প্রবাস কাহিনী- ১৩
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৭ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৫৫:৪০ দুপুর
প্রবাসীর অভিমান(সত্যাবলম্বনে)
কুয়েত প্রবাসী আমজাদ সাহেব, একটি নির্মাণ কোম্পানীতে সুপার ভাইজরের কাজ করেন। দেশে যা আয় রোজগার ছিল তা দিয়ে কোন রকম চলে যেতো, কিন্তু প্রিয় সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মতো মানুষ করতে চাইলে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কেরানীর চাকুরী দিয়ে তা সম্ভব নয়। পাশের বাড়ীর সোলাইমানকে দেখে তিনি বেশ অনুপ্রাণিত হলেন। সোলাইমান লেখাপড়া বেশী করেনি, কিন্তু কুয়েত গিয়ে সে আজ অনেক টাকার মালিক। শহরে ফ্ল্যাট কিনে থাকে, ছেলে মেয়েদেরকে ভালো স্কুলে পড়াচ্ছে।
সব দিক বিবেচনা করে আমজাদ সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনিও প্রবাসে যাবেন। এবং তাঁর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলো কুয়েতের ভিসা পাওয়ার মাধ্যমে। এজন্য অবশ্য বাবার রেখে যাওয়া একখন্ড জমি বিক্রয় করতে হয়েছে তাঁকে।
আমজাদ সাহেব প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে যথারীতি পরিবারের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাচ্চাদের ভালো লেখা পড়ার জন্য শহরে স্থানান্তর করেন পরিবার। একসময় শহরে জায়গা কিনে একটি বাড়ীও তৈরী করেন। এক ছেলে দু’মেয়ে নিয়ে সুখী পরিবার আমজাদ সাহেবের।
ছেলে মেয়েরা বড় হতে থাকে এবং সাথে সাথে বদলাতে থাকে তাদের রুচি এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট। মেয়েদের বয় ফ্রেন্ড জুটেছে, ছেলের আছে গার্ল ফ্রেন্ড। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মার্কেটে ঘোরাঘুরি, আড্ডা। আধুনিতার ছোঁয়া লেগেছে তার স্ত্রীর গায়েও। আগে বোরখা পরতেন এখন তাও পরিত্যাগ করেছেন। মা-মেয়ের পার্লার ছাড়া চলেই না।
আমজাদ সাহেব লক্ষ্য করেন, একসময় স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েরা তাঁকে তাড়া তাড়ি দেশে আসার জন্য তাগাদা দিতো, এখন আর সে তাগাদা আসে না। তিনি ভেবে পান না, এমন কেন হলো। তারপরও বৎসরিক ছুটিতে দেশে আসতে হয়। প্রতি বছর এক মাসের জন্য ছুটি পেয়ে থাকেন। এবার তাঁর গ্রামের কিছু যায়গা জমি ভাইদের সাথে মিমাংসা করতে হবে, এজন্য কোম্পানী থেকে দু’মাসের ছুটি চেয়ে নিয়েছেন।
এদিকে স্ত্রী- সন্তানেরা তাঁর আগমনে এক মাসের জন্য নিজেদেরকে বেশ গুটিয়ে নিয়েছে। তারপরও অভ্যাস বলে কথা! নিজেদের অজান্তে প্রকাশ হয়ে পড়ে তাদের উল্টাপাল্টা চাল চলন। এসব দেখে আমজাদ সাহেব মনোক্ষুন্ন হন, তাদেরকে শোধরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
প্রতিবার এক মাসের মধ্যে তিনি প্রবাসে ফেরৎ আসেন, এবার প্রায় দেড় মাস হতে চললো, তার ফিরে যাওয়ার কোন নাম গন্ধ না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হলো। একদিন বাহির থেকে এসে ঘরে প্রবেশ করবেন এমন সময় ভিতর থেকে তাঁকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে শুনতে পেয়ে একটু থেমে যা শুনলেন তাহলো- ‘তিনি এখনো যাচ্ছেন না কেন? তাঁর জন্য আমরা এদিক সেদিক ফিরতে পারি না, সব সময় এটা সেটা নিয়ে আমাদের সাথে ঝামেলা করে..... ” ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমজাদ সাহেবের বুঝার বাকী রইলো না, গতবার ছুটিতে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের চাল চরিত্র নিয়ে একটু কথা বলেছিলেন বলেই তাঁকে প্রবাস থেকে তাড়াতাড়ি আসতে বলা বন্ধ হয়েছে। আজতো হাতে নাতেই জেনে গেলেন তাঁকে মন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার কারণ।
তিনি কাউকে কিছু না বলে পাসপোর্টটি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন এবং বিমান অফিসে গিয়ে চার হাজার টাকার বিনিময়ে সেদিনই টিকেট কনফার্ম করে ওখান থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট। ইমিগ্রেসন শেষে লাউঞ্জে বসে স্ত্রীর নিকট এসএমএস করলেন, ‘তোমাদের অধিক সুখ শান্তির জন্য আমি প্রবাসী হয়েছিলাম। জানিনা তোমাদেরকে কতটা সুখী করতে পেরেছি। তবে এটা জেনেছি যে, আমার উপস্থিতি তোমাদের সুখ কেড়ে নিচ্ছে, তাই তোমাদের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করার জন্য আমি চললাম, একটু পরেই বিমান ছাড়বে। আর টাকার জন্য চিন্তা করিও না, যতদিন বেঁচে থাকি তা দিয়ে যাবো। জীবনে আর দেখা হোক বা না হোক ক্ষমা করে দিও....।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঠিক বলে ছেন সবুজ ভাই।
দুঃখ প্রকাশ করছি, জবাব দানে অনেক দেরী হলো বলে।
দুঃখ প্রকাশ করছি, জবাব দানে অনেক দেরী হলো বলে।
দুঃখ প্রকাশ করছি, জবাব দানে অনেক দেরী হলো বলে।
দুঃখ প্রকাশ করছি, জবাব দানে অনেক দেরী হলো বলে।
দুঃখ প্রকাশ করছি, জবাব দানে অনেক দেরী হলো বলে।
হায়রে পরিবার, স্ত্রী-সন্তান, দুনিয়াদারি!..আফসোস?
-অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
দুঃখ প্রকাশ করছি, জবাব দানে অনেক দেরী হলো বলে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন