আনতে হতো। অর্থাৎ নিয়ে যাবেন বাপের বাড়ীর লোক আর ফিরিয়ে আনবেন শ্বশুর বাড়ীর লোক।)
পাঁচ মাসের দুধের শিশুকে এক রাতের জন্যও রেখে যাওয়ার ব্যাপারটিকে খুব সিরিয়াসলি দেখা শুরু করলেন হামেদ সিকদার। এটিকে পুত্রবধুর অবাধ্যতা এবং পাষাণ হৃদয়া মা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। তার উপর বেয়াইনের নিকট পরাজয়ের গ্লানী তো আছেই। সব মিলিয়ে রাগে ক্ষোভে সারাটি রাত নিদ্রাহীন কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, এই বউ আর সিকদার বাড়ীতে ফিরিয়ে আনা হবে না। সকালে উঠে এই সিদ্ধান্ত পরিবারের সকলকে পরিস্কার জানিয় দিলেন তিনি।
একসময় সারেং বাড়ীতেও গিয়ে পৌঁছে এই দুঃসংবাদটি। এই বাড়ীর কর্তারাও বেঁকে বসলেন। সিকদার বাড়ীতে আর দেবেন না সালেহাকে। সালেহা এ সংবাদ শুনে বেহুশের পর বেহুশ হতে লাগলেন। আহত পাখীর মত ধরফরাতে লাগলেন ছেলের জন্য। বার বার আকুতি জানাত থাকলেন- আমার বুকের ধন- আমার মানিককে আমার কাছে এনে দাও, নাহলে আমি ফাঁসিতে ঝুলব- নদীতে ঝাপ দেব। না, তার এই আকুতি কোন পাষাণ হৃদয় গলাতে পারেনি। বরং এসব কথা বলার পর তাকে বাপের বাড়ীর অন্ধকার কুঠরিতে বন্দী হয়ে থাকতে হলো। পরিবার ও সমাজের প্রথা ভেঙ্গে নিজে নিজে শ্বশুর বাড়ী গিয়ে সকলের নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করে বুকের ধনকে ফিরিয়ে নেয়ার মানসিক সাহস অর্জন করলেও বন্দী থাকার কারণে তাও ব্যর্থ হলো।
এদিকে জরুরী টেলীগ্রাম পেয়ে আসাদ সিকদার দুই দিনের মধ্যে বাড়ী এসে বাবার সিদ্ধান্ত শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়লেন। বাবার সিদ্ধান্তের উপর কথা বলতে পারেন না আসাদ। তারপরও গোপনে সারেং বাড়ীতে ছুটে গিয়েছেন স্ত্রীর সাথে কথা বলে কোন একটা উপায় বের করা যায় কি না দেখার জন্য। কিন্তু না, শ্বশুর বাড়ীর লোকজন পরিস্কার জানিয়ে দিল- সালেহা ঐ বাড়ীতে আর যাবে না, তোমার সাথে দেখাও করবে না। যাও তোমার বাবাকে বল কি করতে পারে করতে।
আসাদ ভগ্নহৃদয়ে শ্বশুর বাড়ী থেকে ফিরে আসেন। শেষ পর্যন্ত হামেদ সিকদারের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। তিনি প্রমাণ করতে চান, সিকদারের ছেলের জন্য পাত্রীর অভাব নেই। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই আসাদের দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে আনা হলো। হামেদ সিকদার ভেবেছিলেন- শিশু আশরাফের দেখা শুনা করবে এই নতুন বউ হামিদা। কিন্তু না, হামেদ সিকদারের সে আশা পূর্ণ হলো না। যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনটি নয় নতুন বউ। আসাদও মনে হয় খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেননি দ্বিতীয় স্ত্রীর উপর। কী আর করা, একমাস ছুটি কাটিয়ে আসাদ চলে গেলেন কর্মস্থলে। শিশু আশরাফের সম্পূর্ণ ভার এখন দাদা-দাদীর উপর। দাদা দাদী আশরাফকে মা-বাবার চেয়েও অধীক যত্নের সাথে লালন পালনে আত্ম নিবেশ করলেন।
অপর দিকে সালেহাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়া হয়েছে তার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন তোয়াক্কা না করেই। উপায় নেই, মানতেই হবে মুরুব্বীদের নির্দেশ। দীর্ঘশ্বাস আর অশ্রুসজল নয়নে দ্বিতীয় স্বামীর সংসারের হাল ধরেছে সালেহা। কিছুতেই যেন মন বসেনা সালেহার। সমস্ত সত্তাজুড়ে সেই বুকের ধন আশরাফের ছায়া বিরাজমান। সর্বক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে, কাজকর্ম অনেকটা আগোছালো, কিছুটা মানসিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। তবে কয়েক বছর পর ব্যাপক আকার ধারণ করার আগ পর্যন্ত সালেহার মানসিক সমস্যার বিষয়টি কারো নজরে আসেনি। সালেহার দ্বিতীয় স্বামী ইসমাইল, ১৮ বছর বয়সে রেঙ্গুন পাড়ি দিয়েছিলেন। বার্মা সরকারের তাড়া খেয়ে ফেরৎ আসতে বাধ্য হয়েছেন। ওখানে স্ত্রী ও এক শিশু ছেলে রেখেই পালিয়ে এসেছেন। ইসমাইল বোঝেন সালেহার কষ্ট। তাই যে কোন উপায়ে শিশু আশরাফকে একনজর দেখাতে পারলে সালেহা হয়ত স্বাভাবিক হয়ে আসবে। শিকদার বাড়ীর পাশে মির্জা বাড়ী, ওই বাড়িতে ইসমাইলের এক বন্ধুর আবাস। সালেহাকে মাঝে মধ্যে ওখানে এনে সুকৌশলে এক নজর দেখিয়ে নেন আশরাফকে। এভাবে দিন যায়, এক সময় কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে সালেহা।
আশরাফকে ঘিরে সিকদার আর সারেং পরিবারের মধ্যে অনেক দেরীতে হলেও আস্তে আস্তে বরফ গলতে শুরু করেছে। একদিন ওকে তার নানার বাড়ীতে পাঠানো হয়েছিল ওর মা’র অনুরোধের সংবাদ পেয়ে। আশরাফ আবিস্কার করল, চওড়া পাড় ওয়ালা নীল রঙের শাড়ী পরা ঘোমটা টানা এক সুন্দরী মহিলা ওকে আদর করে কোলে তুলতে চাইছেন, বাপজান-মানিক-সোনামনি ইত্যাদি বলে আদর করছেন। ইতিমধ্যে আরো দু’টি ছেলের মা হয়েছেন সালেহা, তার পরও যেন তিনি অতৃপ্ত। তাই একটিবার ছেলে আশরাফের মুখ থেকে মা ডাক শোনার জন্য ব্যাকুল সালেহা । আশরাফ লজ্জায় লজ্জায় জড়োসরো হয়ে যায়। একটু ছাড় পেয়েই ভোঁ দৌঁড়ে উঠানে খেলতে থাকা ছেলে মেয়েদের কাছে ছুটে এসে নিজেকে আড়াল করে ঐ মহিলার নিকট থেকে। পোড়া কপালি মা, ছেলের এহেন ব্যবহারে মর্মাহত হয়ে শ্রাবনের অঝোর ধারার বৃষ্টির মতো কাঁদতে থাকেন আর ভাবেন পাঁচ বছর আগের ফেলে আসা দিনগুলি নিয়ে। নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকেন তার সেদিনের অপারগতার জন্য।
এর পর থেকে সালেহা আবারো মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন। এর মধ্যে কেটে গেলো বেশ কয়েকটি বছর। আশরাফের প্রিয় দাদা হামেদ সিকদারের মৃত্যুর পর বাবা আসাদ সিকদার গ্রাম ছেড়ে সপরিবারে শহরে বসবাস করতে থাকেন। আশরাফ তখন অস্টম শ্রেনীতে উঠেছে। এই দীর্ঘ সময় আশরাফের সাথে তার মায়ের আর কোন সাক্ষাত ঘটেনি। আশরাফের মা সালেহা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পুত্রকে দেখতে চেয়ে বারবার আকুতি জানাতে থাকে। ইসমাইল আশরাফের এক মামাকে পাঠায় তার মাকে দেখতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখনো মায়ের প্রতি আশরাফের অনুভূতি শুন্যের কোটায়। তাই সে ওখানে যাওয়ার জন্য খুব একটা আগ্রহ দেখায়না। দাদী তাকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে মায়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত বাবা, দাদী এবং মামার চাপাচাপিতে মাকে দেখতে যায় আশরাফ।
কয়েক বছর পর আশরাফের প্রিয় দাদী আমেনা বেগম ইহলোক ত্যাগ করেন। সৎমায়ের টুক-টাক অসহযোগীতমূলক আচরণ আশরাফকে চরমভাবে ব্যথিত করে, মায়ের প্রতি অভিমানী হয়, তাকে ফেলেরেখে অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে। মায়ের আদর-ভালবাসা বঞ্চিত আশরাফ মায়ের আদর পেতে চায়, তার অভিমানের কথা বলে মনটা হালকা করতে চায়। এতদিনে আশরাফ যে বয়সে উপনিত হয়েছে তা মা-বাবাকে আদর ভালবাসা দেবার সময়, পাবার নয়। কিন্তু তার মধ্যে যে মায়ের আদর-ভালবাসা পাবার ক্ষুদা রয়ে গেছে তা বুঝবে কে?
