প্রবাস কাহিনী- ১০
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:১৬:৩২ দুপুর
প্রবাসীর সম্পদ আর স্ত্রী:
পরিবারের ছেলেটি বা কর্তাটিকে অশ্রুসজল নয়নে প্রবাসে পাঠানোর পর কিছুদিন তার জন্য শোকাতুর থাকে গোটা পরিবার। তারপর ধীরে ধীরে শোক কেটে যায়, প্রবাসী প্রবাস থেকে টাকা পাঠাতে থাকেন এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপনের মান বদলাতে শুরু করে। প্রবাসী বন্ধুটি খেয়ে না খেয়ে তার পরিবারের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠাতে থাকেন। এই টাকা পাঠানোতে একটু ব্যত্যয় ঘটলেই শুর হয় মান অভিমান। একটি বারের জন্যও খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননা প্রবাসী লোকটির কাজ কর্ম ঠিক আছে কি না, ভিসা-রোড পারমিট ইত্যাদি করা হয়েছে কি না।
পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনের সব চাওয়া পাওয়া যেন প্রবাসীর নিকট। পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রবাসীর চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকলেও সেদিকে কারো দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হয় না, দৃষ্টি শুধু প্রবাসীদের প্রতি।
প্রবাসী বন্ধুটি দু’চার বছর পর দেশে আসলে পাড়া মহল্লার ক্লাব থেকে একটি টিভির আব্দার করা হয়, মসজিদ-মাদ্রাসা-ইয়াতীমখানা থেকে সাহায্য চাওয়া হয়, কোন কোন সংগঠন থেকে একটি সাইকেল বা মোটর সাইকেলের আব্দারও করা হয়। তিনি তার সাধ্যের মধ্যে সকলকেই কিছু না কিছু দিয়ে খুশী করার চেষ্টা করেন।
অনেক প্রবাসী বন্ধু ধরাটি খেয়ে যান তাদের বাবা, ভাই অথবা প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর নিকট। তিনি সরল বিশ্বাসে তাদের আয়ের সকল টাকা বাবা, ভাই বা স্ত্রীর নিকট পাঠিয়ে দেন এবং ধরে নেন তারা তার(প্রবাসীর) জন্য সঞ্চয় করবে অথবা কোথাও বিনিয়োগ করে সম্পদ বৃদ্ধি করবে। কিন্তু তিনি একবুক আশা নিয়ে দেশে এসে যখন দেখেন, তার জন্য কিছুই অবশিষ্ট নেই। তখন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আবার নতুন করে জীবন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে বাধ্য হন।
নরক যন্ত্রনা ভোগ করেন তখন, যখন তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী সকল সম্পদ আর সন্তানগুলো নিয়ে আরেকজনের হাত ধরে সটকে পড়েন। দেশের পত্রপত্রিকায় আসা এমন খবরগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ না হলেও আমার আশপাশের বেশ কয়েকজন প্রবাসীর এমন পরিনতি বাস্তবে দেখার সুযোগ হয়েছে। গত বছর আবুধাবীতে আমার এক বন্ধুর প্রতিষ্ঠানের এক বাংলাদেশী কর্মচারী স্ত্রীকে পরকিয়া থেকে ফিরাতে না পেরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহনন করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
গত কয়েক বছর আগে দেশে যাওয়ায়ার সময় আবুধাবী এয়ার পোর্টে ইমিগ্রেসনের পর প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে বসে পরিচয় হয় ৩০/৩৫ বছর বয়সের এক বাংলাদেশী যুবকের সাথে। তাকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল, তাই আমি নিজেই তার সাথে কথা বলে আলাপ পরিচয় করে জানার চেষ্টা করেছি তার কি সমস্যা। অনেক ইতস্ততার পর সে মুখ খুললো এবং যা বললো তা হচ্ছে- তার স্ত্রী দু’টি সন্তান,সমস্ত টাকা পয়সা এবং গহনাপাতি সহ স্ত্রীর খালাত ভাইয়ের সাথে চলে গিয়েছে। ঘটনাটি শুনে তাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারপরও সাধ্যমত চেষ্টা করেছি ওকে শান্তনা দেয়ার।
ওর নাম্বার রেখেছিলাম পরে কি হলো তা জানার জন্য। পরে ফোনালাপে যা জেনেছি তা হলো- ওরা থাকত গ্রামে। স্ত্রীর এক খালাত ভাই প্রায় বাসায় আসা যাওয়া করত। কোন কাজে সাহায্য করত। এর মধেই খালাত ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক সময় সন্তানদেরকে শহরের ভাল স্কুলে পড়ানোর বায়না ধরে স্ত্রী। যুবকটি সন্তানের উন্নত শিক্ষার কথা ভেবে শহরে বাসা নেয়ার অনুমতি দেয়। এই শহরের বাসাতেই খালাত ভাইয়ের স্ত্রী হয়ে বসবাস করছে তার স্ত্রী। এমন দুঃসংবাদ শুনে সে ছুটে এসেছিল স্ত্রীকে ফেরানোর আশায়। কিন্তু সে কিছুই করতে পারেনি। মামলা মোকদ্দমা ইত্যাদি করতে গিয়ে তার প্রবাসের চাকুরীটা হারানোর সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে নতুন ঘর বেঁধে আবার পাড়ি দিয়েছে প্রবাসে।
ঐ যুবকের সাথে এখনো যোগাযোগ আছে আমার। তার কাছে একদিন জানতে চেয়েছিলাম, তার জীবনে নারী ঘটিত কোন সমস্যা ছিল কি না। সে অকপটে আমার নিকট স্বীকার করে বিবাহের পূর্বে তার বিভিন্ন নারীদের সাথে অ-নৈতিক সম্পর্কের কথা। এবং সে মনে করে, তার স্ত্রী তাকে এভাবে ছেড়ে যাবার কারণ তার অতীত গোনাহের ফল। হতেও পারে! আল্লাহ সকল প্রবাসীকে গোনাহ এবং বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন।
চলবে.....
বিষয়: বিবিধ
১৩৮০ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ।
আসলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। প্রবাসে এখনো দেখি লাইন দিয়ে মানুষ এই নোংরা কাজে যাচ্ছে। বিশেষ করে ডেরা ডুবাইতে প্রতিটি বিল্ডিং ই এ কাজের প্রসিদ্ধ স্থান।
আবুধাবীতেও ইতিমধ্যে অনেক বিল্ডিং এসব নোংরা কাজে ডুবে আছে। মাত্র ২০/৩০ দিরহামে মিলে এসব নোংরা লেডিস। আমি প্রায় সময় ভাবি আহারে! বেচারার স্ত্রীও কারও সাথে মজা নিচ্ছে।
সংক্ষিপ্ত হলেও অনেক মূল্যবান কিছু কথায় সাজানো হয়েছে পোস্টটি! ভালো লেগেছে পড়ে! প্রবাস জীবনে পাওয়ার চাইতে বেদনা বেশি..
শুকরিয়া আপনাকে।
সহিসালামতে হজ্জ থেকে ফিরে এসেছেন জেনে খুশী হলাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন