বাবাকে মনে পড়ে-
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২১ মার্চ, ২০১৬, ০১:৪৬:০১ দুপুর
সখের ক্ষেত থেকে সব্জী সংগ্রহ করছে দাদা নাতনী(তাহমিনা মারিয়াম)
আজ খুব মনে পড়ছে বাবাকে। আমার দোকান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের মধ্যে ছিল তাঁর কর্মস্থল। আবুধাবির প্রসিদ্ধ ‘আল-আ’দিদ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী’র ওয়ার্কসপ ফোরম্যান ছিলেন তিনি। আবুধাবিতে প্রথম এসে তাঁর রুমেই থেকেছি বেশ কয়েকদিন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে কোম্পানীর উক্ত ওয়ার্কসপ ঘিরে ছিল তাঁর সব কিছু। ওয়ার্কসপ এরিয়ার মধ্যে ছিল তাঁর বাসা। বিরাট খালি যায়গাতে নানা রকম দেশীয় শাকসবজি ফলাতেন সখের বশে। দেশী মোরগ-মুরগীও ছিল এক ঝাঁক। বড় বড় মোরগ জবেহ করে তিনি স্থানীয় মসজিদের ইমাম-মোয়াযযিন এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদেরকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। শাকসবজিও বিলি করতেন তাদের মধ্যে। একদল বিড়ালও ছিল তাঁর। বিড়ালগুলোকে তাঁর পাশে ঘুর ঘুর করতে দেখলে হিংসে হতো আমার। মনে হতো যেন আমাদের ভালোসায় ভাগ বসাচ্ছে এরা। এখনো কোন কারণে মন খারাপ থাকলে অথবা বাবার কথা মনে পড়লে তাঁর স্মৃতিময় স্থানটিতে ছুটে যাই। মনে হয় যেন ঐ যায়গার বাতাসে এখনো বাবার শরীরের খুসবু ভেসে বেড়াচ্ছে। বাবার প্রাক্তন সহকর্মীদের সাথে স্মৃতিচারণ করে মনটা একটু হালকা করার চেষ্টা করি।
শৈশব-কৈশোরে বিভিন্ন কারণে বাবার সাথে খানিকটা দূরত্ব তৈরী হয়েছিল আমার। প্রবাসে এসে নতুন রূপে আবিস্কার করি বাবাকে। এ যেন শুধু বাবা নয়, একজন বিশ্বস্ত বন্ধুও। একসময় যেখানে বাবার সামনে দাঁড়াতে ভয় পেতাম, সেই বাবার সাথে রাজ্যের ভাব তৈর হয়। নান রকম গল্পসল্প; পারিবারিক ইতিহাস-ঐতিহ্য, পরিবারের চলমান সুখ-দুঃখ থেকে শুরু করে ধর্ম, রাজনীতি আর অর্থনীতি কিছুই বাদ যেতোনা। তখন থেকে তাঁর সান্নিধ্য খুবই উপভোগ করতাম।
আবুধাবিতে আমার ফ্যামিলি আনার পূর্ব পর্যন্ত এক দিনের জন্যও তিনি আমাকে হোটেলে খেতে দেননি। নিজে পাক করে টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে দোকানে নিয়ে আসতেন। এমনকি আমার দোকানের কর্মচারীদের জন্যও।
আমার জীবনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেসব সফলতা দান করেছেন তার প্রায় সবগুলোতেই তাঁর প্রত্যক্ষ সহযোগীতা এবং অনুপ্রেরণা ছিল। লালন পালন, শিক্ষা-দীক্ষা, বিয়ে-শাদী, প্রবাসে এনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সাধনের পথ উম্মুক্ত করণ -প্রভৃতিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
এক খন্ড জমি কেনার পর বিল্ডিং তৈরীর টাকা ছিলনা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সেমিপাকা ঘর তৈরী করব। তিনি বাঁধা দিয়ে বললেন, সেমিপাকা নয়, পাঁচ তলা বিল্ডি তৈরী করতে হবে। আমার কাছে টাকা না থাকলে কেমনে করবো?- জবাব দিলাম। তিনি বললেন এখন যা আছে তা দিয়ে পাঁচ তলার ফাউন্ডেশন দাও, বাকীটা হয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ! সত্যিই হয়ে গেলো। সেদিন তাঁর পক্ষ থেকে সাহস আর অনুপ্রেরণা না পেলে তা হতো কিনা জানিনা।
মাতা-পিতা বর্তমান থাকা সন্তানের জন্য বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। তারপরও ছেড়ে যেতে হয়, বাবাও আমাদেরকে ছেড়ে গেয়েছেন প্রায় দু’বছরেরও বেশী সময় হলো।
আল্লাহ আমার বাবার প্রতি তেমন রহম করুন, যেমনটি তিনি আমাদের জন্য করেছেন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানী ছাগীরা।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার বাবা জান্নাতে সুখে থাকুক। সন্তানদের নেক দোয়াই মৃতদের একমাত্র পাওনা। প্লাস সাদাকায়ে জারিয়া।
পিতা হারানোর বেদনা কেমন হবে, এখন থেকে অনুমান করা শুরু করেছি। আল্লাহ তায়ালা সবার বাবাদের সাথে সহঝ মোয়ামেলা করুক। জাযাকাল্লাহ খাইর
আল্লাহ কবুল করুন।
আল্লাহ সকল মা-বাবাকে ক্ষমা করুন।
'রব্বির হাম হুমা কামা রব্বাইয়ানি সগিরা'।
বাবা নেই তবে আছে বাবার জন্যে ভালোবাসা।
প্রবাস-কাহন ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ।
স্মৃতিময় লিখাটা খুব খুব ভাল লাগলো, আমিও বাবা হারা, ২০১১ সালে বাবাকে হারিয়েছি। আমি এমন হতভাগা যে শেষবারের মত বাবাকে একটু দেখতেও পারিনি।
আপনার বাবার জন্য দোয়া রইলো, ধন্যবাদ আপনাকে
এ্যালবাম জুড়ে আছে
একজন মানুষের ইতিহাস
চশমার ফ্রেম খানি
ঘড়ি ছড়ি পাঞ্জাবী
সব আছে
তবু দীর্ঘ শ্বাস
শুধু বাবা নেই
মায়া মাখা শাসনের ছায়া নেই......'
সবকিছুই থেকে যায়, শুধু চলে যায় জীবন।
তাবুও ভুলে যাই,একদিন আমারও হবে মরন
মন্তব্য করতে লগইন করুন