সাবধান ক্রেতা বন্ধুগণ!
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:২৩:৩০ দুপুর
ক্রেতা সাধারণকে ঠকানো বাংলাদেশী ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের একটি মারাত্মক বদভ্যাসে পরিনত হয়েছে। মাছ-গোস্ত থেকে শুরু করে ফল-মূল আর তরিতরকারী যাই কিনতে যাননা কেন দোকানদার হয়ত ওজনে কম দিয়ে নতুবা পঁচা মাল দিয়ে অথবা হিসাবে গোজামিল করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিয়ে আপনাকে ঠকাবেই।
আপনি নিজ হাতে বেছে বেছে আপেল, কমলা অথবা অন্য কোন ফল-মূল প্যকেটে ঢুকিয়েছেন কিন্তু ঘরে এসে দেখলেন বেশীরভাগই পঁচা। কারণটা কি? কারণ হলো, বিক্রেতা যেখানে নিয়ে ওজন করেছে ওখানেই রাখা থাকে পঁচা মালগুলো। ওজন সমন্বয় করার সুযোগে আপনার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ভালগুলো তুলে রেখে খারাপগুলো প্যাকেট ঢুকিয়ে দেয়। ওসব পঁচা জিনিস ঘরে আনলে বউয়ের টিপ্পনী শুনতে হয় আর কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় নিয়ে গেলে মেজবান মনে করতে পারেন কম টাকা দিয়ে খারাপ জিনিস নিয়ে গেছেন!
ওজনে কম দেয়ার কৌশল হচ্ছে, বেশীর ভাগ ব্যবসায়ীর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ থাকে বেশ লম্বা। দাঁড়ি পাল্লার ডান দিকেই মাল রাখা হয় এবং মাল কিছু কম দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলের নখর দিয়ে ওদিকে একটা টান দেয়া হয়।মাল কম হওয়া সত্বেও ঐ টানের কারণে বেশ কয়েক মুহুর্ত পাল্লাটি ওদিকে ঝুঁকে থাকে। এতে ক্রেতা মনে করেন তাকে খাতির করে একটু বেশী দিচ্ছে। কিন্তু সেখানে প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম কম দিয়ে থাকে। গোস্ত ব্যবসায়ীরা এখানে আরেকটু বাড়তি মজা নিয়ে থাকে। তাহলো- ওজন কম দিয়ে কিছু অখাদ্য আমাদেরকে উপরি দিয়ে থাকেন, ওই উপরি সহ টেনেটুনে ওজন বরাবর হয়।
স্বপ্ন এবং আগোরার মতো বৃহদাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর গোজামিলও বেশ কয়েকজন বন্ধু ইতোমধ্যে শেয়ার করেছেন ফেইসবুকে।
গত সপ্তাহে আমার স্ত্রীকে নিয়ে কাপড় কিনতে গিয়েছিলাম জিইসি মোড়স্ত শপিং সেন্টারের একটি দোকানে। পছন্দ করা কাপড়গুলোর ৬৩০০ টাকা দাম আসলো। আমি টাকা পরিশোধ করলাম এবং দোকানদার আমাকে একটি রসিদ দিলেন। এমনিতেই অতিরিক্ত বার্গেনিং এবং খুব করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সওদা করা আমার অভ্যাস বিরোধী। তারপরও কি মনে করে ওদিন বের হওয়ার মুহুর্তে দোকানদারকে বললাম, ভাই একটু মিলিয়ে দেখুন সব কাপড় ঠিক ঠাক আছে কি না। আমার কথা শুনে দোকানদার কেমন যেন ইতস্তত করতে লাগলেন। বললেন, সব ঠিক আছে, দেখতে হবে না, কাপড়ে কোন সমস্যা হলে নিয়ে আসবেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম, ভাই আমি দেখতে চাই সেটের কাপড় গুলো ঠিক আছে কি না, মানে ত্রি-পিসের সাথে তিন টুকরো বরাবার আছে কি না। আমার চাপের মুখে পেকেট থেকে সব কাপড় বের করে আমাকে আস্বস্থ করে আবার পেকেটে ঢুকিয়ে দিলেন। হঠাৎ
