প্রবাস কাহিনী- ১২

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ০১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩২:৩২ দুপুর

‘চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়’ বাক্যটি একেবারে ফেলনা নয়। প্রবাসীরা চোখের আড়াল হতে গিয়ে মনেরও আড়াল হয়ে যান। যে কারণে পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে সন্তানেরা একটু অতিরিক্ত স্বাধীনতা পেয়ে যায়। বাবার শাসন আর শিক্ষা মন থেকে ক্রমে মুছে গিয়ে একসময় গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যেতে থাকে। আমার বাবা যখন প্রাবাসী হয়েছিলেন তখন আমিও ছাত্র ছিলাম। হাতে কলমে বুঝতে পেরেছি বাবার উপস্থিতি আর অনুপস্থিতির পার্থক্য। আল্লাহর রহমত, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভাইদের তত্বাবধানে থাকার কারণে শয়তানের খপ্পর থেকে বেঁচে ছিলাম।

আমাদের উত্তর-পূর্ব চট্টগ্রামের একটি এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরের কোন না কোন সদস্য মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী এবং মধ্যপ্রাচ্যে আনুষ্ঠানিক জনশক্তি রফতানী শুরুর আগেই এ এলাকার কিছু লোক কোন না কোন প্রকারে প্রবাসী হয়েছিলেন। এলাকাটি অর্থনৈতিক স্বনির্ভর হলেও লেখা পড়ায় খুবই পিছিয়ে। শুধু তই নয়, এলাকাটি সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে বেশ। প্রতিটি কিশোর-যুবকের নিকট অন্তত একখানা মোটার সাইকেল রয়েছে। মজার বিষয় হলো, যে লোক মধ্য প্রাচ্যের রাস্তায় রাস্তায় পেপসির ক্যান কুড়িয়ে অর্থোপার্জন করেন তার ছেলেকেও একটি মোটর সাইকেল কিনে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ছেলেগুলো সারাদিন মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর অপকর্মের খোঁজে থাকবে। তাদের আবার খন্ড খন্ড গ্রুপ রয়েছে। কোন অপকর্ম করার জন্য একত্রিত হওয়ার নির্দেশ পেলে কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রায় ২০/৪০ জন সাঁ সাঁ করে একত্রিত হয়ে অপকর্ম সাধন করে কেটে পড়ে। এলাকার ধনী এবং সম্মানীত লোকেরা তাদের ভয়ে প্রায় তটস্ত থাকেন এবং লোকেরা দিনে দুপুরেও ঐ এলাকয় ভ্রমন করতে ভয় করে। এটি একটি নির্দিষ্ট এলাকার চিত্র হলেও সারা দেশেই কম বেশী এমন অবস্থা বিরাজমান।

উক্ত এলাকারই এক ভদ্রলোকের সাথে আবুধাবীতে পরিচয় হয়েছিল কিছুদিন আগে। ভদ্রলোক প্রায় ২১/২২ বছর যাবৎ আবুধাবি প্রবাসী এবং নিজে যথেষ্ট পরিশ্রম করে একটি ইলেক্ট্রিক্যাল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করেছেন। কথা প্রসঙ্গে বললেন, একমাত্র ছেলেকে ভিসা দিয়ে এনেছেন নিজ প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য। ছেলে কাজ করে না, এ নিয়ে বেশ ঝগড়াঝাটি। নিজের হাতের তালু দেখালেন, হাতুড়ি-বাটাল চালাতে গিয়ে কেমন শক্ত হয়ে গেছে। ভদ্রলোক চান ছেলেও শ্রমিকের মতো কাজ করুক। কিন্ত ছেলে এভাবে কাজ করতে ইচ্ছুক নয়, তার উপর আজে বাজে বন্ধুদের সাথে চলা ফেরা। ছেলের ভিসা কেন্সেল করে দেশে পাঠিয়ে দেবেন এবং এমন ছেলের সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখবেন না। ভদ্রলোকের বন্ধুরাও নাকি একই পরামর্শ দিয়েছেন এবং ছেলেটিও চলে যেতে আগ্রহী।

আমি তাকে বললাম, ছেলেটি বেঁকে যাওয়ার পেছনে আপনারও তো কিছুটা অপরাগতা রয়েছে, ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায়। যেমন; আপনি দীর্ঘ দিন ধরে প্রবাসে কাটিয়েছেন, ছেলেকে শাসন আর ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলতে পারেননি। এখন একতরফা ছেলের দোষ দিয়ে লাভ কি। তাছাড়া আপনার বয়স হয়েছে আজ আপনি তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন কিন্তু আপনার মৃত্যুর পর সে বিনা নোটিশে আপনার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির মালিক বনে যাবে। তখন সে আপনার সম্পত্তি ভোগ করবে আর আপনাকে স্মরণ করবে মন্দভাবে। তার চেয়ে ভালো, তাকে হাতুড়ি বাটালের কাজ না দিয়ে কাজ দেখা শোনার দায়িত্ব দেন। দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে এবং আপনার সাথেও ভালো সম্পর্ক হবে। তিনি এভাবে করবেন বলে কথা দিয়েছেন আমাকে।

সন্তানদেরকে গড়ে তোলার ব্যাপারে বর্তমানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক সময় প্রায় মায়েয়া অশিক্ষিত ছিলেন, যার ফলে বাবার অনুপস্থিতিতে সন্তানদের প্রতি যথাযত দায়িত্ব পালনে পুরাপুরি সফল হতে পারেননি। বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি শিক্ষিত মহিলারা তাদের স্বামীদের অনুপস্থিতিতে সন্তানদের লেখাপড়ার পেছনে সময় দিচ্ছেন। ফেসবুক আর ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়াল যাদেরকে গ্রাস করতে পারেনি তারা বেশ সফলও হচ্ছেন।

চলবে....

বিষয়: বিবিধ

১১৬৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348119
০১ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪০
শেখের পোলা লিখেছেন : এ কথা ঠিক যে গাইডের অভাবেই ভাল ছেলেরাও মস্তান হয়ে যায়৷ আর সে জন্যই পিতামাতাও সমান দায়ি৷ ধন্যবাদ৷
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮
290481
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, ‘শেখের পোলা’ভাই। ধন্যবাদ আপনাকেও।
348136
০১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩০
মোহাম্মদ মুজিবুল হক লিখেছেন : দেশে যারা অবাধে খরচ করে প্রবাসীর দুঃখ তারা কি বুঝবে ? আপনার লেখাতেই এর উত্তর আছে, আল্লাহ সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন* আমিন*
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:২৪
290484
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আমিন।
348140
০২ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১২:০৬
আফরা লিখেছেন : বাবা কাছে না থাকলে অনেক ছেলে মেয়েই নষ্ট হয়ে যায় বিশেষ করে ছেলেরা ।াওনেক ভাল লাগল ধন্যবাদ বড় ভাইয়া ।
348155
০২ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:২৪
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

শুধু অর্থেই কি সংসার গড়ে? সাথে মায়া এবং শাষন ও চাই, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রবাসী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এই প্রয়োজনীয় শাষন অভাবে ভূগে থাকে!

লিখাটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ! শুকরিয়া। Good Luck
348203
০২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৪৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনার উপদেশটি ভালো হয়েছে। যেসব সন্তান চিন্তা করে,তার অর্থের যোগান পাক্কা,সেসব সন্তান সুযোগ পেলে খারাপ বিষয়গুলো ঘাটিয়ে দেখতে চায়
350561
২০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৪৪
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : প্রবাসীদের কষ্ট দেখে অনেক খারাপ লাগে! নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে সংসারের ঘানি টানে। আর সন্তানেরা উচ্ছ্বন্নে যায়।
ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File