আশরাফ এবার স্বপ্রনোদিত হয়ে মাকে দেখতে যায়। ততদিনে অনেক পানি গড়িয়েছে। শারিরীক ও মানসিক ভাবে আরো বেশী ভেঙ্গে পড়েছেন সালেহা। কথাবার্তা খুবই অসংলগ্ন। হাছনা নামের স্বামী পরিত্যাক্তা একটি মেয়ে ঠিকা বুয়া হিসেবে কাজ করতো তাদের ঘরে। ছেলে মেয়েদের প্রবল আপত্তির পরও হাছনাকে বিয়ে করে নিয়েছেন ইসমাইল। এর পর থেকে দুই ঈদে এবং মাঝে মধ্যে মাকে দেখে যায় আশরাফ।
আশরাফ বিয়ে করেছে। এখন একটি কন্যা সন্তানের জনক সে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে এবং নয়টি মাস পেটে ধারণ করে চলতে ফিরতে তার স্ত্রীর সীমাহীন কষ্ট সে খুব নিকট থেকে অনুভব করেছে। এরমধ্যে সন্তানটি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়াতে নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও সন্তানের জীবন রক্ষা করতে চায়। আল্লাহর নিকট সেজদাবনত হয়ে প্রার্থনা করে, তার সন্তানটির যদি হায়াত এতটুকু থেকে থাকে তাহলে তার জীবনের অর্ধেক হয়াত যেন তার কন্যাকে দান করেন।
নিজে সন্তানের পিতা হওয়ার পর আশরাফ অনুভব করার চেষ্টা করে, কোন্ মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হয়ে তার মা তাকে রেখে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। মা’র প্রতি তার সকল দুঃখ এবং অভিমান উবে যায়। প্রবাসে এসে আশরাফ সিদ্ধান্ত নেয়, দেশে ফিরে গিয়ে সে তার মাকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলবে, মন ভরে মায়ের সাথে সুখ-দুঃখের কথা বলবে, মা তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে যাবে তার জীবনের দুঃখের ইতিহাস।
মাকে নিয়ে আশরাফের স্বপ্ন থেমে যায় প্রবাসে আসার প্রায় দু’বছর পর এক নিস্ফে শা’বানের রাতে। আশরাফ প্রবাসে আসার সময় মায়ের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে এলেও মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে তা হয়ত মনে রাখতে পারেননি তিনি। তাই দীর্ঘদিন ছেলেকে না দেখে তাকে খোঁজ করার জন্য অজানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে কিভাবে যেন তাদের শহরের বাসায় এসে যান এবং এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে প্রিয় সন্তানকে জানিয়ে গেলেন, হে আমার প্রিয় সন্তান, সমাজ এবং পরিবারের দাম্ভিকতা আর নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে তোমাকে ছেড়ে গেলেও আমার আত্মার সাথে তুমি মিশেছিলে সর্বক্ষণ।
আশরাফ মায়ের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে আল্লাহর দরবারে প্রর্থনা করে, আল্লাহ যেন তার মাকে জান্নাতে ফেরদাউস দান করেন এবং সে জান্নাতে যেন মার সাথে দেখা করার তাওফিক দান করেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রাব্বিরহাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানী ছাগীরা।
বিষয়: Contest_mother
২৪৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন