প্রবাস কাহিনী- ৯

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৩৫:৫৬ দুপুর

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশ্বের একটি উন্নত এবং পরিচ্ছন্ন দেশে সপরিবারে প্রবাসজীবন যাপনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে অগনিত শোকরিয়া জ্ঞাপনের সাথে সাথে আমার সেই সকল বন্ধু(!)দেরকেও ধন্যবাদ জানাই, যারা আমার কিঞ্চিত ইসলামের পক্ষে কাজ করাকে সহ্য করতে না পেরে হত্যার হুমকির মাধ্যমে আমার পরিবারে ভীতির সঞ্চার করেছিল, যার প্রেক্ষিতে পারিবারিক চাপে আমাকে প্রবাসী হতে হয়েছিল।

ওরা চেয়েছিল আমার ক্ষতি সাধন করতে, তিন্তু উল্টো হয়ে গেলো আমার লাভ। সাধারণভাবে আমার যে স্তরের জীবন যাপনের স্বপ্ন ছিল তার চেয়ে অনেকগুন বেশী পেয়েছি। এটিই ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার নসিবের লিখন। এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর মধ্য থেকে যে শিক্ষা আমরা পেতে পারি তাহলো- ১. আল্লাহ কারো কল্যাণ করতে চাইলে তা তার দুষমনের মাধ্যমেও করাতে পারেন। ২. কেউ দুষমনি করে কারো অগ্রযাত্রা অথবা কল্যাণ ঠেকাতে পারে না। ৩. কোন নিরপরাধ মানুষকে মানুষ নামের পশুরা দুনিয়াতে কষ্ট দিতে পারে, সাপের মতো পিটিয়ে মারতে পারে, বিচারের নামে তামাশা মঞ্চস্থ করে হত্যা করতে পারে। এর বিপরীতে মজলুমদের জন্য মহান রব দুনিয়া এবং এখরাতে যে কল্যাণ রেখেছেন তা যদি ঐ নরপশুরা জানতো, ‘আল্লাহর নিকট তোমাদের গুরুত্ব বাড়িয়ে লাভ নেই, তোমরা এখানেই থাক।’ বলে শয়তানীতে ইস্তফা দিত।

প্রবাসে ফ্যামিলি রাখার খরচ খুব বেশী। যে কারণে অনেকে সুযোগ থাকার পরও ফ্যামিলি আনার চিন্তা করেন না। তাদের চিন্তা হলো, আয়ের বেশীর ভাগ যদি খরচই হয়ে যায়, তাহলে তাদেরকে প্রবাসে এনে কী লাভ? তার চেয়ে ভালো ঐ টাকা দিয়ে কয়েকপদ স্বর্ণালংকার আর দেশে গিয়ে কয়েক কাঠা জমি ‍বুকিং দিয়ে বছরে দু’বছরে একবার দেখা করে আসলেই হয়! স্ত্রী-সন্তানদেরকে সাথে রাখার গুরুত্ব যে স্বর্ণালংকার এবং জমির চেয়েও বেশী, তা তারা খেয়ালই করেন না। এটি একধরণের সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগীতা মনে হয় আমার নিকট।

কিছু প্রবাসী বন্ধু নানা জটিলতায় প্রবাসে এসে ফেঁসে যান, তাদের কথা আলাদা। দেশে খুবই নিম্ন পর্যায়ের কাজ করতেন এমন লোকদেরও প্রবাসে এসে সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগীতায় যুগ যুগ কাটিয়ে দিতে দেখেছি। তারা ইচ্ছে করলে কয়েক বছর প্রবাস থেকে আয় করে তা দিয়ে দেশে তাদের মতো করে কিছু করে পরিবারের সাথে থাকতে পারেন। ৫/৬ বছর প্রবাসে থাকা এমন একজন প্রবাসীকে আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম তার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে সে যেন দেশে কিছু একটা করেন। প্রবাসে আসার আগে দেশে সিএনজি টেক্সি চালাতেন। ছয় বছর পর দেশে গিয়ে দু’টি সিএনজি টেক্সি কিনে একটি নিজে চালাতে লাগলেন এবং একটি ভাড়া দিয়েছেন। কিছুদিন আগে দেশে দেখা হয়েছিল, এখন তিনি তিনটি সিএনজি টেক্সির মালিক, স্ত্রী সন্তান নিয়ে খুব সুখে আছেন। পরামর্শের জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানালেন।

প্রবাসে ফ্যামিলি আনার পর আমার সিদ্ধান্ত ছিল, যত দীর্ঘ সময় সম্ভব তাদেরকে সাথে রাখবো, খেয়ে পরে বাচ্চাদেরকে লেখাপড়া শিক্ষা দিয়ে সামান্য সঞ্চয় হলেই যথেষ্ট। অতিরিক্ত সঞ্চয়ের লোভ মাথা থেকে একেবারে বের করে দিলাম।

আমার মেয়ে কেজি থেকে শুরু করে উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করার পর দেশ মুখী হওয়ার চিন্তা থেকে প্রায় ১৪ বছর পর ফ্যামিলি দেশে পাঠালাম ২০০৭ সালে। তখন থেকে আমিও ২/৩ মাস পর পর দেশে আসা যাওয়ার মধ্যে আছি। দেশে মাথা গোঁজার ঠাইও আল্লাহ করে দিয়েছেন, আলহামদু লিল্লাহ।

ফ্যামিলি বিদেশে না আনলে এবং ব্যবসায় স্টাফদের উপর ছেড়ে না দিয়ে নিজে সার্বক্ষণিক আগলে ধরে বসে থাকলে এতদিনে হয়ত একাধিক বিল্ডিংএর মালিক হওয়া যেতো, অনেক জায়গা-জমি ক্রয় করা যেতো কিন্তু পারিবারিক সুসম্পর্ক এবং সম্প্রীতি বেশ দূরে অবস্থান করতো। তুলনামূলক সঞ্চয় কম হলেও আমি নিজেকে সুখী প্রবাসীদের একজন মনে করি।

বিষয়: বিবিধ

১১০১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345657
১৪ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পৃথিবিতে আসলে আমাদের কতটুক সম্পদ দরকার সেই বিষয়ে আমরা বুঝতে না পেরেই দুনিয়া ও আখিরাত দুটাই হারাচ্ছি।
১৫ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২১
286936
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, সবুজ ভাই।
345689
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:০৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : যারা আপনাদের মত এমন পজিশনে আছেন, তাদের জন্য আপনার কথাগুলো দারুন হয়েছে। আমরা যারা নূন আনতে পানতা পুরায়, তাদের জন্য কিছু উপদেশ দেওয়ার পরামর্শ রইল।
১৫ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
286944
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ভাই, নুন আনতে পান্তা ফুরায়না কার? তার মানে প্রত্যেকেই যার যার স্থানে সমস্যার মোকাবেলা করছে। আপনাকে এবং আমাকে নিজের জন্য রাস্তা তৈরী করে নিতে হবে। যে যা চায় সে তাই পায়। সম্পদের চাহিদার তো শেষ নেই, এক পাহাড়ে পাওয়ার পর আরো একটির চাহিদা দেখা দিতে পারে।
345692
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:১৫
শেখের পোলা লিখেছেন : সঠিক কথা৷ অনেকে জীবন কাটায় অর্থের পিছনে দৌড়িয়ে,অন্য দিকে স্ত্রী সন্তান পরিবারের হক আদায় করেনা৷ আল্টিমেটলি তারা শির্ক করে৷ ধন্যবাদ আপনাকে৷
১৫ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫১
286947
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : সম্পদের মোহ একটি বড় মোহ।
345704
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৪৪
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আবু জান্নাত ভাই লিখেছেন : যারা আপনাদের মত এমন পজিশনে আছেন, তাদের জন্য আপনার কথাগুলো দারুন হয়েছে। আমরা যারা নূন আনতে পানতা পুরায়, তাদের জন্য কিছু উপদেশ দেওয়ার পরামর্শ রইল
১৫ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫০
286946
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ভাই, নুন আনতে পান্তা ফুরায়না কার? তার মানে প্রত্যেকেই যার যার স্থানে সমস্যার মোকাবেলা করছে। আপনাকে এবং আমাকে নিজের জন্য রাস্তা তৈরী করে নিতে হবে। যে যা চায় সে তাই পায়। সম্পদের চাহিদার তো শেষ নেই, এক পাহাড়ে পাওয়ার পর আরো একটির চাহিদা দেখা দিতে পারে।
345734
১৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৩:৫৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুলাইকুম । প্রবাসীদের জীবন যাপন বিষয়টা আসলেই খুব স্পর্শকাতর। তবু যারা সঠিক উদ্যোগ এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন অনেকের মাঝে তারা অনন্য হয়ে থাকেন।

সুন্দর লিখাটির জন্য শুকরিয়া!
১৫ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
286948
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম সালাম। আপনার সাথে একমত।
346138
১৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৫০
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, এতদিন যা করার তা করে পেলেছি, তবে ভবিষ্যতে কিছু করার আগে আপনার কথা গুলো অবশ্যই ভাববো। ধন্যবাদ আপনাকে
১৯ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:১২
287416
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম সালাম, ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তাওফিক দান করুন।
350414
১৯ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫৪
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অন্য দেশের কথা জানিা বাংলাদেশের অনেক লোক কিন্তু-মামলা-হামলা-সন্ত্রাসীদের ভয়ে-রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাসহ বিবিধ কারণে বিদেশগামী হয়েছেন-অবশ্য বান্দার জন্য আল্লাহ যা-ই করেন ভালর জন্যই করেন বলে বিশ্বাসী আমরা।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৪৫
294289
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আল্লাহ যা করেন অবশ্যই ভালোর জন্য করেন। এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File