আমার নজরে আসলো ৪৫০০ টাকার একটি আইটেমের দিকে, দুই সেট ত্রি-পিস ১৫০০ করে ৩০০০ হয়, ৪৫০০ হলো কেমনে? তাড়াতাড়ি ১৫০০ টাক ফেরৎ দিয়ে বলতে লাগলেন, ভাই মাইন্ড করবেন না, ভুল হয়ে গেছে, আবার আসবেন ইত্যাদি। দোকানদারের আচরণ এবং অবস্থার প্রেক্ষিতে সন্দেহ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে যে, ওই কাজটি দোকানদার সচেতনভাবেই করেছেন, বাকীটা আল্লাহই ভালো জানেন। ওসব দোকানের বেশীরভাগ ক্রেতা মহিলা। মহিলারা সাধারণত একটু বার্গেনিং করলেও হিসেবের বেলায় থাকেন প্রায় দুর্বল, এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এসব দোকানে এভাবে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়।
এর পর গেলাম ফার্মেসিতে ঔষধ কিনতে। ৪/৫ আইটেম ঔষধের দাম আসলো ৭৮০ টাকা। এখানে ঔষধের দোকানগুলোতে রসিদ দেওয়া হয়না, ক্যালকুলেটর অথবা কোন রাফ কাগজের উপর লিখে হিসেব করে। আমি নিজ হাতে লিখে লিখে হিসেব করার পর দেখতে পেলাম দাম আসে ৭০০ টাকা। বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম বেশী বললো কেন? জবাব দিলো ভুল হয়ে গেছে!
অতএব সাবধান ক্রেতা বন্ধুগণ। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ যেন এভাবে অনায়াসে ঠকবাজদের পেটে না যায়। একটু সময় নিয়ে সব দেখেশুনে ঠিক মতো হিসেব করে সওদা করুন। মনে রাখবেন, আমরা বাংলাদেশে বসবাস করছি। কে যেন বলেছিলেন, ‘ঠকাঠকির দেশ, আমার প্রিয় বাংলাদেশ’।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৭ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হিজরতের প্রথম দিকে আমাদের নবী স. দেখলেনঃ মদীনার মানুষগণ ওজনে কম দিতেন, এতে রাসূল স. ব্যথিত হলেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা সূরা মুতাফফিফীনের প্রথম ৬টি আয়াত অবতীর্ণ করলেন, এতে ওজনে কম দেওয়া ও ঠকানোর ব্যাপারে কিয়ামতের দিনে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দন্ডয়মান হওয়ার কথা স্বরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
পুর্বের কোন এক উম্মতকেউ আল্লাহ তায়ালা ওজনে কম দেওয়ার কারণে ধ্বংশ করেছিলেন। সুন্দর কলামটির জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর।
ডাইভিং ট্রেনিং এর সুবাদে প্রতি জুমাবারেই মুসাফফাহ যাওয়া হয়, আপনার ঠিকানা পেলে দেখা করার খুব ইচ্ছে। শুক্রবার কোন সময় ফ্রি থাকেন, আশাকরি জানাবেন।
আমিতো বর্তমানে দেশে আছি। মাসের শেষের দিকে ফিরছি- ইনশাআল্লাহ - তখন অবশ্যই দেখা হবে।
আমার দোকান ৬ নম্বার প্রথম সিগন্যাল থেকে লেফ্ট ইউ টার্ণ, তারপর ফার্স্ট রাইট, সোজা ২০০ মিটার গিয়ে শেষ বিল্ডিংটির ৪র্থ দোকান, বোর্ডে আমার নাম আছে।
আমার ধারনা হল -
মন্তব্য করতে লগইন করুন