প্রবাস কাহিনী- ৬
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫২:৩৬ বিকাল
দেখতে দেখতে প্রবাস জীবনের প্রায় দু’বছরের কাছাকাছি চলে এলাম। এবার আমার সিদ্ধান্ত (প্রবাস ছেড়ে দেশে চলে যাওয়া অথবা ফ্যামিলি প্রবাসে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা) বাস্তবায়নের পালা। এরই মধ্যে মোটামুটি একটা এমাউন্ট জমা হলো, যা দিয়ে ইচ্ছে করলে আবুধাবীতে ব্যবসায় করতে পারি অথবা দেশে চলে গিয়ে কিছু একটা করতে পারি।
আবার আগ-পাছ না ভেবে হুট করে কিছু একটা করে বসলেও সমস্যায় পড়তে পারি। তাই দেশে এবং প্রবাসে বিভিন্ন ব্যবসায়ের তথ্য সংগ্রহ এবং মুরুব্বী ও বিজ্ঞজনদের নিকট থেকে পরামর্শ নিতে লাগলাম । বেশীরভাগ মত পেলাম প্রবাসে ব্যবসায় করার পক্ষে। এক্ষেত্রে আমার ছাত্রজীবনের প্রিয় নেতা অধ্যাপক মফিজুর রহমান ভাই এর পরামর্শ খুবই ভালো কাজ দিল। আরেক প্রবাসী বন্ধু সন্ধীপের শফিক ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি আমাকে একটি চিঠি লিখলেন; যার সারমর্ম ছিল- “দেশের অবস্থা ভালো নয়, আন্দোলন-হরতাল, পুলিশি ধরপাকড়-গ্রেফতার বানিজ্য ইত্যাদি মোকাবেলা করে দেশে ব্যবসায় টিকে থাকা আপাতত কঠিন হতে পারে। তারচেয়ে ভালো হয়, আবুধাবীতে ব্যবসায় শুরু করেন এবং মেয়ে ও ভাবীকে ওখানে নিয়ে যান, আমরা আপনার জন্য দোয়া করছি”। আমার আব্বাও একই মত পোষণ করলেন।
আবুধাবীতে ব্যবসায় করার সিদ্ধান্ত পাকা হলো। এখন ঠিক করতে হবে কি ব্যবসায় করবো। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী হওয়ার একটি পরিকল্পনা এস এস সি পাশ করার পর থেকেই ছিল বিধায় সাধারণ লেখা পড়ার পাশাপাশি টিটিসি থেকে রেডিও/টিভি (ইলেক্ট্রনিক্স) ট্রেড কোর্স এবং পলিটেকনিক থেকে ছয়মাস মেয়াদী একটি ইলেক্ট্রিক্যাল কোর্স অর্জন (ইন্টার সিটি কলেজে নাইট শিফ্টে করে দিনে করেছি বাকীটা) করা ছিল। সুতরাং আমার জন্য ইলেক্ট্রিক অথবা ইলেক্ট্রনিক্স রিলেটেড ব্যবসায় হলে খুব ভালো হয়। এগুতে থাকলাম এ পথ ধরে।
সবদিক বিবেচনা করে ইলেক্ট্রোনিক্স রিলেটেড ব্যবসায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আবুধাবীতে তখন মার্কেট বলতে ওল্ড সেন্ট্রাল মার্কেট এবং নিউ সেন্ট্রাল মার্কেটকেই বোঝানো হতো। ওল্ড মার্কেটের অবস্থান ছিল হামদান এবং খলিফা স্ট্রিটের মাঝ খানে আর নিউ মার্কেট ছিল খলিফা এবং করনিশ স্ট্রিটের মাঝখানে। খলিফা স্ট্রিটে ওভার ব্রিজ দিয়ে মার্কেট দু’টোকে সংযুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে মার্কেটদ্বয় ভেঙ্গে সেন্ট্রাল মার্কেট নাম দিয়ে বহুতল বিশষ্ট দুটি নান্দনিক মার্কেট বানানো হয়েছে। আরবীতে বলা হতো ছুক, ছুক বলতেই ঐ মার্কেটদ্বয় ছাড়া আর কিছুই বোঝানো হতো না। অন্যান্য পয়েন্ট থেকে আবুধাবী শহরে আসার জন্য টেক্সি ওয়ালারা ‘ছুক - ছুক বলে হাঁক দিতো।
বর্তমান এবং সেই পুরানো সময়ের মার্কেটের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তারপরও সেই পুরানো মার্কেট ছিল বাঙ্গালি, পাকিস্তানী এবং ভারতীয়দের অর্থোপার্জনের প্রাণ কেন্দ্র। আরবীদের নিকট থেকে একেকেকটি বড়সর দোকান নামমাত্র ভাড়ায় দীর্ঘ মেয়াদী লিজ নিয়ে ছোট ছোট করে ভাড়া দিয়ে অনেক উপার্জন করতো বুদ্ধিমানরা। বাঙ্গালীরা ছিল এক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে।
আমার প্রস্তাবিত ইলেক্ট্রোনিক্স দোকানগুলোর সিংহ ভাগই ছিল ওল্ড মার্কেটে। এখানে ছোট ছোট দোকানের এতবেশী ভাড়া, ভয় হচ্ছিল আবার ক্ষতির সম্মুখিন হই কি না। তাই দোকান খুঁজতে খুঁজতে চলে এলাম মোসাফ্ফাহ শিল্প নগরীতে। আবুধাবী সিটি থেকে প্রায় ৪০ কি.মি দূরে এ শিল্প নগরী। এর আয়তন আবুধাবী সিটির চেয়েও বড়, তবে তখনো পঞ্চাশ শতাংশের বেশী উন্নয়ন হয়নি।
মোসাফ্ফাহর প্রায় প্রতিটি অলি-গলি ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং অবাক হলাম, একটিও ইলেক্ট্রোনিক্স (রিপেয়ারিং, এক্সেসারিজ, এপ্লায়েন্সেস) এর দোকান চোখে পড়লো না। অথচ এখানে আবুধাবীর সমস্ত গাড়ী মেরামতের কাজ করা হয়। আবুধাবী সিটিতে কাজ করার জন্য গাড়ির বনেট খোলাও বে-আইনী। আর যাহাই হোক গাড়ির রেডিও এন্টেনা, স্পিকার, রেডিও এবং কেসেট প্লেয়ারের রিপেয়ারিং এবং সেলস এখানে বেশ ভালো চলার কথা। পুরা মোসাফ্ফাহ জরিপ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, এখানেই আমার ব্যবসায় ভালো চলবে- ইনশাআল্লাহ। শুধু একটু প্রচার করতে হব।
তখন মোসাফ্ফাহ ৮,৭ এবং ৬ নাম্বার সেক্টরেই ভালো ব্যবসায় চলতো। আমার আব্বার কোম্পানীর ওয়ার্কসপও ছিল মোসাফ্ফায়। আমি এবং আব্বা মিলে আত্মীয়, বন্ধু এবং পরিচিত জনদেরকে বলে রাখলাম- এসব এলাকায় কোন দোকান খালি হলে যেন আমাদেরকে জানানো হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জানার আছে অনেক কিছু।
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন