স্মৃতিতে ডঃ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এবং মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১২ মে, ২০১৬, ০২:২০:৫১ দুপুর
ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবকে কখনো সরসরি দেখার সুযোগ হয়নি। ইসলামী টিভি চ্যানেলের প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান দেখে তাঁকে চিনেছি। তাঁর হাসি মুখে প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য শুনলে মনে হবে যেন দর্শকদের কত আপনজন তিনি। ছোট খাটো বিভেদ ভুলে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। সহিহ আকীদা পোষণকারী হওয়া সত্বেও ‘কট্টর’ না হওয়ার কারণে কিছু কট্টর মনোভাবাপন্ন সহিহ আকীদার লোকেরাও তাঁর সমালোচনা করতেন। মাজার ও বিদয়াত পন্থীরাতো সমালোচনা করেই যাচ্ছে। তাঁর নামে গুগল সার্চ দিয়ে বক্তব্যগুলো শুনলেই বুঝতে পারবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে কী পরিমাণ ইল্ম দান করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করে শহীদের মর্যাদা দান করুন। (উল্লেখ্য গত ১১মে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি ইন্তেকাল করেন।)
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে জীবনে প্রথম দেখেছি ঐতিহাসিক ৮১’র কর্মী সম্মেলনে। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের প্রোগ্রামে দারসে কুরআন পেশ করেছিলেন তিনি। প্রায় তিন যুগ পরেও তাঁর পেশ করা দারস এর শিক্ষাগুলো যেন কানে বাজছে।
তিনি শেষবার(১৯৯৯-২০০১ এর মধ্যে হবে, সন ঠিক স্মরণ করতে পারছি না) সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে এলে তাঁকে আমার গাড়িতে করে সারজাহ থেকে আবুধাবি আনার সুযোগ পেয়েছিলাম। পেছনের সীটে আরাম করে বসতে বলাতে তিনি সামনে আমার পাশের সীটে বসতে চাইলেন। বসার পর আরামের জন্য সীটটা একটু পেছনে কাত করে দেব কিনা জিজ্ঞেস করাতে বললেন, কোমড়ের ব্যাথার কারণে হেলান দিয়ে বসতে পারেননা , সোজা হয়ে বসতে হয়। অসুস্থতা জনিত কারণে নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়ার চাইতে জাতির ইলম ও আমল উন্নত করার চিকিৎসার প্রতি মনেনিবেশ করেছিলেন বেশী।
তাঁর ঐ সফরে আমি প্রায় সাথেই ছিলাম। বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘরাত পর্যন্ত প্রোগ্রাম শেষে সাধারণ কর্মীদের মেসে তাদের পাশে বসে সাধারণ খাবার গ্রহণ করেছেন, তাদের সাথে শুয়েছেন, যা ছিল একটি দলের সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে বিরল ঘটনা।
টিভির সংবাদে যখন দেখতাম অন্যান্য ইসলামী দলের নেতাকে ৪জন পাখা করছে, তিন জনে তিনটা টেলীফোন সেট নেতার দু’কানে ধরে রাখছে। আবার নামায, রোযা, এবং দোয়া দরূদ শেখানোর সংগঠনের বড় নেত্রীবৃন্দের জন্য পাঁচ তারা হোটেলের খানা আর ঘুমানো, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো সাধারণদের ডাল-চালের পাকানো খানা আর মসজিদে ঘুমানো দেখে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর প্রতি আন্তরিকতা কতটা বৃদ্ধি পেতে পারে, একটু ভেবে দেখুন।
আল্লাহর দ্বীনের দুষমনেরা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে শহীদ করেছেন। শাহাদাতের পেয়ালা পান করার জন্য তিনি যেন মুখিয়ে ছিলেন, বার বার জানতে চাইলেন, ফাঁসির আর কত সময় বাকী। তিনি কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যেন কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা না হয়। জামায়াত শিবিরের কর্মীরা জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত, তিনি একটু ঈঙ্গিত করলেই স্বৈরচারী জালিম সরকারের তখত কেঁপে উঠতো। এভাবে একজন মতিউর রহমান নিজামী শহীদ হওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারতেন, কিন্তু ইসলাম কায়েম হতো না। ইসলাম কোন পথে কায়েম হবে তা কুরআন হাদীসের আলোকে তিনি তার লিখনি এবং বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের জন্য রেখে গেছেন। আমার ওখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে মাওলানার অসমাপ্ত কাজ আঞ্জাম দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।
মাওলানার সাথে দীর্ঘ সফরে অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ নসিহতের মধ্যে আমার নিকট বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে এ কথাটি যে, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায়ও যদি ইসলামী বিপ্লব সাধিত হয়ে যায় আর আমি নিজেকে সংশোধন এবং আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল করতে না পারি তাহলে সেই ইসলাম কায়েম আমার কোনই কাজে আসবেনা। আসুন আমরা মাওলানার রেখে যাওয়া শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। ওয়ামা তাওফিকী ইল্লা বিল্লাহ্।
বিষয়: বিবিধ
২৩৩৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিজেকে সংশোধন করার এর চেয়ে বড় উপদেশ আর কি হতে পারে!!
আর ডঃ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গির সাহেব সম্পর্কে এক্সিডেন্ট এর ছবি দেখার পর আমার ধারনা আরো শক্ত হযেছে যে এটা পরিকল্পিত।
আমার মনে হয় জীবিত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামির চেয়েও মৃত নিজামি অনেক বেশি প্রেরণাদায়ি এবং শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছেন। দেশে এবং বিদেশে সর্বত্র।
মন্তব্য করতে লগইন করুন